প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 5 মিনিট

ভয়াবহ ১০ রাস্তা! GPS Tracker ছাড়া এমন রাস্তায় ভ্রমণ করতেন কি?

সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় ১৩ লক্ষ লোকের জীবনাবসান ঘটে-পরিসংখ্যান ঘাঁটলে এমন তথ্যই বের হয়ে আসে। এসব দুর্ঘটনা সব সময় যে শুধু চালকের অদক্ষতায় ঘটে তা নয়, বরং কখনো কখনো রাস্তার কারণেও হয়। এমন অনেক রাস্তা আছে, যেগুলোতে ড্রাইভিং করতে গেলে গাড়িতে GPS Tracker থাকা অতি আবশ্যক, নয়তো দুর্ঘটনায় পড়লে সহজে হদিস পাওয়া সম্ভব নয়। আজ এরকম দশটি বিপজ্জনক রাস্তার কথা বলব, যেগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটে শুধুমাত্র রাস্তার ভয়াবহতার কারণেই।

. Jalalabad-Kabul Road, Afghanistan:

আফগানিস্তানের কাবুল এবং জালালাবাদ শহরের মধ্যবর্তী এই রাস্তাটিকে বিশ্বের এক নম্বর বিপজ্জনক রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মৃত্যুহারের দিক থেকে এই রাস্তার রেটিং ১০-এ ৯! রাস্তাটি আফগান অঞ্চলে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের একটা প্রধান অংশ। তালিবান অঞ্চলের কাবুল নদীর পাশ ঘেঁষে চলে যাওয়া দুই লেনের রাস্তাটি ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, এবং উঠে গেছে খাড়া পাহাড়ের ঢাল বেয়ে প্রায় ৬০০ ফুট ওপরে। রাস্তার কিছু অংশ প্রায়ই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য।

 

. The Yungas Road, Bolivia:

বলিভিয়ার ইয়ুঙ্গাস রোডের আরেকটি নামই হল- ‘ডেথ রোড’। ১৯৩০ সালে Chako War-এর সময় প্যারাগুয়ের বন্দীরা রাস্তাটি নির্মাণ করে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটির উন্নয়ন কাজ চলে। নতুন রুটের আওতায় ব্রিজ, ড্রেইনেজ সিস্টেম সবই আছে, তবু এটাকে সবচে’ বিপদসঙ্কুল রাস্তাগুলোর একটা বলা যায় সংকীর্ণতা এবং উচ্চতার কথা বিবেচনা করে। সংকীর্ণ রাস্তাটি প্রায় ২০০০ফুট উঁচুতে উঠে গেছে পাহাড়ের গা ঘেঁষে। বর্ষা এবং শীতের সময় রাস্তাটি অতিমাত্রায় কর্দমাক্ত এবং কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেক বেশি। গাড়িতে GPS Tracker  থাকলে এসব রাস্তায় চালকের গাড়ি চালাতে সুবিধা হয়।

. James Dalton Highway, Alaska:

এই রাস্তাটির পুরো নাম- ‘জেমস ডব্লিউ ডাল্টন হাইওয়ে’। আলাস্কান ইঞ্জিনিয়ার জন ডাল্টনের নামানুসারে রাস্তাটির নামকরণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে নির্মিত ৪১৪ মাইল দীর্ঘ এই রাস্তাটিকে বিবিসি’র একটি ডকুমেন্টারিতে সবচে’ বিপজ্জনক রাস্তাগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। রাস্তাটি ফায়ারব্যাংক শহরের উত্তর থেকে শুরু হয়ে আর্কটিক ওশেনের কাছাকাছি ডেডহর্স নামক শহরে গিয়ে শেষ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচে’ জনবিরল এই রাস্তাটিতে রাইডিং-এ গেলে বিপদ উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থার যোগাড়যন্ত্র করে তবেই যাওয়া উচিত। কারণ- ডেডহর্স আর ফায়ারব্যাংক শহর দুটি রাস্তার ঠিক এ-মাথা আর ও-মাথায়। রাস্তার মাঝামাঝিতে গিয়ে কোন হাসপাতাল, রেস্টুরেন্ট, গ্যাস স্টেশন কিংবা অন্য যে কোন প্রয়োজনীয় সার্ভিসের আশা করা একেবারেই বৃথা।

 

. Karakoram Highway, Pakistan:

পাকিস্তানের ন্যাশনাল হাইওয়ের অপর নামই কারাকোরাম হাইওয়ে। রাস্তাটি প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ; পাঞ্জাবের হাসান আবদেল থেকে শুরু করে গিলজিত-বালিস্তানের খুনজেরাব পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। খুনজেরাবের কাছাকাছি এটা চায়না বর্ডার ক্রস করে গেছে। ১৯৫৯ সালে চীন এবং পাকিস্তান যৌথভাবে রাস্তাটি নির্মাণ করেছিল বলে এটাকে চীন-পাকিস্তান মৈত্রী হাইওয়েও বলা হয়। কারাকোরাম পর্বতমালার প্রায় ১৫,৪৬৬ ফুট ওপর দিয়ে চলে গেছে এই রাস্তাটি। এটি নির্মাণের সময়ই ২০০ চীনা এবং ৮০০ পাকিস্তানি কর্মী প্রাণ হারিয়েছিল শুধুমাত্র পিছলে পড়ে। মৃত্যুহারের দিক থেকে এই রাস্তা ১০-এ ৭.৫।

