প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

কুয়াশার মাঝেও যেভাবে নিরাপদে ড্রাইভিং করবেন! (প্রথম পর্ব)

সকালের হিম হিম হাওয়া আর পাতা ঝরা গাছের দীর্ঘশ্বাস জানান দিচ্ছে…প্রকৃতিতে শীতের আগমন ঘটেছে! ভোরবেলা চারদিকের ধোঁয়াশার জাল ভেদ করে উকি দিচ্ছে নতুন দিনের সূর্য। আবার গোধূলি বেলায় ঝরা পাতার আড়ালে অস্তগামী সূর্য বিদায় নেওয়ার আগেই, কুয়াশার মৌন চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। শীতের সকাল কিংবা বিকাল অথবা মাঝে মাঝে পুরোটা দিনই বিষণ্ণ কুয়াশায় ঘেরা থাকে। অনেকসময় এর তীব্রতা এতো বেশি হয় যে, আশেপাশে কিছুই দেখা যায় না। এসময় আসলে গাড়ি চালাতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তবে কিছু বিষয় মেনে কিংবা কিছু উপায় অবলম্বন করে চলতে পারলে, এই সমস্যার মাঝেও নিরাপদ ভাবে ড্রাইভিং করা যায়। আসুন আজকের আয়োজনে কিছু টিপস জেনে নিই, যা আপনাকে কুয়াশার মাঝেও নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের নিশ্চয়তা দিবে।

আবহাওয়ার খবর রাখুন

শীতকালে গাড়ি চালানোর সময় কুয়াশা একটি বড় বিপদ হয়ে দেখা দেয়। আপনার যদি এই অবস্থায় গাড়ি চালানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা অভ্যস্ততা না থেকে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হয়ে চলতে হবে। সেজন্য মূলত আপনাকে প্রথমেই যেটা করতে হবে, তা হলো আবহাওয়ার বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা। সাধারণত  কুয়াশা সকালে  অথবা  সন্ধ্যার  দিকে  বেশি  পড়ে। তাই যদি খুব বেশি সমস্যা হয় তবে এই দুই  সময়  ড্রাইভিং কিংবা দূরের জার্নি  করা  থেকে  বিরত  থাকুন। যেমন ধরুন, আপনি সমুদ্র  তীরবর্তী কোন এলাকায় ভ্রমণ করবেন, তখন কিন্তু একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ হলো সমুদ্রবর্তী এলাকায় কুয়াশা একটু বেশিই পড়ে। এছাড়াও বিভিন্ন নিচু এলাকা বিশেষ করে  যেখানে নদী, লেক বা জলাশয় আছে, সেখানেও এর প্রকোপ বেশি হতে পারে। তাই, যেকোন এলাকায় যাওয়ায় আগে সেখানকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে যেতে পারলে আপনারই সুবিধা হবে।

নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখুন

কুয়াশার মাঝে ড্রাইভিং করতে গেলে অনেক বেশি সতর্কতা মেনে চলতে হয়। কারণ আপনার একটু অসতর্কতা আপনাকে এক্সিডেন্টের মুখোমুখি করে দিতে পারে। তাই, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সাবধানী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। গাড়ি চালানোর সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অন্য গাড়ি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা। মূলত কুয়াশা থাকলে চেষ্টা করুন অন্যান্য গাড়ির সাথে একটু বেশি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে। এক্ষেত্রে  নরমাল দূরত্ব ২/৩ সেকেন্ডের বদলে অন্তত ৫ সেকেন্ডে নিয়ে আসুন। নিরাপত্তার স্বার্থে কুয়াশা থেকে বের হতে কখনোই  তাড়াহুড়ো করবেন না। কারণ অতিরিক্ত তাড়াহুড়া আপনাকে দুর্ঘটনার মুখে পতিত করতে পারে!

নির্দিষ্ট লেন মেনে চলুন

মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশে গাড়ি চালানোর সময় বার বার লেন পরিবর্তন করে বিপদ ডেকে আনবেন না। নিরাপদ থাকতে নির্দিষ্ট লেন ধরে একপাশ হয়ে গাড়ি চালাতে চেষ্টা করুন। অধিক সাবধানতা অবলম্বন করে চললে, অন্য গাড়ির সাথে ধাক্কা খাবেন না। এমনকি অন্য গাড়ির হেডলাইটের আলোও আপনার চোখে এসে পড়বে না। যতদূর দৃষ্টিসীমা যায় তত দূর সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলতে চেষ্টা করুন। যদি দেখতে বেশি সমস্যা হয়, তবে সামনের গাড়ির পেছনের লাইট (টেইল লাইট) লক্ষ্য করে পথ নির্ণয়ের চেষ্টা করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে কারণ এটা একটু রিস্কি! গাড়ি ঘুরানোর কিংবা বাঁক নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে হর্ন বাজিয়ে চলুন। এতে অন্য গাড়ির ড্রাইভাররা আপনার অবস্থান সম্পর্কে আগেই ধারণা পাবেন। মূলত আপনার অভিজ্ঞতা আর বিবেচনা বোধের উপর নির্ভর করে নিরাপদে ড্রাইভিং করতে চেষ্টা করুন।

