প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

মিনারেল নাকি সিনথেটিক: গাড়িতে কোন ধরণের ইঞ্জিন অয়েল বেশি কার্যকরী?

গাড়ির প্রাণ হচ্ছে ইঞ্জিন। আর ইঞ্জিনকে বাঁচিয়ে রাখে ইঞ্জিন অয়েল। ইঞ্জিন অয়েল আবার কয়েক রকম হতে পারে। যেমন মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল, সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল , সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল। কিন্তু কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা গাড়ির জন্য ভাল এবং যুক্তিযুক্ত এই নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। বিভিন্ন ধরণের ইঞ্জিন অয়েলের বিভিন্ন রকম সুবিধা অসুবিধা থাকে। সেসব ভালোমন্দ বিবেচনা করেই গাড়িতে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিৎ। তার আগে এই বিভিন্ন রকম ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক।

মিনারেল অয়েল

প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এমন অপরিশোধিত তেলকে পরিশোধনের পর যদি গাড়ির ইঞ্জিন চালনার জন্য ব্যবহার করা হয় তাহলে সেগুলোকে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল বলা হয়। মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলে কোনো ধরণের কেমিক্যাল যোগ করা হয় না। প্রাকৃতিক ভাবে যে তেল পাওয়া যায় সেটিই শুধু পরিশোধন করে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ক্রুড অয়েল থেকে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়।

সিনথেটিক অয়েল

গাড়ির ইঞ্জিনের সেরা এবং সর্বোচ্চ পারফর্মেন্স নিশ্চিত করার জন্য যেসব তেল উচ্চমাত্রার পরিশোধিত এবং প্রয়োজনীয় রাসায়নিক কেমিক্যাল যুক্ত করে তৈরি করা হয়ে থাকে সেগুলোকে সিনথেটিক অয়েল বলা হয়ে থাকে। সিনথেটিক ওয়েলে যেসব কেমিক্যাল যুক্ত করা হয় সেগুলো ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্ত করা হয়ে থাকে।

সেমি সিনথেটিক অয়েল

সেমি সিনথেটিক বলতে সিনথেটিক এবং মিনারেল অয়েলের মিশ্রণকে বুঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ যেসব ইঞ্জিন অয়েলে একই সাথে প্রাকৃতিক এবং সিনথেটিক ওয়েল দুটোই থাকে সেগুলোকে সেমি সিনথেটিক অয়েল বলা হয়ে থাকে। মূলত মিনারেল অয়েলের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য তার সাথে সিনথেটিক অয়েল যুক্ত করে সেমি সিনথেটিক অয়েল তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে এই দুই ধরণের অয়েলের মিশ্রনের অনুপাতে সিনথেটিক অয়েলের পরিমান সর্বোচ্চ ৩০% । বাকি ৭০ ভাগ মিনারেল অয়েল।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য কোন ধনের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা বেশি ভাল এবং যুক্তিযুক্ত। দাম, ব্যবহার উপযোগিতা, কার্যকরণ বিভিন্ন কারণে একেকজন একেক ধরণের তেল ব্যবহার করে থাকেন। কোন ধরণের তেলের কী কী সুবিধা-অসুবিধা, ভালোমন্দ তা যাচাই করে; তবেই গাড়ির জন্য ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচন করা উচিৎ।

মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের সুবিধা অসুবিধা

সুবিধা

  • দাম কম- মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল প্রাকৃতিক উপায়ে উত্তোলিত হয় বিধায় এই তেলের দাম কম।
  • সহজলভ্য- মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল সহজেই সবখানে পাওয়া যায়।
  • গাড়ির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম- মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলে কোন অতিরিক্ত কেমিক্যাল যুক্ত না করা হলেও, এই তেল দিয়ে গাড়ির বেসিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

অসুবিধা

  • মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল বারবার পরিবর্তন করতে হয়।
  • ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত কোন কেমিক্যাল যুক্ত থাকে না।
  • ইঞ্জিনের সেরা পারফর্মেন্স সবসময় পাওয়া যায় না।
  • ইঞ্জিনের নকিং মাঝে মাঝে বাড়তে পারে।
  • দ্রুতই ঘনত্ব হারিয়ে পাতলা হয়ে যায়।
  • কখনো কখনো গাড়ির পার্টসের ক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় মিনারেল অয়েল।
  • উচ্চতাপে বা খুব ঠান্ডা তাপমাত্রায় এই তেল খুব একটা কার্যকরী হয় না।

সিনথেটিক অয়েলের সুবিধা অসুবিধা

সিনথেটিক অয়েল এমন এক ধরণের জ্বালানি যা গাড়ির ইঞ্জিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিল। ফলে গাড়িতে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করার বেশ কিছু সুবিধা আছে। এইসকল সুবিধার জন্য অনেক গাড়ি চালকই সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করার দিকে ঝুকছেন।

