যখন সাধারণ ব্রেক কাজ করে না তখনি ইমারজেন্সি ব্রেক করে গাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে থামানো হয়। একটি ইমারজেন্সি ব্রেক অনেক সময় বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটা থেকে বাঁচিয়ে দেয় আর অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির নিরাপত্তায়ও ব্যবহার করা হয়। ইমারজেন্সি ব্রেক গাড়ির একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টস। তাই গাড়ি চালানো শেখার সময় আমাদের জানতে হবে যে কীভাবে ও কখন ইমারজেন্সি ব্রেক করতে হবে।
লিভার আর কেবলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ যান্ত্রিক ভাবে গাড়িতে ইমারজেন্সি ব্রেক করা হয়। আর ইমারজেন্সি ব্রেকের মাধ্যমে গাড়িতে সার্ভিস ব্রেক ফেইল হলেও গাড়িটিকে সম্পূর্ণভাবে থামানো সম্ভব হয়। যখন গাড়িতে ইমারজেন্সি ব্রেক সংযুক্ত করা হয় তখন ব্রেকের তারগুলো ভেতরের লিভার বা ভার লিভারের মাধ্যমে টানা হয় যা গাড়ির টানা শক্তি বাড়ায় এবং পরে এটি একটি ইকুলাইজারের মাধ্যমে পাস করে। ইংরেজি অক্ষর ইউ এর মত দেখতে ইকুলাইজারগুলোতে দুটি ভাগ থাকে। ইকুলাইজারগুলো প্রয়োগকৃত বলকে দুই ভাগে ভাগ করে এবং দুটি তার গাড়ির পেছনের চাকায় শক্তি সঞ্চালনের জন্য সংযুক্ত থাকে।
ড্রাম ব্রেক এবং ডিস্ক ব্রেক।
অধিকাংশ যানবাহনে দুই ধরনের ব্রেক ব্যবহার করা হয়ে থাকে – ড্রাম ব্রেক আর ডিস্ক ব্রেক। ড্রাম ব্রেক সাধারণত গাড়ির পেছনের চাকার সাথে সংযুক্ত থাকে আর ডিস্ক ব্রেক সামনের চাকার সাথে। ইমারজেন্সি ব্রেকের তারগুলো সরাসরি ব্রেকের একটি অংশ ব্রেক সুয়ের সাথে চলে। যা হাইড্রোলিক ব্রেক সিস্টেমের উপর দিয়ে যায়। সাধারণ ভাষায় হচ্ছে, ইমারজেন্সি ব্রেক সিস্টেম নিয়ন্ত্রনের জন্য কোন আলাদা পার্টসের প্রয়োজন হয় না।
যেসব গাড়ির ইমারজেন্সি ব্রেকগুলো পেছনের চাকায় সংযুক্ত থাকে সেগুলো বেশী জটিল প্রক্রিয়ার হয়। মাঝে মাঝে পেছনের রটোরটিকে সম্পূর্ণ ভাবে তোলার জন্য পুরো ড্রাম ব্রেক সিস্টেমটি প্রয়োজন হয়। যখন কোন যানবাহনে সহায়ক ড্রাম ব্রেক ছাড়াই পেছনের চাকার ডিস্ক ব্রেক থাকে তখন পার্কিং ব্রেকের প্রক্রিয়াটি সচল করার জন্য একটি ক্যালিপার ব্যবহার করা হয়। এবং এই প্রক্রিয়ায় ক্যালিপার পিস্টন থাকে তার সাথে একটি অতিরিক্ত লিভার, কর্কস্ক্রু যোগ করা হয়। যখন ইমারজেন্সি ব্রেক টানা হয় তখন লিভারটি ক্যালিপার পিস্টনের উলটা দিক থেকে কর্কস্ক্রুটিকে ব্রেকের উপর বল প্রয়োগ করে ।
ইলেকট্রিক ব্রেক / ই ব্রেক।
বর্তমানে কিছু গাড়িতে ইলেকট্রিক / ই-ব্রেক ব্যবহার করা হয়। ব্রেকের তারগুলো টানার জন্য প্যাডেল , লিভার বা কনসোল লিভার ব্যবহারের পরিবর্তে একটি ইলেকট্রিক মোটর ব্যবহার করা হয় যার একটি ছোট বাটন থাকে এবং ড্যাশ সিগন্যালের উপর সেটা বসানো থাকে। একটি উন্নত ইলেকট্রিক ব্রেক সিস্টেম ব্রেক ক্যালিপারকে ব্যাস্ত রাখতে কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটির সঠিক ব্যবহার করে ।
কখন ব্যবহার করবেন ইমারজেন্সি ব্রেক?
