প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 5 মিনিট

গণপরিবহণে নারীর ভোগান্তি ও নারীর নিরাপত্তা!

নারী এখন ঘরে বাহিরে সর্বত্র জয় করছে , বাড়ছে কর্মজীবী  নারীর সংখ্যা। কিন্তু এই ছুটে চলার পেছনে এখনও কোথায় যেন রয়ে গেছে কিছু বাঁধা। নারীকে তার গন্তব্যে পৌঁছতে অতিক্রম করতে হচ্ছে অনেক অনেক বিপত্তি । রাস্তায় ও গনপরিবহণে বিভিন্ন ভাবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে লাঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে  নারীরা। বাংলাদেশে এখন বেড়ে গিয়েছে নারীর হয়রানি। গণপরিবহণে নারীর ভোগান্তি ও নারীর নিরাপত্তা এখনও নারীকে অনেকটাই পিছিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের নারীরা কতটুকু নিরাপদ?

দেশের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীও সমান ভাবে অংশগ্রহন করছে।তবুও হাজার খানেক বাধা অতিক্রম করতে হয় শুধু নারীকেই।

আগে বাংলাদেশে নারীদের এতটা নিরাপত্তাহীনতা ছিল না। কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলছে নারীর প্রতিকূলতা। বাংলাদেশে নারীরা এখনও নিরাপত্তার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। এখনও নারীরা সন্ধ্যার পর বা রাতে একা কোথাও যাওয়া আসা করতে ভয় পান। একা দূরের ভ্রমনে নারীর রয়েছে এখনো হাজারো প্রতিকূলতা।  পরিবার থেকেও অনেক বাঁধা আসে নারীর একা চলাফেরায়। একা চলাফেরায় অভ্যস্ত নারীরাও রাতে খুব কমই রাস্তায় বা গনপরিবহনে চলাচল করেন।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা

রুপা

কয়েকদিন আগে এক ভয়াবহ ঘটনার স্বীকার হয় কিশোরগঞ্জের রুপা, যাচ্ছিলেন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে কিন্তু রাস্তায় কিছু মানুষ রুপী পশু কেড়ে নেয় তার সম্ভ্রম আর তার শেষ নিঃশ্বাসটুকুও। শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখত রুপা আর কাজ করত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে । পাশাপাশি একটি ‘ল’ কলেজেও পড়ালেখাও করতেন। এত সম্ভাবনাময় একটি তরুনীর জীবন যুদ্ধ যখন মাঝপথেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলে, তখন আসলেই তা মেনে নিতে কষ্ট হয়।

গনপরিবহনে বেড়েই চলছে নারীর অসম্মান।

তানিয়া

একটি বেসরকারি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ছিলেন তিনি । প্রথম রোজায় যাচ্ছিলেন নিজের বাড়ি । সন্ধ্যার পর থেকে আর তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, পরে মেলে তার মৃতদেহ । বাসের ড্রাইভার ,হেল্পার মিলে কেড়ে নিল আরেকটি সম্ভাবনাময় জীবন।

ভারতের নির্ভয়া (ছদ্মনাম)

ভারতে ডাক্তারি পড়ুয়া এক তরুণীকে পৈশাচিক ভাবে নির্যাতন, হত্যার চেষ্টা ও চলন্ত বাস থেকে ছুড়ে ফেলার ঘটনাটি সারা বিশ্ববাসীকে বাকরুদ্ধ করেছে। এমন সম্ভাবনাময় একটি মেয়ে, তার সারাজীবনের শ্রম, বাবা মায়ের স্বপ্ন, কষ্ট সব শুধু কিছু পশু রুপী কিছু পশুর  হিংস্রতার স্বীকার হয় । এটা মানতে কষ্ট হয়।

কিভাবে বুঝবেন আপনি বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন?

ড্রাইভার ও হেল্পারের আচরণ :

গনপরিবহণে উঠে অবশ্যই একজন নারীকে সতর্ক থাকতে  হবে। ড্রাইভার ও অন্যান্য শ্রমিকদের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতে হবে। ড্রাইভার অথবা হেল্পারের  আচরণ  যদি একটু অসংলঙ্গ বা বেশি কৌতূহলী মনে হয় তাহলে সাথে সাথে নেমে পড়তে হবে।

একজন বিশেষজ্ঞের মতে, প্রায় সব  ড্রাইভারের লুকিং গ্লাসের পিছনে নারীদের জন্য সীট রিজার্ভ থাকে। যদি নারী মনে করে যে, ড্রাইভার বার বার লুকিং গ্লাসে পেছনে দেখছে তাহলে এটি একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার। এরকম হলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

হঠাৎ নির্জন রাস্তায় চলে যাওয়া :

সবসময় গাড়ি যে রুটে চলে তার পরিবর্তন বা হুট করে নির্জন রাস্তায় চলে আসলে, ব্যাপারটি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।

বাস/মাইক্রবাস খালি থাকা:

বাস যদি খালি থাকে তাহলে কখনোই উঠবেন না। আবার যদি হঠাৎ খালি হয়ে যায় তখনো কিন্তু একই বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়।

পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে নারীদেরকেও বাসে উঠতে হচ্ছে। Source: Daily sun

রাতের গনপরিবহণ

একটি প্রতিবেদনে এক নারী লিখেছেন যে, আগে প্রতিদিন অফিস থেকে বের হয়ে সিনেমা দেখে রাত বারোটায়ও বাসায় ফিরতাম। তখন বাসে একবার উঠে পড়লে মনে হতো যে এবার আমি নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারব। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে, রাস্তায় তো নারী নিরাপদ না সাথে গণপরিবহণগুলোতেও না। বিশেষ করে রাতের গনপরিবহণগুলো যেন হয়ে উঠেছে ভয়াবহ অবস্থান। পাশের দেশ ভারত সহ নানা দেশে এই গনপরিবহনে ঘটছে নারীর প্রতি পাশবিক আচরণ যা একজন স্বাভাবিক  মানুষের পক্ষে মানা অসম্ভব।