সুবিধা

সিনথেটিক অয়েল ইঞ্জিন চালু হবার সাথে সাথেই কাজ করা শুরু করে। যেখানে মিনারেল অয়েল ইঞ্জিন চালু হবার পর পুরোপুরি কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগে। এছাড়াও গাড়ির পার্টস ভাল রাখতে এবং ইঞ্জিনের নকিং বন্ধ করতে সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের সুনাম রয়েছে। নিচে সিনথেটিক অয়েলের আরো কিছু সুবিধা দেয়া হলো

  • অল্প বা ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় বেশ কার্যকরী
  • অধিক বা উচ্চ তাপমাত্রায়ও কাজ করে
  • ইঞ্জিনের ময়লা জমতে দেয়না এবং ইঞ্জিন ডাস্ট ক্লিন রাখে
  • ঘর্ষণ এবং নকিং কম হয় ফলে ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব বাড়ে।
  • সহজে পাতলা হয়ে যায়না বিধায়, বাষ্প হয়ে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
  • অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করে।
  • সর্বোচ্চ পরিমাণে পরিশোধিত বিধায় ক্ষতিকারক কেমিক্যাল নেই বললেই চলে
  • কম সময়ে কাজ করতে শুরু করে।
  • তেলের মধ্যে আনবিক অনুপাত সবসময় সমান থাকে বিধায় কার্যকারিতাও সবসময় একই রকম থাকে।

অসুবিধা

সিনথেটিক অয়েলের যেমন সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে।

  • সিনথেটিক অয়েল বেশ পিচ্ছিল। তাই নতুন গাড়িতে বা ইঞ্জিনে সিনথেটিক অয়েলে লুব্রিকেন্ট হিসেবে এই তেল সঠিক বেক-ইনের জন্য প্রথম প্রথম কার্যকরী হতে সময় লাগে। তাই নতুন গাড়িতে সিনথেটিক অয়েলের আগে কিছুদিন মিনারেল অয়েল ব্যবহার করে নেয়া ভাল।
  • ইঞ্জিনে মিনারেল অয়েলের চাইতে বেশি তাপ উৎপন্ন করে।
  • মিনারেল অয়েলের চাইতে সিনথেটিক অয়েলের দাম অনেক বেশি
  • অনেকেই সিনথেটিক অয়েল সম্পর্কে সঠিকভাবে সচেতন নন।
  • অনেক সময় হাতের কাছে চাইলেই সিনথেটিক অয়েল পাওয়া যায় না
  • অল্প সিসির গাড়িতে এই তেল ব্যবহার করা কিছুটা ব্যয়বহুল।

কোন ধরণের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করবেন?

আপনার গাড়ির ব্যবহার এবং পরিবেশের উপর তেলের ব্যবহার অনেকখানি নির্ভর করে থাকে।

  • আপনার গাড়িটি যদি নিয়মিত ট্রিপ দিয়ে থাকে এবং অনেক সময় ধরে ব্যবহার হয়ে থাকে তাহলে গতানুগতিক তেল ইঞ্জিনের অতিরিক্ত ময়েশ্চার পুরোপুরিভাবে পুড়িয়ে ফেলতে পারে না। এক্ষেত্রে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা ভাল।
  • আপনি যদি অধিক শীত বা ঠাণ্ডা অবস্থায় গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে মিনারেল অয়েলের চাইতে সিনথেটিক অয়েল বেশি কার্যকরী।
  • গাড়ির সর্বোচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চাইলে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
  • সিনথেটিক অয়েল যেহেতু ব্যয়বহুল তাই আপনার সামর্থ্যর কথা বিবেচনা করে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
  • যদিও সিনথেটিক অয়েল অধিক মাইলেজের জন্য ভাল, তাও মাঝে মাঝে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উচিৎ।
  • পরিবেশের কথা চিন্তা করলেও সিনথেটিক অয়েল কিছুটা ভাল। কারণ এই তেল সম্পূর্ণ পরিশোধিত হয় বলে এতে ক্ষতিকারক কেমিক্যালের পরিমান কম থাকে।

যাদের সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করার ইচ্ছা আছে কিন্তু দামের কথা মাথায় রেখে অনেকেই এই তেল কিনতে পারেন না। তারা সেমি সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে কম দামেও তেল ব্যবহার করে ইঞ্জিনের যত্ন নেয়া সম্ভব। সিনথেটিক অয়েল গাড়ির কার্যকারিতা বাড়ায় তাতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়াও গাড়িতে ভেইকেল ট্র্যাকিং ডিভাইস প্রহরী থাকলে এর মাধ্যমে সহজেই আপনি আপনার গাড়ির ফুয়েল মনিটরিং করতে পারবেন মোবাইলের মাধ্যমেই। তাই তেল চুরির ভয় নেই। তেল অপচয় ও ঠেকানো সম্ভব। তাই দাম বেশি হলেও, সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করে তখন খরচ কিছুটা হলেও কমানো যাবে।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top