সম্পূর্ণ ব্রেক ফেইল না হলে ,ইমারজেন্সি ব্রেকের মাধ্যমে একটি চলমান গাড়িকে সম্পূর্ণভাবে থামিয়ে দেওয়া কখনোই গাড়ির জন্য ভাল না এবং গাড়ির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তাই বলা হয় নিজেকে কখনোই গাড়ির রেসার মনে করা উচিৎ না আর রেসার মনে করে গাড়ির ই-ব্রেক দিয়ে গাড়িটিকে ড্রিফট করাও কোন কাজের কথা না। ইমারজেন্সি ব্রেক দিয়ে গাড়ি চালালে গাড়ির ইমারজেন্সি ব্রেক ও সার্ভিসে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে । আর যদি কখনো এমন সমস্যায় পড়েন তাহলে দ্রত ব্রেক-সু আর রটোরগুলো চেক করে নিতে হবে যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
ইমারজেন্সি ব্রেকের ব্যবহার।
ইমারজেন্সি ব্রেকের মধ্যে সবথেকে বেশী ব্যবহৃত হয় পার্কিং ব্রেক। যারা ম্যনুয়্যাল ট্রান্সমিশনে গাড়ি চালান অথবা সটীক শিফটে চালান তারা যখন গাড়ি থেকে বের হন তখন এমনিতেই তাদের ইমারজেন্সি ব্রেকের ব্যবহার হয়। আর যদি ইমারজেন্সি ব্রেক ব্যবহার না করে তাহলে গাড়িটি একাই একদিকে গড়িয়ে চলে যেতে পারে। সাধারণত অটোম্যাটিক ট্রান্সমিশনে যারা গাড়ি চালায় তারা অতটা ইমারজেন্সি ব্রেক ব্যবহারে অভ্যস্ত থাকেন না ।
গাড়িটি আপনি যেকোনো জায়গায় পার্ক করতে পারবেন যদি গাড়িটি কোন পাহাড়েও পার্ক করেন আর ইমারজেন্সি ব্রেক করে রাখেন তাহলেই আপনার গাড়িটি নিরাপদে থাকবে। অটোম্যাটিক অথবা স্ট্যান্ডার্ড ট্রান্সমিশন যেকোনো গাড়ি আপনি এভাবে ইমারজন্সি ব্রেকের মাধ্যমে রাখতে পারেন । গাড়ি পার্কের জায়গা থেকে সরানোর সময়, অটোম্যাটিক ট্রান্সমিশনে ইমারজেন্সি ব্রেকটি করার আগে সার্ভিস ব্রেকের প্যাডেলটি ছেড়ে দিতে হবে । এতে করে প্যাডেলটি সব ভার নিয়ে নেবে আর খুব সহজেই পার্ক থেকে গাড়িটিকে সরাতে পারবেন ।
ইমারজেন্সি ব্রেক ম্যনুয়্যাল ট্রান্সমিশনে গাড়িতেও ব্যবহার করা হয়। কোন পাহাড়ের উপর গাড়ি স্টার্ট দিলে গাড়িটিকে পছেনের দিকে যাওয়া থেকে আটকাতে পারে ইমারজেন্সি ব্রেক । গাড়িটি বন্ধের সময় ইমারজেন্সি ব্রেক করে আর ক্লাচটি ছাড়ার সময় ব্রেকটি ছেড়ে দেওয়া এক ধরনের ট্রিকস । কিন্তু শুধু এই ট্রিকসের উপর নির্ভর না করে অবশ্যই গাড়ির ব্রেকের উপর প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে।
ইমারজেন্সি ব্রেকের ভয়াবহতা।
