প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

how-to-get-driving-licence-in-bangladesh
পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম

ঢাকার তীব্র যানজট পার হয়ে গন্তব্যে সহজেই পৌছানোর উদ্দেশ্যে বর্তমান সময়ে গাড়ি ক্রয়ের হার অনেক বেড়েছে। আর একই সময়ে সরকার ড্রাইভিং লাইসেন্সের উপর বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারের লাইসেন্স আছে কি না তা চেক করা হয়। তাই বলাই যায়, বর্তমান সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি বা বাইক নিয়ে বের হওয়া মোটেও ভালো সিদ্ধান্ত নয়। আপনার যদি এখনো ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকে তাহলে যতো দ্রুত সম্ভব আবেদন করে ফেলা দরকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন প্রক্রিয়া কি ও কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে। তাই, আজকের লেখায় এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানবো।

গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদনের পূর্বশর্ত

  • স্থায়ী লাইসেন্স পাওয়ার আগেই আপনার লার্নার লাইসেন্স থাকতে হবে। 
  • আপনার অন্তত ৮ম শ্রেণী পাশ হতে হবে। অর্থাৎ, আপনার জেএসসি সার্টিফিকেট থাকতে হবে। 
  • আপনাকে শারীরিক ও মানসিক উভয় সুস্থ থাকতে হবে। 
  • আপনার যদি অপেশাদার লাইসেন্স প্রয়োজন হয় তাহলে আপনার ন্যূনতম ১৮ বছর এবং যদি পেশাদার লাইসেন্স প্রয়োজন তাহলে আপনার ন্যূনতম ২১ বছর বয়স হতে হবে।

গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু

আবেদন প্রক্রিয়ার শুরুতেই আপনাকে লার্নার লাইসেন্স নিয়ে নিতে হবে। লার্নার লাইসেন্স হচ্ছে এমন একটি পত্র যার মাধ্যমে বোঝা যাবে যে আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছেন এবং পরীক্ষার আগে পর্যন্ত আপনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।

লার্নার লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া

লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটিই বাংলাদেশ সরকারের অবদানে এখন অনলাইনে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। আপনার যদি ইন্টারনেটের ব্যবহারিক জ্ঞান থাকে তাহলে আপনি নিজেই এই আবেদন করতে পারবেন। আর যদি না থাকে তাহলে কোনো দোকান থেকে করে নিতে পারবেন। এর জন্য বিআরটিএ অফিসে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। লার্নার লাইসেন্স পেতে যা করবেন –

১। প্রথমেই BRTA এই লিংকে গিয়ে আপনার মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এমন একটি নাম্বার দিবেন যা মোটামুটি সবসময়ই আপনার সাথে থাকে। 

২। তারপর লগইন করে ভেতরে প্রবেশ করলেই আপনি লার্নার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার অপশন দেখতে পাবেন। 

৩। আবেদনের অপশনে ক্লিক করলে আপনাকে একটি ফর্ম দেখানো হবে। সেই ফর্মটি সকল সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। বার বার চেক করে নিবেন যাতে কোনো তথ্যে ভূল না হয়, নইলে আপনার লাইসেন্সেও উল আসবে।

৪। পরের ধাপে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সফটকপিগুলো নির্ধারিত স্থানে (অনলাইনে) জমা দিতে হবে। যা যা লাগবে – 

  •  আবেদনকারীর ছবি [ছবির সর্বোচ্চ সাইজ ১৫০ কিলোবাইট এবং ৩০০ x ৩০০ পিক্সেল]
  • রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (সাইজ সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোবাইট)। 
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যানড কপি (সাইজ সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোবাইট)
  • ইউটিলিটি বিলের স্ক্যানড কপি (সাইজ সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোবাইট), [ আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় তবে বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল সংযুক্ত করতে হবে ]
  • পূর্ববর্তী ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্ক্যানড কপি। এটি শুধুমাত্র ড্রাইভিং লাইসেন্সের নবায়ন/শ্রেণী পরিবর্তন/শ্রেণী সংযোজন/ লাইসেন্সের ধরণ পরিবর্তণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রথম আবেদন হলে এটি লাগবে না। ( সাইজ সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোবাইট)