. The Zoji La, India:

ভারতের শ্রীনগর এবং লেহ-এর মাঝামাঝি তাদের ন্যাশনাল হাইওয়ের একটা অংশ হিসেবে আছে এই Zoji Pass বা Zoji La। এটিও পাহাড়ি রাস্তা, লাদাখকে ভারতের অন্য অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। শীতের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কেননা- পুরো রাস্তাই তখন তুষারাবৃত হয়ে পড়ে। বলে রাখা ভালো, হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাঞ্চলে পড়ে গেছে রাস্তাটি। আবার, রাস্তার কিনারে কোনরকমের বর্ডারও নেই, যার ফলে প্রায়ই এতে দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ি চালানোর দক্ষতা না থাকলে এবং গাড়িতে GPS Tracker না থাকলে এই রাস্তায় কোন ভেহিক্যাল ট্রাকিং-এ যেতে স্রেফ বারণ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, এটা একটা মৃত্যু-ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই না।

. Guoliang Tunnel in the Taihang Mountains, China:
গুওলিয়াং রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে চীনের হ্যান বংশের শাসনামলের একজন বিদ্রোহীর নামানুসারে। রাস্তাটি চীনের অন্য অঞ্চলগুলোর সঙ্গে গুওলিয়াং গ্রামকে সম্পৃক্ত করেছে। মাঝে মাঝেই এবড়ো-খেবড়ো পাথুরে পাহাড়ি গুহার মধ্য দিয়ে রাস্তাটি চলে গেছে। চালক সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ না করলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী এই রাস্তায়। গুওলিয়াং অঞ্চলের অধিবাসীরা বলে থাকে, “গুওলিয়াং রাস্তা ভুল সহ্য করে না।“

 

. The Widow-maker, United Kingdom:

ইংল্যান্ডের পিক ডিসট্রিক্ট-এর A537 রাস্তার অপর নাম উইডো মেকার। রাস্তাটি চেসশায়ারের মেসেলসফিল্ড থেকে ডারবিশায়ারের বাক্সটন পর্যন্ত বিস্তৃত। রাস্তাটির আরও একটি নাম আছে- “the Cat and Fiddle road” । তবে কেউ যদি বলে উইডো মেকার নামটি হয়েছে এর দুর্ঘটনা-প্রবণতার জন্য, অবাক হব না মোটেই। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এতে দুর্ঘটনার হার ১৫ থেকে ১২৭ পারসেন্ট হয়েছিল, ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে বেড়েছিল আরও ৩৪ পার্সেন্ট। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য রাস্তাটি বিখ্যাত।

. The coast roads, Croatia:

ক্রোয়েশিয়ার কোশটলাইনের রাস্তাগুলোতে এতো এতো পাহাড়ি আর বিপদসংকুল বাঁক আছে, চলাচলের জন্য সত্যিই যা ভয়াবহ। The Association for Safe International Road Travel সংস্থা ক্রোয়েশিয়ার কোস্ট রোডকে সবচে’ বিপজ্জনক রাস্তার তালিকাভুক্ত করেছে। দ্রুত গাড়ি চালনা এগুলোতে নিষিদ্ধ এবং বরাবরের মতোই উপদেশ দেয়া হয় গাড়িতে GPS Tracker  ব্যবহারের। মৃত্যুহারের রেটিং-এ এগুলো ১০-এ ৫ প্রাপ্ত।

 

. Los Caracoles Pass, Chile:

Los Caracoles Pass হল “The Paso Internacional Los Libertadores” এর অন্য আরেকটি নাম, যাকে আবার  Paso Del Cristo Redentor-ও বলা হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা একে “Los Caracoles” বা  “The snail’s Pass” বলে থাকে। কোন প্রকার বাউন্ডারি ছাড়াই পাহাড়ি এই রাস্তায় রয়েছে অসংখ্য বাঁক। ১৯৮০ সালে চিলি এবং আর্জেন্টিনার উদ্যোগে রাস্তাটি তৈরি হয়। সান্টিয়াগো থেকে মেন্ডোজার মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনায় ঢুকতে হলে এটাই একমাত্র রাস্তা। ফলে, প্রায়ই এতে হ্যাভি ট্রাফিক হয়ে থাকে, যা রাস্তাটিকে আরও ভয়ংকর করে তোলে।

১০. The Stelvio Pass, Italy:   

ইতালিয়ান নাম “Paso Dello Stelvio” পরিচিতি পেয়েছে ‘স্টেলভিও পাস’ হিসেবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ক্রমে প্রায় ২৭৫৭মিটার উঁচুতে উঠে গেছে ইতালির উত্তরাঞ্চলের এই রাস্তাটি। এটি ইতালির সাউথ টায়রল থেকে সন্দ্রিয় পর্যন্ত বিস্তৃত। রাস্তাটি এর উচ্চতা এবং সর্পিলাকার বাঁকের জন্য বিপজ্জনক রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত। প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিয়েই রাস্তাটিতে ড্রাইভিং-এ যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সে দেশের street organization। GPS Tracker ছাড়া একটি গাড়িতে করে এমন সব বিপদসংকুল রাস্তায় ভ্রমণ কত ভয়াবহ হতে পারে, তাই না? GPS Tracker সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, list25.com, YouTube

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top