তাই নারীদের সন্ধ্যার পর বিশেষ কিছু জায়গা যেমন বেড়ীবাধ,গাবতলি, উত্তরার কিছু জায়গা বা এমন কিছু জায়গা যেখানে আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে সেসব জায়গায় একটু সাবধানী হয়ে চলাফেরা বা জায়গা গুলো পরিহার করা  উচিৎ। আর রাত বেশি হলে পারত পক্ষে গনপরিবহণে না চড়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ঢাকায় এখন শুধু মহিলা বাস সার্ভিসও রয়েছে। এই বাসগুলোতে নারীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারেন।

মহিলা বাস সার্ভিসে নারীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন ?

নারীকে যেহেতু সামনে এগিয়ে যেতেই হবে, তাই তাকে ঘর থেকে বের হতেই হবে। আর ঘর থেকে বের হবার সময়  কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে নিলে হয়ত কিছু বিপদে মোকাবেলা করা সম্ভব।

রাস্তায় প্রত্যেকদিন যারা চলা ফেরা করেন তাদের সবার উচিৎ ব্যাগে কিছু আত্ম রক্ষার জিনিস রাখা।যেমন-

  • পেপার স্প্রে (গোলমরিচের গুরা)।
  • ছোটো নেইল কাটার।
  • হিজাব পিন
  • চুলের কাটা।
  • ব্ল্যাক হেড স্টীক।
  • এছাড়া মোবাইলে লোকেশনের জিপিএস ট্র্যাকিং অন করে রাখতে পারেন।বাসায় মানুষজনের সাথে শেয়ার মাই লোকেশন অপশন টি অন করে রাখতে পারেন।
  • মেয়েদের এখন বিভিন্ন কোর্সে সেলফ ডিফেন্স শেখানো হয় সেখান থেকে যে কোন একটি শর্ট কোর্স করে রাখতে পারেন।
  • জোরে চিৎকার করে উঠতে হবে, যাতে আশেপাশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।

 আইন কি বলে?

বাংলাদেশের নারী নির্যাতন আইনে রয়েছে , যদি কেউ অন্যায় ভাবে নারীর গায়ে হাত দেয় বা অন্য কোন অঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে তা হবে নিপীড়ন এবং এরজন্য তাকে ৫ থেকে ১০ বছরেরে সশ্রম কারাদণ্ড ও নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ জরিমানা দিতে  হবে।

কিছু এনজিও রয়েছে তারা নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করে। আবার, পুলিশের পক্ষ থেকে এখন ৯৯৯  একটি জরুরী সাহায্যকারী সেবা চালু করা হয়েছে ।যা সম্পূর্ণ টোল ফ্রি এবং পুলিশ ,ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে থাকে।

বাসে হয়রানির শিকার হলে ইমারজেন্সি ৯৯৯ নাম্বারে কল করুন।

এছাড়া বর্তমানে সবথেকে শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে যে কেউ তুলে ধরতে পারেন আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অন্যায়ের চিত্র।

গা ঘেঁষে দাড়াবেন না পেছনের গল্প।

কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে এই লেখাটি খুব চোখে পড়েছে কিন্তু সবচেয়ে বেশি যে জিনিশটিতে চোখ আটকে গেল সেটা হল লেখাটি টি-শার্টে প্রিন্ট করা।

টি শার্টের ডিজাইনার জিনাত জানান, তার সাথে প্রতিনিয়ত গণপরিবহণে হয়রানির ঘটেছে। গণপরিবহণে নারীর হেনস্থার বিরুদ্ধে এটি একটি পদক্ষেপ।

‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’- টি শার্টটি নারীদের কাছে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

নিজে হয়রানির ঘটনায় শিকার হওয়া কিন্তু কোন প্রতিবাদ করতে না পারা এবং আশেপাশে কারো সাহায্য না পাওয়া এইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে নেওয়া একটি ছোট্ট প্রয়াস ছিল এটি।

এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে

গন পরিবহণে নারী বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকেই লাঞ্ছিত হচ্ছে। কেউ ড্রাইভার কেউবা হেল্পার আবার কেউ খোদ পাশে বসা একজন সহযাত্রীর থেকেই হেনস্থা হচ্ছেন।এমতাবস্থায় অনেক নারী লজ্জায়,ভয়ে মুখ ফুটে কিছু বলতে চান না।কিছু নারী হয়তো অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন কিন্তু একা নারী বাসে কতটুকুই বা রুখে দাড়াতে পারে সে।এই জন্য একটি গন পরিবহনে নারীর প্রতি অন্যায় হলে অবশ্যই প্রতিবাদের মানসিকতা থাকতে হবে সবার।ঘুনে ধরা এই সমাজে নারীকে মাথা উচু করে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র লোক লজ্জার ভয়ে গুটিয়ে থাকা আর চলবেনা। মনে রাখতে হবে যে, অন্যায় যে করে আর যে চুপচাপ সহ্য করে উভয়ই সমান অপরাধী।

 শেষ কথা

বাংলাদেশে নারীর তো সব জায়গায়ই জয় জয়কার। দেশ চালানো থেকে শুরু করে ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষিকা, নেত্রী, সংসদে স্পীকার সব জায়গায় নারীর ক্ষমতা। তবু একজন নারী যখন গন পরিবহণে একা তখন কেন এত অসহায়? বাংলাদেশে যেখানে সব ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার সেখানে গনপরিবহনে একা নারীর নিরাপত্তাহীনতা নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top