স্পিড লিমিট সেট করুন

সবসময়ই গাড়ির স্পিড লিমিট নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। দুর্ঘটনা ঘটার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত গতিতে বেপরোয়া ড্রাইভিং করা! খারাপ আবহাওয়ায় সময় তো এই ক্ষেত্রে আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করে চলা উচিত। এক্ষেত্রে একটি সহজ সমাধান গ্রহণ করতে পারেন, আর তা হলো আপনার গাড়ির একটি নির্দিষ্ট স্পিড লিমিট সেট করে নিতে পারেন। আর ভুলক্রমে কখনো যদি তা ভায়োলেটেড হয়ে যায়, তবে প্রহরীর স্পিড ভায়োলেশন এলার্ট ফিচারের কল্যাণে খুব দ্রুতই তা জেনে যাবেন। তখন সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন এবং যার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও হ্রাস পাবে! এছাড়াও কুয়াশায় বাতাসের আর্দ্রতা গাড়ির উইন্ড শিল্ড ঝাপসা করে দিতে পারে। সেজন্য উইন্ড শিল্ড উইপের অবস্থা বুঝে স্পিড সেট করে দিলে ভাল হয়।

হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখুন

খারাপ আবহাওয়ায় বিশেষ করে কুয়াশার মাঝে হেডলাইট জ্বালিয়ে ড্রাইভ করুন। গবেষণায় এটা দেখা গেছে যে, গাড়ির হেড লাইট জ্বালিয়ে রাখলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ৩২% কমে যায়! মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশে ড্রাইভিং করার সময় হেডলাইট আপনাকে সবকিছু ভালভাবে দেখতে সাহায্য করবে। অনেকেই দিনের বেলা হেডলাইট দিয়ে গাড়ি চালান না। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি, কুয়াশা অথবা ধোঁয়াশাময় পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থেই তা জ্বালিয়ে রাখা উচিত। আপনি যদি গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখেন, তাহলে অন্য গাড়ির চালকেরা সহজেই আপনাকে দেখতে পাবেন। মূলত এর ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলাটা অনেক বেশি সহজতর হবে।

ফগ লাইট ইউজ করুন

অনেকসময় ঘন কুয়াশার মাঝে ড্রাইভিং করার ক্ষেত্রে সামনের রাস্তার দৃষ্টিসীমা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম হয়ে যায়। তখন আপনার গাড়িতে যদি ফগ লাইট থাকে কিংবা ড্রাইভিং লাইট থাকে তবে তা অবশ্যই ব্যবহার করুন। মূলত এই লাইটগুলো গাড়ির সামনের রাস্তার অনেক দূর পর্যন্ত আলোকিত করে দেখতে সাহায্য করে। গাড়িতে ফগ লাইট বা রিভিং লাইট না থাকলে বিম লাইট ব্যবহার করতে পারেন। তবে তখন কম রশ্মি ব্যবহার করতে চেষ্টা করবেন। কারণ  ঘন কুয়াশা হাই বিম লাইট রিফ্লেক্ট করে দেয়। কুয়াশা কমলে হাই বিম লাইটের কার্যকারিতা বাড়তে থাকে। তাই, এক্ষেত্রে দেখতে হবে কুয়াশা অনুযায়ী কোন লাইট ভালো কাজ করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কুয়াশা কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফগ লাইট বন্ধ করে ফেলুন। তা নাহলে অন্য ড্রাইভারদের জন্য তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

আপনি হয়তো সবসময় সচেতন হয়ে সাবধানতা অবলম্বন করেই গাড়ি চালান। তথাপিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা খারাপ আবহাওয়ার মাঝে পড়লে আপনাকে শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে চলতে হবে। ঝড়-বৃষ্টি, কুয়াশা কিংবা খারাপ আবহাওয়ার মাঝেও আপনার অধিক সতর্কতামূলক ড্রাইভিং আপনার এবং অন্যদের মূল্যবান জীবন বাঁচিয়ে দিবে। তাই এই সময়ে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে চেষ্টা করুন। প্রহরীর পক্ষ থেকে শুভাশিস রইলো আপনার শীতকালীন ড্রাইভিং হোক নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন!

পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকুন…?

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top