অটোমোবাইল রেসিং এর সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ সংস্করণ হচ্ছে ফর্মুলা ওয়ান। ফর্মুলা ওয়ান রেসিং এর জন্য ড্রাইভার থেকে শুরু করে গাড়ির ব্র্যান্ড এবং দলের অক্লান্ত পরিশ্রম আর কঠোর সাধনা নিহিত রয়েছে। দর্শকরা ফর্মুলা ওয়ান রেসিং সার্কিটে গাড়ির রেইস দেখে তৃপ্তি পেলেও, প্রতিটি রেসের পেছনে ড্রাইভার গাড়ি দলের নানান অজানা ব্যাপারগুলো দর্শকের কাছে অজানাই রয়ে যায়।
১. রেসের কারণে ড্রাইভারের ওজন কমে
ফর্মুলা ওয়ান রেসিং এ ড্রাইভারদেরকে অত্যন্ত গরমে খুবই উচ্চ মানের জি ফোর্সের প্রতিকূলে গাড়ি ড্রাইভ করে সহ্য করে থাকতে হয়। তাই প্রতিটি রেসের পরে একজন ড্রাইভারককে গড়ে প্রায় ৪ কেজি ওজন হারাতে হয়। অবশ্য পরে পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পানি গ্রহণ করলে তারা তাদের ওজন ফিরে পায়।
২. হেলমেটের মধ্যে পানির পাইপ
যেহেতু ড্রাইভাররা রেসের সময় পানিশূন্যতার সম্মুখীন হন, তাই তাদের পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ থাকে গাড়ির ভেতরেই। পানির বোতল থেকে একটা পাইপ তাদের হেলমেটের মধ্যে দিয়ে মুখের কাছে রাখা থাকে। দরকার অনুযায়ী ড্রাইভাররা সেই পাইপে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে পারেন।
৩.নাম্বার দিয়ে ড্রাইভার চিহ্নিত করা
ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভারদেকে চিহ্নিত করা জন্য একটি নির্দিষ্ট নাম্বার দিয়ে দেয়া হয়। বর্তমান চ্যাম্পিয়নকে দেয়া হয় ১। এবং তাঁর সতীর্থকে দেয়া হয় ২। এরপর বাকি নাম্বারগুলো আগের চ্যাম্পিয়নশিপে অবস্থান অনুসারে দেয়া হয়ে থাকে।
৪. ১৩ সংখ্যাটি ফর্মুলা ওয়ানে নিষিদ্ধ
ফর্মুলা ওয়ান রেসিং প্রতিযোগিতায় কোন ড্রাইভারকে ১৩ তম সংখ্যাটি কখনোই দেয়া হয় না। ফর্মুলা ওয়ানের ইতিহাসে কেবল মাত্র দুইবার এই ১৩ সংখ্যাটি দিয়ে ড্রাইভার এসাইন করা হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৬৩ সালে এই সংখ্যাটি নিয়েছিলেন মসেস সেলোনা এবং আরেকবার ফর্মুলা ওয়ানের ইতিহাসে মোট ৫ জন নারী প্রতিযোগীর একজন ডিভাইনা গালিকা এই সংখ্যাটি নিয়ে রেস করেছিলেন।
৫. ব্রেক কষলেই প্রচণ্ড বিপরীত ত্বরণ
প্রতিবার ব্রেক কষলে একজন ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভার যেই বিপরীত ত্বরণের মুখোমুখি হয়, তা দিয়ে একটি ইটের দেয়াল ভেঙ্গে গাড়ি চালানো যাবে।
৬. ফর্মুলা ওয়ানে স্কোর করা নারী প্রতিযোগী কেবল একজন
ফর্মুলা ওয়ান রেসিং ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ জন প্রতিযোগী অংশ নিলেও, এদের মধ্যে শুধুমাত্র একজনই পয়েন্ট স্কোর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই নারী প্রতিযোগীর নাম লেলা লোম্বারডি। ১৯৭৫ সালে স্প্যানিশ গ্র্যান্ড প্রিক্সে তিনি বিখ্যাত ০.৫ পয়েন্ট অর্জন করে ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করেছিলেন।
৭. গাড়ির ওজনের কারচুপি
ফর্মুলা ওয়ান রেসিং নিয়ম অনুসারে,ড্রাইভারের ওজন ও পানি সহ প্রতিটি গাড়ির ওজন কমপক্ষে ৬৪০ কেজি হতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ গাড়ির ওজন ৪৫০ কেজির মতো হয়ে থাকে। তাই বাড়তি ওজন দেয়ার জন্য গাড়ির ভেতর প্রতিযোগীরা নুড়িপাথর দিয়ে গাড়ির ওজন বাড়িয়ে নেয়।
৮. প্রাণঘাতী ফর্মুলা ওয়ান
ফর্মুলা ওয়ান রেসিং প্রতিযোগিতা একটি প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতা- এই ব্যাপারটা এখন প্রায় অনেকেই জানেন। এখন পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় ৪৬ জন ড্রাইভার প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে সবচাইতে বেশি প্রাণ হারিয়েছে ফেরারি গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী। ৭ জন ফেরারি চালকের মৃত্যু হয়েছে রেসিং সার্কিটে। তবে গাড়ির উন্নতি ও চালকের নিরাপত্তা জনিত উন্নয়নের ফলে ফর্মুলা ওয়ানে মৃত্যুর হার গত দুই যুগ ধরে অনেকটাই কমে এসেছে। সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে প্রাণ হারান ড্রাইভার আইরটন সেইনা। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলেও ইনস্যুরেন্স থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
৯. ড্রাইভারের শরীরে পানিশূন্যতা
প্রচণ্ড গরমে তীব্র গতিময় এই রেইসে প্রতিজন ড্রাইভার একবার রেস শেষ করলে প্রায় তিন লিটার পানি তাঁর শরীর থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়। রেসিং এর সময় এই পানিশূন্যতা ঘটতে থাকে বিধায়, রেসিং এর সময় তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা বেশ বৃদ্ধি পায়। এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে ড্রাইভাররা রেস শুরু করা আগে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করে থাকেন।
১০. গাড়ির ভেতরে সংকীর্ণ জায়গা
ফর্মুলা ওয়ান গাড়িগুলো দেখতে লম্বাটে এবং চওড়া মনে হলেও এর মধ্যে ড্রাইভারের বসার জন্য জায়গাটি খুবই সংকীর্ণ। এতটাই সংকীর্ণ যে গাড়ির চালকের আসনে বসার আগে এবং গাড়ি থেকে বের হবার আগে গাড়ির স্টারিং হুইল খুলে নিতে হয়!