মনে রাখবেন, অনলাইনে আবেদন করার সময় মিথ্যা তথ্য প্রদান করা হলে তার লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাই কোনোভাবেই এরুপ কাজ করা যাবে না।

৫। তারপর আপনাকে অনলাইন পেমেন্ট পোর্টালের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। আপনি যদি একটিমাত্র ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে চান তাহলে ৩৪৫ টাকা এবং যদি দুইটি ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে চান তাহলে ৫১৮ টাকা পরিশোধ করতে হবে। 

টাকা পরিশোধ করার সাথে সাথেই আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং আপনি আপনার লার্নার লাইসেন্সটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। লার্নার লাইসেন্স প্রদানের সাধারণত ২ থেকে ৩ মাস পর আপনার মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। উক্ত তারিখে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং লিখিত পরীক্ষা দেয়ার জন্য কলম নিয়ে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে।

পরীক্ষার তারিখ আসার পর

পরীক্ষার তারিখ আসার পর আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, লার্নার লাইসেন্সের মূল কপি এবং কলম নিয়ে যথাসময়ে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে আপনাকে যথাক্রমে লিখিত, মৌখিত ও ফিল্ড টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে। আপনি যদি কোনো একটি পরীক্ষাতেও অকৃতকার্য হয়ে যান তাহলে আর লাইসেন্স পাবেন না। সবগুলো পরীক্ষাতে এক এক করে আপনাকে পাশ করতে হবে। লিখিতি পরীক্ষায় সাধারণত পাশ করার জন্য ৬০% মার্ক অর্জন করতে হয়।

স্মার্টকার্ডের জন্য আবেদন

পরীক্ষাগুলো উত্তীর্ণ হলে আপনাকে আরেকটি ফর্ম দেয়া হবে। সেই ফর্ম পূরণ করে এবং সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আপনাকে স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে আপনাকে ব্যাংকে (পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ১৬৭৯ টাকা এবং অপেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ২৫৪২ টাকা) জমা দিতে হবে। স্মার্ট কার্ড তৈরি হয়ে গেলে আপনার নাম্বারে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।

স্মার্টকার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র –

  • আবেদন ফর্ম।
  • মেডিকাল সার্টিফিকেট।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • আপনি যদি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে থাকেন তবে পুলিশি তদন্তের প্রতিবেদন।
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি ১ কপি। 
  • নির্ধারিত ফি জমা দেয়ার ব্যাংক রশিদ।

কোন ধরণের পেশাদার লাইসেন্সের আবেদন করতে পারবেন?

  • ২৫০০ কেজির নিচের ওজনের গাড়ির হালকা পেশাদার লাইসেন্সের আবেদন করতে আপনার বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে। 
  • ২৫০০ কেজি থেকে ৬৫০০ কেজি ওজনের গাড়ির মধ্যম পেশাদার লাইসেন্সের আবেদন করতে আপনার বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে এবং আপনার হালকা পেশাদার লাইসেন্সের বয়স কমপক্ষে ৩ বছর হতে হবে। 
  • ৬৫০০ কেজির বেশি ওজনের গাড়ির ভারি পেশাদার লাইসেন্সের আবেদন করতে আপনার বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে এবং আপনার মধ্যম পেশাদার লাইসেন্সের বয়স কমপক্ষে ৩ বছর হতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার প্রক্রিয়া

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে চাইলে আপনাকে প্রয়োজনীয় ফি ও কাগজপত্র জমা দিয়ে বিআরটিএ’র নির্ধারিত সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ১৫৬৫ টাকা এবং অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য ২৪২৭ টাকা (যদি মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মাঝে আবেদন করেন) জমা দিতে হবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর ২৩০ টাকা করে জরিমানাসহ ফি জমা দিতে হবে।

লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র –

  • আবেদন ফর্ম
  • রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
  • ব্যাংক রশিদ
  • পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন
  • সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট এবং ১ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের যথাযথ প্রক্রিয়া না জানার কারণেই বেশিরভাগ মানুষ প্রচুর পরিমাণে টাকা খরচ করে দালালদের মাধ্যমে লাইসেন্স করিয়ে থাকে। তবে বর্তমানে এই বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ নেয়া হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষদেরও উচিত, দালালদের পরিহার করি এবং সঠিক পদ্ধতি জেনে নিজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর আবেদন করা।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top