প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 5 মিনিট

একজন লাতু ড্রাইভার এবং আদর্শ চালকের মানবীয় গুণাবলীর কথকতা!

প্রত্যেক মানুষই আলাদা আলাদা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যয়ের অধিকারী! মানবীয় বিকাশের স্বতন্ত্র ধারায় কেউ কেউ হয়ে উঠেন অনন্য! আর তেমনি একজন মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর গ্রামের গাড়িচালক আবুল হোসেন। ষাট বছর বয়সী এই মানুষটা পরিচিত ছিলেন লাতু ড্রাইভার নামে। এই মহৎ মানুষটি নিজের অমূল্য জীবন দিয়ে বাঁচিয়েছেন অনেকগুলো প্রাণ! আজকের সময়ে যখন কিছু অসাধু মানুষের কীর্তিকলাপ শুনে শুনে, আমরা একতরফা ভাবে সবাইকেই খারাপ ভাবতে শুরু করি। ঠিক তখনি লাতু ড্রাইভারের মতো মহৎ মানুষেরা জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দেন মনুষ্যত্ব আজও বিরাজমান! এই ধরণীর বুকে এখনো মহৎ মনের আত্মত্যাগী মানুষের দেখা মেলে!

আসুন মূল ঘটনাটা জেনে নেওয়া যাক। গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রামের বত্রিশ জন ব্যবসায়ী সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস ভাড়া করেন। তারা ঈদের বাজারের জন্য পাইকারি কাপড় কিনতে নরসিংদী যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দাউদপুর সেতু এলাকাতে অকস্মাৎ একদল ডাকাত হামলা করে বসে! তখন ডাকাতের আক্রমণ থেকে বাস যাত্রীদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান আবুল হোসেন ওরফে লাতু ড্রাইভার। আর তার যোগ্য শিষ্য হুমায়ূন কবীর বাস চালিয়ে নিরাপদে স্থানে নিয়ে যান। মূলত গাড়িচালক আবুল হোসেনের আত্মত্যাগ এবং তার হেলপার হুমায়ূন কবীরের সাহসিকতার দরুন বেঁচে যায় ৩২ জন যাত্রীর প্রাণ!

লাতু ড্রাইভার

ভাল-মন্দের মিশেলেই এই জগত গড়া আর মানব চরিত্রের তো হরেক রূপ! তবে আজকের পৃথিবীতে আজও লাতু ড্রাইভার এবং হুমায়ূন কবীরের মতো আদর্শবান সাহসী মানুষ আছেন বলেই, আজও আমরা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারি। নিত্যদিনকার চলাচলের জন্য যানবাহন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে নিয়ে চলা মানুষগুলোও আমাদের জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মূলত তাদের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের জন্যই আজকের লেখা। আসুন দেখে নিই একজন আদর্শ ড্রাইভার বা গাড়ি চালক যেসব মানবীয় গুণে গুণান্বিত থাকেন।

সততা বা নৈতিকতা মেনে চলেন

প্রত্যেক মানুষেরই তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে সৎ এবং নৈতিক গুণাবলীর অধিকারী হওয়া উচিত। আপনি অন্যদের থেকে আলাদা এবং আপনার সতত আলোর ধারায় আলোকিত চারপাশ, তা আপনার কর্মের মাঝেই বিকাশমান। একজন সৎ গাড়ি চালক কখনোই অসৎ কর্মের মাঝে জড়িয়ে পড়েন না। নিজের কাজে ফাঁকি দেন না কিংবা নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে, সেই ধরণের কোন কাজ করেন না। তিনি তার সততা আর মহানুভবতার মাধ্যমে সকলের মন জয় করে নেন।

সবসময় সচেতন থাকেন

সচেতন নাগরিক হিসেবে সবারই মনে রাখা উচিত, মাদক দ্রব্য গ্রহণ কিংবা বহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আর গাড়ি চালানোর সময় মাদক গ্রহণ করলে, তা অনেকাংশেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। একজন আদর্শ গাড়ি চালক কখনোই মাদক গ্রহণ করে ড্রাইভ করেন না। ড্রাইভিংয়ের সময় মনোযোগের বিঘ্ন ঘটতে পারে তেমন টাইপের যেকোন কাজ তিনি পরিহার করে চলেন। যেমন ধরুন-ধূমপান করা, খাওয়া-দাওয়া করা, এমনকি অযথা গল্প গুজব করা থেকেও বিরত থাকতে চেষ্টা করেন। তার কাছে নিজের এবং অন্যদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আর তাইতো তিনি সবসময় সচেতনতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করতে সচেষ্ট থাকেন।

অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন

আদর্শ মানুষের উচিত নারী-পুরুষ ভেদে সবার প্রতি সমান শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা। সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখে ভদ্রতাসুলভ আচরণ করা। একজন আদর্শ ড্রাইভার তার গাড়ির যাত্রীদের সাথে ভাল আচরণ করে থাকেন। মূলত তিনি বিনয়ী চরিত্রের অধিকারী হয়ে থাকেন। তিনি নিজের কাজকে যেমন ভালবাসেন, তেমনি অন্যের কাজের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকেন। নিজের কোন কাজে ভুল হয়ে গেলে, তা স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। তিনি জানেন ভুল স্বীকার করলেই কেউ ছোট হয়ে যায় না। তিনি কৃতজ্ঞ চিত্তে অন্যের সেবায় নিজের কষ্ট হাসিমুখে বরণ করে নেন।

