প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 5 মিনিট

গাড়ির নিরাপত্তা এবং জীবন রক্ষায় ৯ টি আধুনিক ফিচার

আপনার যদি একটি গাড়ি থাকে তাহলে নিশ্চিত ভাবে আপনি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রায়শই উদ্বিগ্ন থাকেন। আর বর্তমান পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখলেও একই চিত্র দেখা যায়- সড়কে দুর্ঘটনার হার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। গাড়ি থাকুক বা না থাকুক, কোন ব্যাক্তিই চান না যে তার পরিবারের কোন সদস্য সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হচ্ছে, আপনার আমার বা আমাদের পরিবারের যে কারো সাথে সড়ক দুর্ঘটনার মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই যাদের গাড়ি আছে, জীবন ও গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের উচিৎ গাড়ি এবং সড়ক উভকেই নিরাপদ রাখা।

তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক আধুনিক সময়ে গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী ৯ টি আধুনিক ফিচার। এগুলো মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনার হার তো কমবেই পাশাপাশি কমে  প্রাণ হারানোর ঝুঁকি।

১। সিটবেল্ট

গাড়িতে উঠলে যেই কথাটি সবচে বেশিবার শুনতে এবং করতে হয়, তা হলো- সিটবেল্ট বেঁধে নিন। গাড়ি চালানোর সময় জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে এই সিটবেল্ট নিরাপত্তাজনিত সবচাইতে পুরনো পদ্ধতির মধ্যে একটি। ১৯০০ সালের দিকে প্রথম উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি প্রথমে টু পয়েন্ট সিটবেল্ট হিসেবে পরিচিত থাকলেও পরবর্তীতে থ্রি পয়েন্ট সিটবেল্ট তৈরি করা হয়েছে। থ্রি পয়েন্ট সিটবেল্টের সত্ত্ব ১৯৫৯ সালে ভলভো কিনে নিলেও সমস্ত গাড়ি এবং গাড়ির যাত্রীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এটি সকলের জন্য ফ্রি করে দেয়া হয়। ১৯৭০ থেকে সকলেই আধুনিক এই সুরক্ষা পদ্ধতি গাড়িতে ব্যাবহার করে আসছে।

 

২। এয়ারব্যাগ

সিটবেল্টের মতো এয়ারব্যাগ উদ্ভাবনেরও একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫০ এর দশকে সর্বপ্রথম গাড়িতে এয়ারব্যাগ স্থাপনের ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রাথমিক দিকে নিরাপত্তার জন্য এটি খুব একটা সফল হয়নি। পরবর্তীতে এটি নিয়ে মার্সিডিজ বেঞ্জ গবেষণা করে এবং ১৯৮১ সালে পুনরায় গাড়িতে এয়ারব্যাগ স্থাপন চালু করে। এবার থ্রি পয়েন্ট সিটবেল্টের সাথে যুক্ত করে এয়ারব্যাগ স্থাপন করা হয়েছিল এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে ফলপ্রসূও হয়েছিল। বলে রাখা ভাল, ১৯৬৮ সালে প্রথম একটি দুর্ঘটনার সময় এয়ারব্যাগের ব্যবহার সম্পর্কে সকলেই জেনেছিল, পরে ৯০ এর দশকে এয়ারব্যাগের আধুনিকায়ন এবং গাড়ির নিচের দিক এবং পাশের দিকে থেকে এয়ারব্যাগ স্থাপন করা হয়েছিল। তারপর থেকেই গাড়িতে এয়ারব্যাগ রাখার প্রচলন অনিবার্য হয়ে পড়ে।

 

৩। এন্টি লক ব্রেকিং

গাড়ির চাকা হঠাৎ যদি লক হয়ে যায় তাহলে গতিশীল একটি গাড়ি স্কিড করে সামনের দিকে চলে যেতে পারে। গাড়ির চাকা এভাবে হঠাত লক হয়ে দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে। আর দিন দিন যেভাবে গাড়ির ক্ষমতার উন্নতি ঘটছে তাতে করে এন্টি লক ব্রেকিং খুবই দরকারি। ১৯৭০ এর দিকে গাড়িতে এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার চালু হয়। এই ব্রেকিং সিস্টেমে গাড়ির ব্রেক থেকে এমন একটি ঘন তরল নিঃসরণ হয় যা চাকাকে লক হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।

