প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

গাড়িতে বাচ্চাদের নিরাপদ রাখতে যা করবেন
পড়তে লাগবে: 5 মিনিট

গাড়িতে বাচ্চাদের নিরাপদ রাখতে কি করবেন?

বর্তমানে প্রাইভেট কার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় এবং শৌখিন একটি অনুষঙ্গ। আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ গাড়ি ব্যবহার করে অফিস এবং শিশুদের নিয়ে স্কুল বা অন্য কোথাও চলাচল করতে। তবে অনেক মানুষই গাড়ি ক্রয় করে থাকে সাধারণ আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য। তবে আরেকটি কারণ হল আমাদের সন্তানরা। শিশুদের জন্য আমরা গাড়ির ব্যাপারে সেরা নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য বেছে নেওয়ার চেষ্টা করি।

অভিভাবক হিসেবে গাড়িতে বাচ্চাদের নিয়ে আরোহন করার সময় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। পাশাপাশি গাড়িতে যেন শিশুরা ভয় না পায়,আরামের সাথে নিরাপদে চড়তে পারে এসব বিষয়ের খেয়াল রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা নিজেরা ড্রাইভ করতে জানি তাদের শিশুদের নিয়ে গাড়িতে ড্রাইভ করার সময় সে বিষয় নিয়েই আলোচনা করব।

বাচ্চা নিয়ে গাড়িতে ড্রাইভ করার জন্য কিছু টিপস

সাধারণত বাচ্চারা জন্মগত অবুঝ তাই বড় হওয়ার আগে পর্যন্ত তারা নিয়মকানুন সম্পর্কে তেমন জানে না বা বোঝে উঠেতে না। তাই যখন তারা গাড়িতে চড়ে তখন তারা যেকোন সময় অস্থিরতা প্রকাশ করতে পারে।সাধারণত দুর্ঘটনার আশংকা থাকলে আমাদের বড়দের জানানো হলে আমরা সাথে সাথে তারা সতর্ক হতে পারি কিন্ত শিশুরা সতর্ক হতে পারে না।এজন্য ছোট শিশুদের নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করা সহজ কাজ নয়।বরং গাড়িতে ছোট বয়সের কেউ থাকলে সবসময় তাদের নিরাপদে রাখাটা অভিভাবকের জন্য চাপের হয়ে দাঁড়ায়।চলুন শিশুদের নিয়ে গাড়িতে ড্রাইভ করার সময় যেসকল বিষয় লক্ষ রাখা উচিৎ সে বিষয়ক কিছু টিপস শেয়ার করি।

১। বাচ্চাদের জন্য বয়স উপযোগী সীট নির্ধারণ করা

গাড়ি ড্রাইভ করার সময় সর্ব প্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য করতে হবে তা হল বাচ্চা বসার উপযুক্ত হলে তার জন্য গাড়ির অরিজিনাল সীটের পাশাপাশি বেবিসিটার কিনতে হবে। কারণ গাড়ির সাধারণ সিট বেল্ট শিশুরা বাঁধতে পারে না বা তাদের শরীরে ফিট হয় না। বাজারে বিভিন্ন ডিজাইনের ও সাইজের বেবি সিট পাওয়া যায়। তেমনি পছন্দসই একটি কিনে ভালোভাবে গাড়িতে সেট করতে হবে।

গাড়িতে বাচ্চাদের নিরাপদ রাখতে বয়স উপযোগী সিট

বাচ্চাদের আরামের জন্য সবার আগে জরুরি বসার স্থান নিশ্চিত করা। আর যেসব শিশু এখনও ৩/৪ মাস বয়সের কম বা বসতে পারেনা অভিভাবকদের সেসব শিশুদের কোলে রাখতে হয়। যেসব বাচ্চারা বয়সে একটু বড় অথবা স্কুলে পড়ে এমন বাচ্চাদের সিট বেল্ট ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে। তবে গাড়িতে একদম ছোট বাচ্চাদের পেছনের সীটে বিপরীতমুখী করে বসালে ভালো হয়। বসতে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

২। বাচ্চাদের নিয়ে গাড়িতে চড়লে সাথে আরও সঙ্গী রাখুন

ছোট শিশুকে নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করার সময় সাথে পরিবারের আরও অন্য কোন সদস্য বা পরিচিত বড় কেউকে সঙ্গে রাখুন।কারণ আপনি গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিলে, বাচ্চার দিকে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব না।ঐ সময় বাচ্চার কিছু প্রয়োজন হলে সঙ্গে থাকা অন্য সদস্য সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে পারবে।

৩। বাচ্চার জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন

গাড়ি ড্রাইভ করার সময় শিশুরা সাথে থাকলে তাদের ভ্রমণ সুন্দর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখুন। অর্থাৎ তারা যেন গাড়িতে চড়ে বিরক্ত না হয় বা কান্নাকাটি না করে তারজন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে পারেন।যেমন কিছু খেলনা গাড়িতেই রেখে দিতে পারেন বা বাসা থেকেও কিছু খেলনা সাথে করে নিতে পারেন যা দিয়ে তারা খেলতে পারে এবং সময় কেটে যায়।গাড়ির অন্য সদস্যরা গল্প, কবিতা বা মজার কিছু শুনিয়ে তাদের ভ্রমণের সময়টাকে আনন্দময় করতে পারেন।