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল  

একজন আদর্শ ড্রাইভার সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন। তিনি সব সময় ট্র্যাফিক রুলস মেনে চলেন এবং অন্যদেরকেও তা মেনে চলার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। মূলত একজন বিজ্ঞ ড্রাইভার নিজ কাজে দক্ষ হয়েই গাড়ি নিয়ে রাস্থায় নামেন। তিনি ভালভাবে ড্রাইভিং শিখে, আইন-কানুন জেনে বুঝে নিয়ে তবেই স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখেন। তিনি নিজের এবং অন্যদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত থাকেন। তিনি জানেন এবং মানেন জীবনের মূল্য অসীম, আর কোন কিছু দিয়েই তার বিনিময় কিংবা ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়!

অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ান

আমাদের সবারই উচিত অন্যের বিপদের সময় এগিয়ে যাওয়া এবং পাশে দাঁড়ানো। মূলত একজন আদর্শ ড্রাইভার সবসময় সবার নিরাপত্তার দিকটা বিবেচনা করেই গাড়ি চালান এবং যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেন। এছাড়াও কোন নারী, শিশু কিংবা বয়স্ক কাউকে বিপদে অথবা কোন ধরণের সমস্যায় পড়তে দেখলে সাহায্য করতে এগিয়ে যান। একজন মানবিক বোধ সম্পন্ন চালক কখনোই কোন নারী যাত্রীর সাথে অশোভন আচরণ সমর্থন করেন না, বরং তাদের হেনস্থার স্বীকার হওয়া থেকে রক্ষা করেন। আর সবসময় সাহসী হয়ে যেকোন টাইপের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে থাকেন।

ক্ষিপ্ত আচরণ সমর্থন করেন না

আদর্শ মানুষেরা নিজের কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। সেক্ষেত্রে কর্তব্য সচেতন গাড়ি চালক নিজের কাজে ফাঁকি কিংবা অসততার আশ্রয় নেন না। তিনি গাড়ির সঠিক যত্ন, রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজগুলোও ঠিকমতো করতে চেষ্টা করেন। আর গাড়ির মালিক কখনো কোন ধরণের বিরূপ ধারণার বহিঃপ্রকাশ করলে, তিনি তাকে তার কাজের মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত করেন। ক্ষেত্র বিশেষে কখনো কোন সমস্যা বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ঝগড়াঝাঁটি করেন না। বরং এক্ষেত্রে নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। ফলে এতে তাদের মাঝে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটা যেমন অটুট থাকে, তেমনি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রটাও তৈরি হয়ে যায়। আর তখন তিনি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গাড়ি চালকই নন বরং পরিবারের একজন গুরত্বপূর্ণ সদস্যই হয়ে যান।

অসাধু পন্থা অনুসরণ করেন না

একজন আদর্শ ড্রাইভার ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে সব ধরণের দক্ষতা অর্জন করতে চেষ্টা করেন। তিনি সব সময় ফিটনেস ঠিক থাকা গাড়ি চালাতে স্বস্তিবোধ করেন। তার কাছে সবসময় ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য জরুরী কাগজপত্রও সংরক্ষিত থাকে। তিনি কোনরূপ অসাধু পন্থা অনুসরণ করেন না এবং কাউকে ধোঁকাও দেন না। তার কর্ম গুণ, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং ভাল আচরণের মাধ্যমেই তিনি নিজের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটান।

লাতু ড্রাইভার কিংবা হুমায়ূন কবীরের মতো মহৎ মনের মানুষরা নিজের জীবনের পরোয়া না করে, নিরাপদে ঘরে পোঁছে দেন অনেক প্রাণ! তাদের মতো মহৎ মনের আদর্শ গাড়ি চালকরা নিজ নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। সবার উচিত তাদের কর্তব্য নিষ্ঠা, সততা আর মহানুভবতার প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল থাকা। একজন আদর্শ মানুষ হিসেব তারা যেন যথাযথ সম্মান এবং সঠিক মূল্যায়ন পান তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একজন গাড়ির মালিকের উচিত তাদের নিজ পরিবারের সদস্য মেনে, সেভাবে ভাল আচার-আচরণ করা, সব ধরণের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। আর সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করলে…গাড়িতে ভিটিএস প্রযুক্তির ব্যবহার গাড়িকে যেমন সুরক্ষিত রাখে, তেমনি ড্রাইভারকেও নিরাপদে রাখতে সাহায্য করে! দেশীয় প্রযুক্তির অপার আশীর্বাদ প্রহরী ভিটিএসের প্যানিক বাটন ফিচারটি ড্রাইভারের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে! আমাদের যার যার মূল্যবোধের জায়গায় অটুট থেকে, আসুন আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি একটি অন্যরকম বাংলাদেশ! শুভকামনা রইল নিরাপদে থাকুক সকল গাড়ি চালকগণ এবং নিরাপদে রাখুক সবাইকে।

(তথ্যসূত্র এবং ছবিঃ প্রথম আলো)

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top