যদিও ইমারজেন্সি ব্রেকের তারগুলো একটি হাতার মধ্যে ঢেকে রাখা হয়। কিন্তু তবু যদি তারগুলোতে কোন মরিচা বা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ঘটতে পারে ব্রেক ফেইলিওর । সবসময় যদি ইমারজেন্সি ব্রেক ব্যবহার করা হয় তাহলে হয়তো তারগুলো নষ্ট হয়না , সচল থাকে। তাই ইমারজেন্সি ব্রেকটি নিয়মিত চেক আপ করতে হবে। আর প্রয়োজনে তারগুলো টাইট করে বেঁধে রাখতে হবে।
শীতের দিনে ইমারজেন্সি ব্রেক।
শীতের দিনে ইমারজেন্সি ব্রেকের তারগুলো ঠাণ্ডায় জমে থাকে। যখন লিভারটি ছাড়া হয়, তখন ব্রেক ছেড়ে দিতে পারেনা । তাই সবসময় গাড়িটিকে পার্কিং এরিয়ায় বা কভার দিয়ে ঢেকে রাখতে চেষ্টা করুন। আর শীতের সময় যদি গাড়িটিকে কভার করে না রাখতে পারেন তাহলে তখন গাড়িটি চালাবেন না। সমাধান হিসেবে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। অথবা হেয়ার-ড্রায়ার দিয়ে তারের অংশে গরম হাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করুন । শীতের দিনে ইমারজেন্সি ব্রেক সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার না করাই ভাল । আর যদি আপনার গাড়িটি ম্যানুয়ালি চলে তাহলে একটু এগিয়ে-পিছিয়ে চালান যাতে ই-ব্রেক টি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গাড়ি চালানো যায়।
মাঝে মাঝে কিছু গাড়িতে ইমারজেন্সি ব্রেক সামনের ব্রেকটিকে আটকে রাখে,পেছনেরটাকে না। তাই গাড়ি চালানোর আগে সার্ভিস ম্যানুয়াল দেখে নিতে হবে। জানতে হবে দুর্ঘটনা ঘটার সময় কোন চাকা আপনার গাড়ির ভার নেবে আর আপনার গাড়িটিকে রক্ষা করবে। তবু পিছনের ব্রেকের উপর ভরসা করা যায় যতক্ষন না সেগুলো নমনীয় না হয়ে যায়।
এজন্যই বলা হয়, ইমারজেন্সি ব্রেক সবসময় সঠিকভাবে করার প্র্যাকটিস করতে হবে। কারণ মানুষ ইমারজেন্সি ব্রেক করাটা তাড়াতাড়ি ভুলে যায়। ইমারজেন্সি ব্রেকটি খুব শক্ত করে করতে হবে যতটা আপনার দ্বারা সম্ভব হয়। ইমারজেন্সি ব্রেক যদি ঠিকমত ব্যবহার করা নাহয় তাহলে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সবশেষে একটি বড় প্রশ্ন রয়ে যায় যে , একটি ইমারজেন্সি ব্রেক কি সার্ভিস ব্রেক ফেইল হওয়ার পর নিরাপদ ব্রেক করতে পারবে ? ব্রেকের লিভারটি খুব দ্রুত উপরের দিকে না উঠিয়ে ধীরে ধীরে যদি ব্রেকের লিভারটি উপরের দিকে ওঠানো হয় তাহলে হয়তো গাড়িটি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এবং এভাবেই সার্ভিস ফেইলিওর হওয়ার পরও ইমারজেন্সি ব্রেক নিরাপদ ব্রেক করতে পারবে।