 

এন্টি লক ব্রেকিং এর সুবিধা-

  • ১) চাকার ক্ষয়রোধ হয়
  • ২) হার্ড ব্রেক করার সময় হ্যান্ডেল ডানে/বামে নিরাপদে ঘুরানো যায়
  • ৩) ব্রেকিং ক্ষমতা ভাল ফলে স্কিডিং/স্লিপ করে না
  • ৪) ব্রেকিং ডিস্টেন্স কমায় ও রাইডারের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

৪। ইলেকট্রনিক স্ট্যাবিলিটি কন্ট্রল

ইলেকট্রনিক স্ট্যাবিলিটি কন্ট্রল গাড়ির নিরাপত্তা দিতে এমন একটি ফিচার, যা গাড়ির টায়ারের ট্র্যাকশন লস এবং এবং গাড়ির স্কিডিং প্রতিরোধে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রেক করতে সাহায্য করে। ফলে ড্রাইভারের হাত থেকে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারায় না। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কমে যায়। ইলেকট্রনিক স্ট্যাবিলিটি কন্ট্রল প্রতিটি চাকা আলাদা ভাবে ব্রেক করতে পারে এবং যতক্ষণ না গাড়ির নিয়ন্ত্রণ পুনরায় অর্জন হয়, ততক্ষণের জন্য ইঞ্জিন ও বন্ধ করে রাখতে পারে! ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম এটির ব্যবহার শুরু হয় এবং নব্বইয়ের দশকের পর থেকে গাড়ির জন্য স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

৫। প্রহরী ভেইকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম

গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু ফিচার গাড়িতে বিল্ট-ইন ফিচার হিসেবেই দেয়া থাকে। কিন্তু আধুনিক সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করেও গাড়িতে পোর্টেবল সেফটি ডিভাইস যেমন প্রহরী ভেইকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম ডিভাইস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এখন ভেইকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম সহজলভ্য। প্রহরী ভেইকেল ট্র্যাকিং সিস্টেমের বিশটিরও ফিচার গাড়িকে রাখে সবসময় গাড়ির মালিকের নজরদারিতে। গাড়ি কোথায় আছে কোথায় যাচ্ছে, গাড়ি ওভার স্পিডে চলছে কিনা এসব খবরাখবর এখন চলে আসে মোবাইল ফোনেই। প্রহরী এন্ড্রয়েড ও অ্যাপেল অ্যাপ এবং ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে যেকোনো সময়ে যেকোনো জায়গা থেকে গাড়ি ট্র্যাক করা যায়। নিজেই ট্র্যাক করে দেখতে

এখানে ক্লিক করুন 

 

৬। ব্লুটুথ টেকনোলোজি

গাড়িতে ফোন ব্যবহার করা খুবই বিপদজনক। এটি ড্রাইভারের মনোযোগ হারাতে বহু অংশে দায়ী। কিন্তু গাড়িতে থাকা ব্লুটুথের সাথে মোবাইল ফোনটি যুক্ত করা থাকলে এইটি অনেকাংশেই কমে আসে। যদিও সেটি ড্রাইভারকে পুরোপুরি মনোযোগ রাখতে সামান্য বাধা দেয়। যদি ভালভাবে গাড়ির ব্লুটুথের সাথে মোবাইল ফোনটি কানেক্ট না থাকে তাহলে আবার ড্রাইভারের মনোযোগে ব্যঘাত ঘটাতে পারে।

 

