প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

রাস্তার বিভিন্ন রকম ডিভাইডার লেন এর অর্থ জানেন তো!

আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগের কথা। তখন রাস্তার মাঝে আঁকা কোন ডিভাইডার লেন ছিল না। রাস্তার সোজা সামনের দিক বরাবর এবং নিয়ম অনুসরণ করে গাড়ি চালানোর নিয়ম তখনও এতটা উন্নত হয়নি। এমন একদিন জুন ম্যাকক্যারল নামের একজন ডাক্তার গাড়িতে করে তার কাজে যাচ্ছিলেন। আমেরিকান এই ডাক্তার হঠাত রাস্তার মোড় ঘুরতে গিয়ে দেখলেন একটা ট্রাক তার গাড়ির দিকে ছুটে আসছে। তিনি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। ট্রাকের আঘাত থেকে বাচার জন্য তৎক্ষণাৎ তিনি গাড়িটি নিয়ে রাস্তার পাশে বালুর একটা ঢিবিতে নিজের গাড়ি নিয়ে পড়ে গেলেন। প্রান হাতে পেয়ে ফিরে তিনি উপলব্ধি করলেন এমন একটা নিয়ম থাকা উচিৎ যাতে রাস্তায় এলোমেলো গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি রাস্তার মাঝে ডিভাইডার লেন আঁকার জন্য জোর দাবি করেন। তিনি তার প্রস্তাব চেম্বার অফ কমার্স এবং রিভারসাইড কান্ট্রি বোর্ডের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকায় নারী বৈষম্য ছিল অনেক বেশী। তার দাবি বা প্রস্তাব কোনটিই আমলে নেয়নি তখনকার বোর্ড কর্তারা। কিন্তু তিনি নিজে একজন ভুক্তভুগি হয়ে বুঝতে পেরেছিলেন রাস্তার মাঝে ডিভাইডার লেন খুব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে । তাই সরকারের আশা ছেড়ে দিয়ে নিজেই রঙ আর ব্রাশ নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়। নিজ উদ্যোগে আঁকতে থাকেন ডিভাইডার লেন। সবশেষে ১৯৪০ সালে ডিভাইডার লেনকে ট্রাফিক নিয়মের আওতায় আনা হয়। আজ যে আমরা দুর্ঘটনার হার আগের চাইতে কমিয়ে চলাচল করতে পারি তার জন্য সৃষ্টিকর্তার পর জুন ম্যাকক্যারলকে ধন্যবাদ জানাই।

১৯৪০ সালের আগে রাস্তার মাঝে কোন ডিভাইডার লেন রেখা ছিল না।

জুন যখন ডিভাইডার লেন নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। তখন রাস্তার মাঝে একরৈখিক ধরণের ডিভাইডার লেন এঁকেছিলেন। কিন্তু যতই দিন গিয়েছে বেড়েছে যানবাহন ও জনসংখ্যা। যানবাহনের মধ্যেও বিভিন্ন রকমের যানবাহন এসেছে। আবার রাস্তাও আছে বিভিন্ন রকম। সিটি লেন, আবার হাই ওয়ে লেন। তাই এই ডিভাইডার লেন সিস্টেম আরো উন্নত করার জন্য পরবর্তীতে আরো পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন রকম লেনের আবিষ্কার হয়েছে। বিভিন্ন রকম লেনের আবার বিভিন্ন রকম অর্থ। এসব অর্থ জানা না থাকলে ঘটবে দুর্ঘটনা। কারন সবাই যখন এই অর্থ জেনে গাড়ি চালাবে, তাদের মধ্যে কেউ যদি থাকে যে ডিভাইডার লেনের অর্থ জানেন না তখন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

বিভিন্ন রকম ডিভাইডার লেন

আমাদের দেশে রাস্তার মাঝে সাধারণত চার ধরণের ডিভাইডার লেন দেখা যায়।

১। সাদা কিন্তু মাঝে মাঝে কাটা লেন

২। একটানা সাদা রেখার লেন

৩। একটানা ডাবল (সাদা/হলুদ) রেখার লেন

৪। একটানা হলুদ রেখার পাশে কাটা হলুদ রেখার লেন

এই চার ধরণের লেনের অর্থ চার রকম। একজন ড্রাইভার যখন গাড়ি ড্রাইভ করবেন, তখন তার অবশ্যই এই চার ধরণের লেনের অর্থ জেনে গাড়ি ড্রাইভ করা উচিৎ।

