প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 5 মিনিট

গাড়ি চালানোর সময় ঘুমে কাতর? আপনার জন্য ৯টি সহজ সমাধান!

আপনাদের নিশ্চয়ই ‘মি. বিনস হলিডে’ মুভির কথা মনে আছে। ছবির একটি দৃশ্যে বেচারা মি. বিন যখন রাত্রিকালীন ড্রাইভিং করতে গিয়ে ঘুমের কবলে পড়ে নাকানি-চুবানি খায়। তখন সে কিছু অদ্ভুত কাণ্ড কারখানা করে ঘুম ঠেকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সে ঘুম ঠেকিয়ে নিরাপদেই গন্তব্যে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়। তথাপি ঘুমের কারণে তাকে যে রকম নিদারুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তা অনেকটাই পীড়াদায়ক। যাইহোক দূরপাল্লার ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে যে কেউ এইরকম আগ্রাসী ঘুমময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। বিশেষ করে আপনারা যারা রাতের বেলা গাড়ি চালান, তারা তো কম বেশি এই সমস্যায় ভুগেই থাকেন। অনেকসময় ড্রাইভিং করার ক্ষেত্রে ঘুম ঘুম ভাব একটি বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এর ফলে যেকোন সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে!

গাড়ি চালানোর সময় ঘুম ঘুম ভাব অনেক বেশি রিস্কের ব্যাপার। এজন্য ক্লান্তি আর ঘুমের প্রভাব বুঝেশুনেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া ভাল। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে আপনি যখন খুব বেশি ক্লান্ত কিংবা ঘুমে আচ্ছন্ন, তা নিজে থেকেই অনুভব করতে পারবেন। তারপরও এগুলোর কিছু সাধারণ উপসর্গ আছে, যেমনঃ খুব বেশি চোখের পাতা পড়া এবং চোখ ভারী হয়ে আসা, ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়া, মাথা উপরে তুলে রাখাটা কষ্টকর হয়ে যাওয়া, ফোকাস করতে অসুবিধা হওয়া, বারবার অন্য লাইনে চলে যাওয়া, কয়েক মাইল ড্রাইভ করে এসেছেন তা  ভুলে যাওয়া, বিরক্তি বোধ এবং অস্থির অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি। গাড়ি চালানোর সময় এই রকম ফিল করলে, অবশ্যই চেষ্টা করবেন ড্রাইভিং না করতে। কারণ এই অবস্থায় গাড়ি চালানোটা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এবং এতে যেকোন মুহূর্তে ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আর তাইতো এক্ষেত্রে কিছু টিপস দেখে নিতে পারেন, যা আপনার ঘুমজনিত সমস্যার কার্যকর সমাধান দিবে এবং আপনার দীর্ঘপথের যাত্রাকেও করবে নিরাপদ।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে চেষ্টা করুন

দৈনিক ঘুমের চাহিদা পূরণ করতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে চেষ্টা করুন। অনেকেই মনে করেন যে, আমরা আগে থেকেই আমাদের মনে বিরাজমান সতর্কতা বুঝে চলতে পারি। যেমন ধরুন- আমরা ভাবি আমাদের মস্তিষ্কে এবং দেহে যখন ঘুমের অনুভূতি অনুভব করছি, তখন আমি তা জানি এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। কিন্তু রূঢ় সত্য হলো ঘুম এমন এক শক্তিশালী চাহিদা, যা অনেকসময় খুব সহজেই আপনাকে কাবু করে ফেলতে পারবে। সুতরাং দৈনিক রুটিন ঠিক করে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে চেষ্টা করুন। আর রাত্রিকালীন ভ্রমণের সময় গাড়ির ভিতরের পরিবেশ আলোকিত রাখুন। এসময় বাতিগুলি অন করে রাখলে, আপনার জেগে থাকতে সুবিধা হবে।

১৫-২০ মিনিটের ঘুম দিতে চেষ্টা করুন

দীর্ঘ জার্নিতে ক্লান্তি অনুভব করতে না চাইলে, ড্রাইভ করার আগে অন্তত কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন। অন্তত বিশ মিনিটের কিংবা এক ঘণ্টার চেয়েও কম সময়ের ঘুম আপনাকে অনেকটাই রেস্ট দিবে। আর তাতে গাড়ি চালানোর জন্য যথেষ্ট শক্তি কিংবা কর্মক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন। এছাড়াও লং ড্রাইভের মাঝে অল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিয়েই নিতে পারেন। এতে আপনার ক্লান্তি অনেকটাই দূর হবে এবং পুনরায় আবার ড্রাইভিং করার এনার্জি পাবেন। মূলত ১৫-২০ মিনিটের ন্যাপ আপনাকে পুনর্জীবিত করে তুলবে।

পুষ্টিকর  খাবার  খান

পুষ্টিকর খাবার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এবং শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। ড্রাইভিং করার আগে আগে স্বাস্থ্যকর কোন খাবার খেয়ে নিতে পারেন। এতে আপনি দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকার শক্তি পাবেন। দেহে চিনির মাত্রা সহনীয় রাখতে সাহায্য করে, এমন টাইপের খাবার লিস্টে অ্যাড করতে পারেন। যদি শারীরিক ভাবে অনেক বেশি দুর্বলতা অনুভব করেন, তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন-বি কিংবা ভিটামিন-সি জাতীয় ট্যাবলেট খেতে পারেন। এগুলো আপনাকে শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম করে তুলতে সাহায্য করবে।