বাচ্চার জন্য গাড়িতে বিনোদনের ব্যবস্থা

৪। গাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে পিছনের সিট চেক করুন

বাচ্চাদের জন্য গাড়িতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হল গন্তব্যে বা পথিমধ্যে গাড়ি থেকে নামার সময় বাবা-মায়েরা তাদের পেছনের সীটে রেখেই নেমে পড়েন।এমনকি কেউ কেউ ভুলেও যায় যে সাথে শিশুদের এনেছেন।আবার কেউবা অল্প সময়ের কাজের জন্য গাড়ি থেকে নেমে বাচ্চাকে গাড়ির সিটে রেখে চলে যান। এটি ভয়ঙ্কর একটি কাজ। এতে উত্তপ্ত গাড়ির হিটস্ট্রোকে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।তাই গাড়িতে সন্তানকে একা রেখে কোথাও যাবেন না।

৫। সবসময় গাড়িতে চাইল্ড লক অন উইন্ডোজ রাখুন

চলন্ত বা পার্ক করা গাড়ি যাই হোক না কেন শিশুরা গাড়িতে থাকাকালীন,গাড়িতে সবসময় চাইল্ড লক উইন্ডো রাখা ভালো। যদিও অনেক নতুন গাড়ির মডেল ছোট শিশুদের জন্য পাওয়ার উইন্ডোগুলোকে নিরাপদ করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে । গাড়ির পাওয়ার উইন্ডোগুলি ৩০ থেকে ৮০ পাউন্ডের ঊর্ধ্বমুখী শক্তি প্রয়োগ করতে পারে, কিন্তু একটি শিশুর দম বন্ধ করতে বা আহত করতে মাত্র ২২ পাউন্ড শক্তিই যথেষ্ট।তাই বাচ্চার নিরাপত্তায় এ বিষয়টিও ড্রাইভিং করার সময় মনে রাখতে হবে।

গাড়ির জানালায় চাইল্ড লক

৬। প্রয়োজন হলে থামুন

লং ড্রাইভ বা শর্ট ড্রাইভ যাই হোক না কেন শিশু সাথে থাকলে প্রয়োজন হলে গাড়িটি মাঝে মাঝে থামান। যেমন বাচ্চার টয়লেট চাপতে পারে,কান্নাকাটি করতে পারে,বসার সিটটি জায়গা থেকে সরে যেতে পারে বা একটানা গাড়ি চালানোর ফলে আপনার মাঝেও ক্লান্তি আসবে আবার বাচ্চারও অসুবিধা হতে পারে।এক্ষেত্রে গাড়ি কিছু সময়ের জন্য রাস্তার পাশে বা পার্কিং লটে থামিয়ে প্রয়োজন সেরে নিন।

৭। মোবাইল ব্যবহার করবেন না

আপনার ছোট কেউ গাড়িতে থাকুক বা না থাকুক ড্রাইভিংয়ের সময় মোবাইল চালানো উচিৎ নয়। তবে বাচ্চারা সাথে থাকলে এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকুন। কল আসলেও তা রিসিভ করবেন না,টেক্সট করবেন না,পারলে রিংটোন অফ করে ভাইব্রেশন অন করে রাখুন,এরোপ্লেন মোডও অন করতে পারেন।

৮: পেছনের অংশে আয়না সেট করুন

এই সতর্কতার ব্যবস্থাটি শুধু একদম ছোট শিশুদের জন্য যারা নিজে চলতে শেখেনি। কারণ পেছনের আয়নায় আপনি ড্রাইভিংয়ের সময় বাচ্চাকে দেখতে পাবেন এবং সেও আপনাকে দেখতে পাবে। ফলে সে খুশি থাকবে।পেছনের সিটে শিশুকে বিপরীতমুখী করে বসালে এমন আয়না বসালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৯। বাচ্চা নিয়ে গাড়ি ড্রাইভিংয়ের সময় আরও কিছু সতর্কতা

যেসব বাচ্চারা সামান্য বুঝতে শিখেছে অর্থাৎ ৮+ বয়সের সেসব শিশুরা গাড়িতে চড়লে তাদেরকে যদি সামনের সিটে বসানো হয় তবে ভালো হয়।তারা রাস্তায় ঘটে যাওয়া ঘটনা ভালো করে অবলোকন করতে পারে এবং এগুলো দেখতে দেখতে শিখে নিতেও পারে।এভাবে তারা ট্রাফিক আইন,গাড়ি চালানোর নিয়মাবলী, গাড়ির যন্ত্রাংশ ইত্যাদি সম্বন্ধে ধারণা পেতে পারে।

গাড়িতে ওঠার আগে পানি ও অন্যান্য পানীয় সাথে রাখবেন। গাড়িতে বসে শিশুদের তেষ্টা পেলে পানি পান করাতে হবে নইলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। অনেক শিশুরা মোশন সিকনেসের জন্য গাড়িতে বমি করতে পারে।তখন তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে বা মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।এতে করে বমি আসার প্রবণতা কমে যাবে।

বাচ্চাদের সাথে ভ্রমণ করার সময় তাদের জন্য একটি ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন বেবি ওয়াইপস, ডায়াপার, স্ন্যাকস এবং অন্যান্য জিনিস  আনতে ভুলবেন না।  এছাড়া ফার্স্ট এইড বক্স সাথে রাখুন।

গাড়ির পেছনের সিটে প্যাকেজ শেলফে ভারী কিছু রাখবেন না।কারণ গাড়ি ধাক্কা খেলে বা চলার সময় একটু বাধা পেলে  তা বাচ্চার উপর উড়ে  আসতে পারে বা পড়তে পারে। ফলে যেকোন সময় শিশুরা ব্যথা পেতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের মাঝেও গাড়ি ড্রাইভ করার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে শিশু নিয়ে গাড়ি চালাতে যে কেউই প্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়বে।এমতাবস্থায় ছোটদের নিয়ে গাড়িতে ড্রাইভ করার সময় এসব বিষয় জেনে নিলে বাবা-মার জন্য খুব ভালো হবে।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top