১। সাদা কিন্তু মাঝে মাঝে কাটা লেন

গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলেন কিন্তু কোন কাজে একটু তাড়া আছে। তাই ভাবলেন দু একটা গাড়ি ওভারডেক করে, সুবিধামত লেন পরিবর্তন করে একটু দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। কিন্তু এই কাজ করার আগে রাস্তার ডিভাইডার লেন গুলোর দিকে আগে খেয়াল করে নিন। যদি দেখেন, আপনি যে পথ ধরে চলছেন সেই রাস্তায় ডিভাইডার লেনটি সাদা এবং একটানা নয়, ভাঙ্গা ভাঙ্গা; তাহলে আপনি আপনার সুবিধা মতো গাড়ি নিয়ে লেন পরিবর্তন করতে পারবেন এবং সামনে থাকা কোন গাড়িকে ওভারটেক করতে পারবেন। এবং সেই অনুমতি আপনার আছে। এমন সাদা কিন্তু কাটা কাটা লেন দেখে লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেকিং করলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। তবে অবশ্যই লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেক করার আগে গাড়ির লুকিং গ্লাস এবং রাস্তার ট্রাফিকের অবস্থার দিকে খেয়াল রাখুন। রাস্তায় অনেক যানবাহন থাকলে লেন পরিবর্তন করতে অপেক্ষা করুন।

২। একটানা সাদা রেখার লেন

আপনার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যদি বড় কোন মহাসড়ক বা পাহাড়ি এলাকা পাড়ি দিতে হয়, তাহলে দেখবেন রাস্তার মাঝে সাদা ডিভাইডার লেন আছে ঠিকই, কিন্তু একটানা সরল রেখার একটা লাইন। মাঝে কোন কাটা বা ভাঙ্গা নাই। তখন বুঝে নিতে হবে এই রাস্তায় লেন পরিবর্তন এবং গাড়ি ওভারটেক করার কোন নিয়ম বা অনুমতি নেই। অর্থাৎ আপনি যদি নিজ লেন বরাবর গাড়ি ড্রাইভ না করেন তাহলে যেকেন মুহূর্তেই দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। তাই রাস্তায় যদি একটা সরলরেখার সাদা লেন দেখতে পান তাহলে কখনোই লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেক করবেন না।

৩। একটানা ডাবল হলুদ রেখার লেন

শহরের মধ্যে এমন ডাবল হলুদ রেখার একটানা ডিভাইডার লেন চোখে না পড়লেও মাঝে মাঝে হাইওয়েতে এমন ডিভাইডার লেন দেখতে পারেন। এই ডিভাইডার লেনের মানে হচ্ছে এই রাস্তায় কখনোই ইউটার্ন বা ওভারটেক করা যাবে না। লেন পরিবর্তন করা যাবে না। কিছু সময়ের জন্য হয়ত পার্কিং করতে পারবেন। কিন্তু পার্কিং করলেও রাস্তার একবারে বাম দিক ঘেঁসে গাড়ি পার্ক করবেন। সামনে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকলে লেন পরিবর্তন করা যাবে না।

৪। একটানা হলুদ রেখার পাশে একটা কাটা হলুদ রেখার লেন

কখনো কখনো রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় এমন ডিভাইডার লেন দেখতে পাওয়া যায় যার একটা দাগ একটানা হলুদ রঙের। তার পাশেই আরেকটা হলুদ রেখা কিন্তু কাটা কাটা। এই বিশেষ ধরণের ডিভাইডার লেন এর অর্থ ভিন্ন। যে পাশে একটানা হলুদ রেখা সে পাশের গাড়িগুলোর জন্য এই রকম ডিভাইডার যুক্ত রাস্তায় লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেক ও ইউটার্ন নিষেধ। কিন্তু যে পাশে কাটা কাটা হলুদ রেখা, সে পাশের গাড়িগুলো চাইলে দরকার অনুযায়ী লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেক করতে পারবে। তবে অবশ্যই ডিভাইডার লেন চেঞ্জ করার আগে ও ওভারটেকিং এর আগে লুকিং গ্লাসে পেছনের গাড়ি দেখে সতর্ক থকতে হবে।

রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করার সময় অবশ্যই ডিভাইডার লেনের দিকে খেয়াল রেখে গাড়ি চালাবেন। নতুবা ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। জীবন পড়তে পারে হুমকির মুখে। এছাড়াও যদি গাড়ি কখন কোথায় যাচ্ছে, নিরাপদে আছে কিনা, ওভারস্পিড নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করতে পারেন প্রহরী ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top