প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 3 মিনিট

পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড কারের আদ্যোপান্ত!

সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পরিবেশ বান্ধব গাড়ি হিসেবে হাইব্রিড কারের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বৃদ্ধিজনিত উদ্বেগের সাথে সাথে বিশ্বে এই গাড়ির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মূলত ১৯৯১ সালে ফার্ডিন্যান্ড পোরসে প্রথম হাইব্রিড প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। হাইব্রিড প্রযুক্তি হল একাধিক পদ্ধতির সমন্বিত অবস্থান। এক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিতে তৈরি গাড়ি বিভিন্ন ধরণের জ্বালানী ব্যবহার করে চলতে পারে। ১৯৯৭ সালের আগে জাপানিজ, জার্মান এবং আমেরিকান কোম্পানিগুলো এই প্রযুক্তির অল্পকিছু গাড়ি মার্কেটে আনেন।

হাইব্রিড কার

হাইব্রিড-ইলেকট্রিক যানবাহন বা HEVs যা পেট্রল এবং বিদ্যুৎ উভয় দ্বারা চালিত। হাইব্রিডগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি শক্তিশালী উৎস হিসাবে গ্যাসোলিন ব্যবহার করা হয়। যার ফলে কম নির্গমন এবং গ্যাস মাইলেজ তৈরি হয়। এসব গাড়িতে ডিজেল ও পেট্রোলের পাশাপাশি একাধিক ইলেকট্রিক মোটর এবং ব্যাটারির সংযোগ দেয়া থাকে। এই গাড়ির একটি বিশেষ দিক হল এটি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং বিকল্প জ্বালানীর মাঝে সমন্বয় করতে পারে। ফলে এই কারগুলো  বিদ্যুৎ ও ফুয়েলের সংমিশ্রণে চলতে পারে। আর এই হাইব্রিড কারগুলোর জ্বালানী খরচও অন্যান্য টাইপের গাড়ির তুলনায় অনেক কম।

হাইব্রিড কার যেভাবে কাজ করে

হাইব্রিড গাড়িতে দুই টাইপের মোটর ব্যবস্থা আছে। একটি হল পেট্রল চালিত ইঞ্জিন এবং অন্যটি বৈদ্যুতিক মোটর। বেশিরভাগ সময়ে হাইব্রিড কারগুলি কেবলমাত্র তাদের পেট্রল ইঞ্জিনে চালিত হয়। যখন অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন হয়, তখন বৈদ্যুতিক মোটর পেট্রল ইঞ্জিনকে সাহায্য করতে পারে। রিজেনারেটিভ ব্রেকিং প্রযুক্তির সুবাদে হাইব্রিড কারের বৈদ্যুতিক মোটর চালু রাখতে  বাইরে থেকে কোন প্রকার চার্জ করার দরকার নেই। এক্ষেত্রে গাড়ির ব্যাটারি  ইঞ্জিন এবং ব্রেকিং মেকানিজমের যান্ত্রিক ঘর্ষণ থেকেই ব্যবহারকৃত বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করতে পারে। গাড়ি চলার সময়ই রিজেনারেটিভ সিস্টেমে ব্যাটারিতে বৈদ্যুতিক চার্জ উৎপন্ন হয়।

মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া… 

এই গাড়ি মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে তেমন ঝামেলা ও খরচ নেই। হাইব্রিড কার কম মেরামত করার দরকার পড়ে। অধিকাংশ গাড়ির ক্ষেত্রে তেমন বিশেষ কোন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা নিতে হয় না। তবে চিন্তার বিষয় হল আমাদের দেশে সেভাবে হাইব্রিড গাড়ির জন্য সার্ভিস সেন্টার গড়ে উঠেনি। এবং অনেক মেকানিক এই গাড়ির প্রযুক্তির বিষয়ে তেমন ভালভাবে অবগত নয়।

হাইব্রিড কারের ইতিবাচক দিকগুলো

পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড গাড়ির মাইলেজ অন্যান্য পেট্রোল গাড়ি থেকে বেশি হয়ে থাকে। যেহেতু এই টাইপের গাড়ি জ্বালানি চালিত ইঞ্জিন এবং বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন উভয়ই মাধ্যমেই চলে। হাইব্রিড ব্যাটারিগুলি প্রচলিত যানবাহনগুলির তুলনায় অনেক বেশি ভোল্টেজে কাজ করে। এর ফলেও ভাল মাইলেজ পাওয়া যায়। এছাড়াও হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারি নিজ থেকেই চার্জ হয়। এবং জ্বালানী শেষ হলেও ব্যাটারির সাহায্যে গাড়ি চলে। এমনকি ট্র্যাফিক জ্যামে পড়লে এই কার ব্যাটারিতে সংরক্ষিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে। এই বড় ব্যাটারিগুলোর কারণে গাড়িগুলো আরও বেশি জ্বালানী দক্ষতা অর্জন করে থাকে। এই ব্যাটারিগুলো সাধারণত নিকেল বা লিথিয়াম দ্বারা তৈরি করা হয়। যা পরিবেশের উপর কোন বিরূপ প্রভাব ফেলে না। এছাড়াও এই হাইব্রিড কারগুলো ড্রাইভার এবং যাত্রীদের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ।

হাইব্রিড কারের নেতিবাচক দিকগুলো

পরিবেশের জন্য হাইব্রিড গাড়ির অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর অল্পকিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এই কারের ব্যাটারিগুলো সাধারণত নিকেল বা লিথিয়ামের তৈরি হয়। আর ‘হাইব্রিডকারস ডটকম’ অনুযায়ী, নিকেলকে একটি সম্ভাব্য কার্সিনোজেন বলে মনে করা হয়। এবং এক্ষেত্রে নিকেল খনির বিষয়ে পরিবেশগত উদ্বেগ রয়েছে। হাইব্রিড ব্যাটারিগুলো প্রচলিত যানবাহনগুলির তুলনায় অনেক বেশি ভোল্টেজে কাজ করে, বিশেষত এটি দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎতের ঝুঁকি বাড়ায়। আর হাইব্রিড গাড়িগুলি অত্যন্ত নির্জীব ধরণের হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রচলিত যানবাহনের তুলনায় হাইব্রিড কারগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল।

বাংলাদেশে হাইব্রিড কার… 

বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে স্বল্প পরিমাণে হাইব্রিড কারের আমদানি করা হয়েছে। এদেশের গাড়ির মার্কেটে প্রথম আসা হাইব্রিড কার হল টয়োটা কোম্পানির ‘প্রিয়াস’। পরবর্তীতে সেডানসহ আরও অন্যান্য কোম্পানির হাইব্রিড কারও এসেছে। তবে গাড়ির ক্রয়মূল্য এবং শুল্ক অনেক বেশি থাকায় আমদানি এবং প্রচার-প্রসার তেমন বাড়েনি। সম্প্রতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে এই গাড়ির দাম কমাতে এ খাতে আরোপিত  শুল্ক কমিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাজেটে নিম্ন সিসির হাইব্রিড মোটর গাড়ি (১৬০০ থেকে ১৮০০ সিসি পর্যন্ত) আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে এবং জ্বালানি ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে এই হাইব্রিড কারের তুলনা নেই। আমাদের দেশের অবকাঠামোগত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য করতে পারলে, এই পরিবেশ বান্ধব গাড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top