প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

যাত্রাপথে মোশন সিকনেস থেকে রক্ষা পেতে মেনে চলুন ৭টি টিপস

আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা যানবাহনে চড়লেই অসুস্থতা বোধ করেন। এরা গাড়িতে উঠলেই মোশন সিকনেসে আক্রান্ত হোন। যার ফলে তাদের মাথা ঘুরে, প্রকট বমি বমি ভাব কিংবা বমি হয়। আর এই সমস্যা মোশন সিকনেস বা গতি অসুস্থতা নামে পরিচিত। এই সমস্যায় আক্রান্তরা প্রায় সময়ই দীর্ঘযাত্রার ভ্রমণে যেতে সংশয় বোধ করেন। তবে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করলে এই গতি অসুস্থতা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়। যাত্রাপথের বিড়ম্বনা মোশন সিকনেসকে পাশ কাটিয়ে আপনার ভ্রমণযাত্রাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে দেখে নিন ৭টি টিপস।

মোশন সিকনেস বা গতি অসুস্থতা

যেকোন ধরণের যানবাহনে ভ্রমণ করলেই যখন বমি বা বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা কিংবা মাথা ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়, সেটাই মূলত মোশন সিকনেস বা গতি অসুস্থতা। আমাদের ভিশন সিস্টেম যখন মস্তিষ্কে মিশ্র সংকেত পাঠায়, তখন সেই অবস্থাটাকে সেনসোরি মিসম্যাচ বলা হয়। আর মূলত সেনসোরি মিসম্যাচের কারণেই এই সমস্যার উৎপত্তি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আমরা যখন যানবাহনের পেছনের  সিটে বসি তখনই এই সমস্যাটি তৈরি হয়। সেসময় মনে হয় যে গাড়িটার গতি অনেক বেশি বেড়ে গেছে, কিন্তু আমাদের চোখের সামনের আসনটা তখন গতিহীন, নিশ্চুপ, অসার অবস্থায় থাকে। আমরা তখন এই গতিময় অবস্থা অনুভব করতে পারি কিন্তু আমাদের চোখ তা দেখতে পায় না। ফলে ভিশন সিস্টেম তখন বিভ্রান্ত হয়ে মস্তিষ্কে মিশ্র সংকেত পাঠায়। আর গতি এবং জড়তার সঙ্গতিপূর্ণ অবস্থানের ফলে মস্তিষ্কে যে সমন্বয়হীনতা ঘটে, তার কারণেই এই সমস্যাটির সূত্রপাত ঘটে।

আসুন সাতটি টিপস জেনে নিই, যা যাত্রাপথের বিড়ম্বনাময় মোশন সিকনেস প্রতিরোধে সাহায্য করবে:  

গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো

যারা ভ্রমনকালীন সময়ে মোশন সিকনেসে আক্রান্ত হোন। তারা গাড়িতে চড়লে জানালার বাইরের নৈসর্গিক প্রকৃতির দিকে নিমগ্ন হতে চেষ্টা করুন। তাতে প্রকৃতির অপরূপ শোভা উপভোগের পাশাপাশি আপনি সুস্থও থাকতে পারবেন। তাই অনেকক্ষণ যাবত সামনের আসনের দিকে তাকিয়ে না থেকে বরং বাইরের দিকে তাকান। এতে গাড়ির গতির সঙ্গে সঙ্গে বাইরের সবকিছুকেই চলমান মনে হবে। ফলে তখন আর ভিশন সিস্টেম মস্তিষ্কে ভুল সংকেত পাঠাতে পারবে না। তবে আপনি যদি অনেকক্ষণ ধরে ল্যাপটপ, মোবাইল কিংবা বইয়ের দিকে একটানা তাকিয়ে থাকেন, তাহলেও কিন্তু গতি অসুস্থতায় পড়তে পারেন।

গাড়ির ভিতরের গন্ধ দূর করুন

আপনার গাড়ির ভিতরে যদি উৎকট ধরণের গন্ধ থাকে, তাহলেও কিন্তু বমি হতে পারে। তাই গাড়ির ভিতরের দুর্গন্ধ দূর করতে ভালমানের এয়ারফ্রেশনার ইউজ করুন। গাড়ির ভেতরকার দুর্গন্ধ কেটে যাওয়ার জন্য এসি অন করে রাখতে পারেন। এছাড়াও গাড়ির সিটের নিচে কয়েকটি ন্যাপথলিন রেখে দিতে পারেন। এর ফলে গাড়ির ভেতরকার বাজে গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