৭ । শাটার রেজিস্টেন্স গ্লাস

প্রথম দিকে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন বাতাসের ধাক্কা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুর হঠাৎ ধাক্কা থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা হত। কিন্তু অনেক সময় গাড়ির গ্লাস ভেঙে কোন চোখা বধু বাশ বা পিলার বা ছুড়ি ঢুকে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েই যায়। বর্তমানে গাড়ির উইন্ডশিল্ড স্যান্ডউইচের মতো দুই লেয়ার বিশিষ্ট হয়ে থাকে। দুই দিকে শাটার রেজিস্টেন্স টেকনোলজি দিয়ে একটি করে লেয়ার এবং এই লেয়ারের মাঝে একটি প্লাস্টিকের লেয়ার। শাটার রেজিস্টেন্স হবার কারণে অনেক ধারালো বস্তুই আর গাড়ির গ্লাস ভেদ করতে পারে না, আর যদি ভেদ করার চেষ্টা করে, তাহলে মাঝের প্লাস্টিক লেয়ার সেটিকে আটকে দেয়।

৮। ইন্ডিকেটর এবং মিরর

রাস্তাঘাটে যানবাহনে চলাফেরার করার সময় দেখা যায় অনেকেই পেছনের গাড়ি থামাতে বা চলতে ইশারা দিয়ে থাকে। কিন্তু সবসময় তো আর হাতের ইশারায় এই কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই গাড়ির পেছনে দুই পাশে এবং সামনে দুই পাশে ছোট হলুদ রঙের ইন্ডিকেটর লাইট ব্যবহার করা হয়। গাড়ি কোন দিকে টার্ন করবে বা সোজা চলবে কিনা সেটি এই ইন্ডিকেটর লাইট দেখে বুঝে নেয়া যায় এবং সেই অনুযায়ী গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা এড়ানো সহজ হয়। ১৯১৪ সালে ফ্লোরেন্স লরেন্স এই ইন্ডিকেটর লাইটের আবিষ্কার করেন। ইন্ডিকেটর লাইটের পাশাপাশি গাড়িতে রেয়ার এবং সাইড ভিশন আয়না বা মিররের কথাও উল্লেখ করতে হয়। গাড়ি চালানোর সময় ব্লাইন্ড স্পটগুলোতে নজর রাখতে ব্যবহৃত এই মিররের কল্যাণেও অনেক দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৯। রিভার্স ক্যামেরা

গাড়ি চালানোর সময় একজন চালক শুধু সামনের দিকেই দেখতে পায় কিন্তু পেছনের দিকে দেখা যায় না। কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় পেছনের দিকটাও খেয়াল রাখা জরুরী। গাড়ি পার্ক করার সময় পিছনের অংশ কোথাও ধাক্কা লাগলো কিনা, বা পিছনের দিকে গাড়ি রিভার্স করার সময় কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগলো কিনা বা গাড়ির পেছনে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কোন গাড়ি আঘাত করতে আসছে কিনা এগুলো দেখার জন্য গাড়ি চালানোর সময় গাড়ির পেছনের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরী। আর এই জরুরী কাজটি করে থাকে গাড়ির রিভার্স ক্যামেরা। এই ক্যামেরাটি গাড়ির পেছনে বাইরের দিকে তাক করে লাগানো থাকে এবং ড্রাইভারের সামনে রাখা মনিটরে গাড়ির পেছনের দিকটা দেখায়। ১৯৫৬ সালে গাড়ির নিরাপত্তা বজায় রাখতে রিভার্স ক্যামেরার ব্যবহার শুরু হয়।

 

রিভার্স ক্যামেরা দিয়ে গাড়ির ভেতরে থেকে গাড়ির পেছনের দিকে দেখা যায়। কিন্তু ধরুন আপনি অফিসে বা বাসায় ব্যস্ত আছেন, ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়েছেন আপনার সন্তানের স্কুলে। তখন কীভাবে দেখবেন গাড়ি কোথায় আছে, কত গতিতে চলছে কিনা বা গাড়ি ওভার স্পিডে চলছে কিনা! গাড়িকে সবসময় আপনার নজরদারিতে রাখতে ব্যবহার করুন প্রহরী ভেইকেল ট্র্যাকার। গাড়ির নিরাপত্তা ও জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত হোক প্রহরীর সহায়তায়।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top