চা কিংবা কফির সাহায্যে জেগে থাকুন

স্বাস্থ্যকর ভাল কোন স্ন্যাক খেলে, তা আপনাকে জেগে থাকতে হেল্প করবে। অন্তত ১০০ ক্যালোরির স্নাক্স জাতীয় খাবার খেতে পারেন। কিন্তু এর বেশি খেলে আবার সমস্যাও হতে পারে। ঘুম ঘুম ভাব দূর করতে চা বা কফি পান করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আদা বা লেবুর চা কিংবা কড়া লিকার সমৃদ্ধ চা খেতে পারেন। তবে ঘুম ঘুম ভাব দূর করতে কফি অনেক বেশি কার্যকর। মূলত এক কাপ কফিতে ৭৫ মিলিগ্রামসের মতো ক্যাফিন থাকে। সাময়িকভাবে ক্যাফিন আপনাকে ড্রাইভ করার সময় জেগে থাকার শক্তি জোগাবে। সুতরাং যদি ঘুমঘুম ভাব অনুভব করেন, তবে এক কাপ কফির সাহায্য নিতেই পারেন।

চুইংগাম চিবুতে থাকুন

গাড়ি চালানোর সময় ঘুম ঘুম ভাব দূর করার জন্য নানা উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। ধরুন-যদি কোন কিছু  আপনাকে বিজি রাখে, তবে তা আপনাকে ফোকাস ধরে রাখতে এবং জাগ্রত থাকতে অনেকটাই সাহায্য করবে। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে চুইংগাম চিবুতে পারেন। এর ফলে আপনার মুখ যথেষ্ট পরিমাণে বিজি থাকবে। ফলে আপনার দেহের পাচক সিস্টেম কাজ করতে থাকবে। এবং মস্তিষ্কে এর একটি প্রাকৃতিক প্রতিচ্ছবি তৈরি হবে, যার ফলে আপনার ঘুমও আসবে না।

মনোযোগ অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করুন

ড্রাইভিংয়ের সময় ঘুম আসলে তখন তা থেকে মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করুন। তখন এলার্ট থাকার জন্য এফএম রেডিওর কোন প্রোগ্রাম কিংবা গান শুনতে পারেন। ঘুম ঘুম ভাবের সময়ে মিউজিক কমপক্ষে  ৯০-ডেসিবলেসে দিয়ে দিন। আশা করা যায় এতে আপনার ঘুম  ছুটে যাবে। তবে যদি সম্ভব হয় তবে কাউকে সাথে নিয়ে ভ্রমণ করুন। গাড়িতে আরেকজন থাকলে আপনার ঘুম আসার সম্ভাবনা কম হবে। এছাড়াও গাড়ির একটা জানালা খুলে রাখতে পারেন। বিশুদ্ধ বাতাসের ঝাপটা আপনাকে সতেজ তরতাজা অনুভূতি দিবে এবং এতে ঘুম ঘুম ভাবও দূর হয়ে যাবে।

সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন

অসুস্থ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সঠিক চিকিৎসা এবং পরামর্শ নিন। অসুস্থ অবস্থায় গাড়ি চালানো অনুচিত, এতে এক্সিডেন্টের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। এছাড়াও আপনার যদি কোন কারণে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে হয়, তখন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত হতে পারলে ভাল হয়। এই ওষুধের ফলে আপনার ঘুম বেড়ে যায় কিনা, তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু ওষুধ আছে, যা ঘুম বাড়িয়ে দিতে পারে।  সেক্ষেত্রে দৈনন্দিন রুটিনটা এমনভাবে সেট করে নিন, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে পারেন।

মাদক থেকে দূরে থাকুন

মাদক দ্রব্য বহন কিংবা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সবসময় এসব থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করুন। মাদক আপনাকে বিভ্রান্ত এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন করে দিবে। এমনকি সামান্য একটু পরিমাণ ড্রাগও অনেক বেশি ঘুম ঘুম  ভাব এনে দিতে পারে। আর এই অবস্থায় গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সুতরাং ড্রাইভ করার সময় এলকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। সবসময়ই মাদক শরীরের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতিকর, সুতরাং এটা থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততটাই মঙ্গল।

সঠিক সময় নির্ধারণ করুন

যে সময় আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ ও কর্মক্ষম বোধ করবেন, মূলত তখনই ড্রাইভ করতে চেষ্টা করুন। মধ্যরাত থেকে  ভোর ৬টা পর্যন্ত গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকুন। এসময় আপনার শরীর সবচে বেশি ঘুম কাতুরে এবং ক্লান্ত থাকে। আপনি হয়তো এসময় হঠাৎ করেই ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। যদি টানা গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে আর কোন ট্রিপে যাওয়াটাই ঠিক হবে না। আপনার ড্রাইভিংয়ের উপর অনেক মানুষের জীবন নির্ভর করে, সুতরাং এক্ষেত্রে ঝুঁকি নেওয়াটাই অনুচিত। সবসময় মনে রাখা উচিত, সবকিছুর চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক অনেক বেশি!

স্বাভাবিক ভাবে ঘুম আসা অনেক প্রশান্তির একটি বিষয়। তবে গাড়ি চালানোর সময় যখন ঘুমের কারণে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, তখন এটা একটি বড় সমস্যা হয়েই দাঁড়ায়। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর সঠিক রুটিন প্ল্যান দ্বারা এই সমস্যা থেকে বের হতে সচেষ্ট হোন। সবসময় সব ধরণের পরিস্থিতিতে সতর্ক থেকে নিরাপদে ড্রাইভিং করতে চেষ্টা করুন। আপনার গাড়ির সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রহরী ভিটিএসের সাহায্য নিতে পারেন। সবসময় সতর্ক হয়ে প্রয়োজনীয় সেফটিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন। প্রহরীর পক্ষ থেকে শুভাশিস রইল আপনার আগামীর পথচলা হোক নিরাপদ এবং নির্ঝঞ্ঝাট!

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top