যাত্রাপথে কিছুক্ষণ বিরতি নিন

ব্যক্তিগত গাড়িতে করে যখন দূরপাল্লার ভ্রমণে যাবেন। তখন যদি যাত্রাপথে বমি বমি ভাব বা খারাপ লাগা কাজ করে, তবে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নিতে পারেন। আপনার হাতে সময় থাকলে নিরাপদ কোন স্থানে গাড়ি থামিয়ে একটু ঘোরাফেরা করতে পারেন। অন্তত কিছুক্ষণ খোলা বাতাসে থাকলে দেখবেন অনেকখানি সুস্থবোধ করছেন।

বুঝেশুনে খাওয়াদাওয়া করুন

অতিরিক্ত ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার মোশন সিকনেসকে বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং ভ্রমণের সময় তেল-মশলাযুক্ত ভারী খাবার এড়িয়ে চলাই উত্তম। ক্র্যাকারস জাতীয় বা অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার পেটকে প্রশমিত করতে পারে, যা বমি বমি ভাব এবং বমি কমিয়ে ফেলতে পারে। আর তাই ভ্রমণকালীন সময়ে এসব খাবার খেতে চেষ্টা করুন। এছাড়াও বাইরের যেকোন পানীয় কিংবা কোল ড্রিংকস, কৃত্রিম জুস ইত্যাদি পানে একটু সতর্ক হওয়ার দরকার আছে। ভ্রমণের সময় সাথে বিশুদ্ধ ফুটানো পানি, গ্লুকোজ কিংবা আদা বা লেবু চা সাথে রাখতে পারেন। এছাড়াও ধূমপান আপনার মোশন সিকনেসের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, সুতরাং ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।

যেসব খাবারে মোশন সিকনেস প্রতিরোধ হয়

আপনার অস্বস্তিকর পেটকে শান্ত করতে আদা বা আদার তৈরি খাবার অনেক বেশি শক্তিশালী। কয়েক টুকরো শুকনো আদা কাটা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে সংরক্ষণ করুন। ভ্রমণকালীন সময় যখনি অসুস্থতার লক্ষণগুলি অনুভব করবেন, তখনি তা ধীরে ধীরে চিবুতে থাকুন। এবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছোট তাজা লেবুর রস ভ্রমণকালে আপনার বমি বমি ভাব এবং বমি রোধ করতে পারে। সুতরাং সাথে ছোট ছোট তাজা লেবু রাখতে পারেন। এছাড়াও পুদিনাপাতা গ্যাস্ট্রিক জনিত বমি বমি ভাব দূর করতে দারুণ কাজ করে।  তাই সাথে পরিষ্কার পুদিনা পাতা রাখুন এবং বমি বমি ভাব হলেই তা মুখে দিয়ে চিবুতে থাকুন।

মনকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করুন

দীর্ঘযাত্রার ভ্রমণে মোশন সিকনেস যখন একটি তিক্ত সমস্যা হিসেবে ধরা দিচ্ছে। তখন এই সমস্যাকে ভুলে গিয়ে মনকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করুন। গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিতে থাকুন। এছাড়াও আকুপ্রেশার পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন। এই আকুপ্রেশার পদ্ধতিতে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট ব্যবহার করে অসুস্থতার লক্ষণগুলো কমানো যায়। আকুপ্রেশার পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে মার্কেটে কিছু রেডিমেট ব্রেসলেটও পাওয়া যায়। এই ব্রেসলেটগুলি কব্জিতে একটি চাপের প্রয়োগ করে কাজ করে, যা বমি বমি ভাব বন্ধ করে দেয়।

ঘুমিয়ে পড়তে চেষ্টা করুন

যাত্রাপথে মোশন সিকনেসে আক্রান্ত হয়ে, খারাপ লাগা কাজ করলে ঘুমিয়ে পড়তে চেষ্টা করুন। আর ঘুম না আসলে, চোখ বন্ধ করে গান শুনতে বা চুপচাপ শুয়ে থাকতে পারেন। তবে যাদের খুব বেশি সমস্যা হয়, তারা এই অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে গাড়িতে উঠার আগেই বমির ট্যাবলেট খেয়ে নিতে পারেন। তবে যে ওষুধই খান না কেন, তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

প্রয়োজনের তাগিদে যখন দূরপাল্লার ভ্রমণে যেতেই হয়, তখন এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে সমাধানের চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়াও আপনার দূরপাল্লার যাত্রাকে নিরাপদ করতে এবং প্রিয় গাড়িটি সুরক্ষিত রাখতে ভেইকেল ট্র্যাকারের সাহায্য নিতে পারেন। একটুখানি আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, আপনাকে যেকোন ক্ষতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেবে। সুতরাং আপনার সুবিবেচনার মাধ্যমে নিজের এবং সবার মঙ্গল নিশ্চিত করতে, সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিতে সবসময় একধাপ এগিয়ে থাকুন। আপনার যাত্রাপথের সব ধরণের বিড়ম্বনা দূর হয়ে, ভ্রমণ হোক স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং নিরাপদ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top