প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং
পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আদ্যোপান্ত

জীবিকা, পড়াশোনাসহ নানান প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত করা যেন নিত্যদিনের অপরিহার্য অংশ। আর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত করতে আমাদের প্রয়োজন হয় যানবাহনের। যাতায়াত করাদের মধ্যে একদলের আছে নিজের গাড়ি, বা বাইক। আরেকদল, নিজের যানবাহন না থাকার দরুন, কাঙ্খিত যায়গায় যেতে প্রয়োজনীয় বাহনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা খরচ করতেও রাজি। গাড়িওয়ালা বা বাইকওয়ালা আপনি একাই যে যায়গায় যাচ্ছেন, আরেকজন হয়তো সেই একই যায়গায় যেতে খুজে বেড়াচ্ছে বাহন। আপনি চাইলেই এক বা একাধিক মানুষকে আপনার গাড়ি বা বাইকে করে সেই যায়গায় নিয়ে যেতে পারেন। এতে তারা সহজে কাঙ্খিত যায়গায় পৌছে গেলো, বিনিময়ে আপনিও করলেন কিছু আয়। এই সরল ধারনাটির উপরই কিন্তু শুরু বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং ব্যাবসা।

কীভাবে কাজ করে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ?

কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয় রাইড শেয়ারিংয়ের প্রক্রিয়াটি। 

  • যে ব্যাক্তি রাইডার হতে চান, তাকে নির্দিষ্ট অ্যাপে নিজের ও বাহনের সমস্ত তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। 
  • সেবা গ্রহীতা এবং রাইডার, দু’জনকেই জিপিএস’এর উপর নির্ভর করা রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। 
  • অ্যাপ ব্যবহারকারী একজন তাঁর বর্তমান ঠিকানা ও কাঙ্খিত ঠিকানা অ্যাপে দিয়ে নিকটবর্তি বাহক বা রাইডারদের রিকোয়েস্ট বা জানান দিতে পারেন। 
  • অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাবহারকারীর রিকোয়েস্ট রাইডারদের কাছে পৌছায়। সেখান থেকে কোন বাহক, অ্যাপ ব্যবহারকারীর কাঙ্খিত ঠিকানায় যেতে চাইলে, তিনি সেই রিকোয়েস্ট অ্যাপের মাধ্যমেই গ্রহন করতে পারেন এবং তারা নিজেদের মধ্যে ফোনকল বা মেসেজে যোগাযোগ করতে পারেন।
  • তারপর উল্লেখিত স্থান থেকে রাইডার সেই মানুষটিকে নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাইডারের গাড়ি বা বাইকের নাম্বারও অ্যাপেই দিয়ে দেয়া হয়, যেন ব্যবহারকারীর বাহন খুজে পেতে কোন সমস্যা না হয়। 
  • এখানে ভাড়া নিয়ে দামাদামিরও কিছু নেই। গাড়ির মান, সময় এবং যাতায়াতের পথের উপর নির্ভর করে, ব্যবহারকারী বাহককে কত টাকা দিবেন, তা অ্যাপেই নির্ধারন করে দেয়া হয় এর মধ্যেই।
  • গন্তব্যে পৌছানোর পর নগদ টাকা বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নির্ধারিত অর্থের লেনদেন করা যায়। 

সেবা গ্রহীতা এবং রাইডার উভয়ই একে অপরকে অ্যাপে তাদের অভিজ্ঞতা ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে রিভিউ দিতে পারেন। যা একজন অপরিচিত মানুষের সাথে রাইড শেয়ার করার ক্ষেত্রে খুবই দরকারি। ড্রাইভারদের ক্ষেত্রেও এই রেটিং বেশ কার্যকর। কারণ, এই রিভিউয়ের জন্য তিনি পরবর্তীতে বেশি যাত্রী বা কোম্পানি থেকে বোনাস এবং পুরষ্কারও পেতে পারেন।

জানুন রাইড শেয়ারিং এর আরো কিছু নিয়ম

  • যাত্রাশেষে রাইডের জন্য আপনি যে ভাড়া বা পারিশ্রমিকটা দেন, তার একটা অংশ উক্ত রাইড শেয়ারিং কোম্পানি নিজেদের উপার্জন হিসেবে কেটে নেয়।
  • ভাড়া যে সবসময় নির্দিষ্টই থাকবে, তা কিন্তু না। যে সময় রাইডের চাহিদা অনেক বেশি, এমন সময় ভাড়াও অন্য সময় থেকে কিছুটা বেশি থাকবে। আবার আপনার উল্লেখিত স্থানে আসতে অথবা গন্তব্যে পৌছাতে   চালককে রাস্তার প্রচন্ড যানজটের অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হলে এর অতিরিক্ত মূল্যভার যাত্রীকেই বহন করতে হবে।
  • আছে ক্যান্সেলেশন বা বাতিল করার ফিও। একেক অ্যাপে একেক সময় পর্যন্ত রাইড ক্যান্সেল করা ফ্রি রাখা হয়। ওই সময়ের পর কেউ কনফার্ম করা রাইড ক্যান্সেল করলে, জরিমানা স্বরূপ দিতে হবে নির্ধারিত ফি।

নিয়ম মানতে হবে রাইডারদেরও

  • রাইড শেয়ারিংয়ে দেয়া গাড়ি বা বাইক অবশ্যই বিআরটিএ এর নিবন্ধিত হতে হবে। 
  • ড্রাইভারের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক 
  • বাইকের ক্ষেত্রে বাইকের বৈধ রেজিস্ট্রেশন পেপার, -ট্যাক্স টোকেন, ইন্সুরেন্স পেপার ইত্যাদি থাকতে হবে।
  • কোন কোম্পানিতে নিবন্ধন করা থাকলে রাইডার অ্যাপ ছাড়া চুক্তিতে যাত্রী তুলতে পারেন না। এটা প্রায় সব রাইড শেয়ারিং কোম্পানিরই নিয়ম বহির্ভূত। 
  • গন্তব্যে পৌছানোর পর অ্যাপে যে ভাড়া দেখাবে, তাঁর চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া যাত্রী থেকে চাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের হাল-হকিকত

বাংলাদেশি প্রথম রাইড শেয়ারিং কোম্পানি হিসেবে ‘পাঠাও’ ২০১৬ সালে এদেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ‘উবার’ও বাংলাদশে কার্যক্রম শুরু করে আনুষ্ঠানিকভাবে। এছাড়াও বর্তমানে ওভাই, আমার বাইক, যাবো, পিকমি, সহজ, ডিজিটাল রাইডসহ আরো বেশ কয়েকটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৫ টি কোম্পানি নিবন্ধিত আছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে। তবে দেশের রাইড শেয়ারিংয়ের সিংহভাগ ব্যাবসা পাঠাও ও উবারের দখলেই।

যাত্রীদের অভিযোগের পসরা

বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের রাস্তায় জনগনকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্গতি। রাস্তার অনুপাতে বেড়েই চলেছে ব্যাক্তিগত  যানবাহনের সংখ্যা। অপরদিকে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যায় গনপরিবহন। এই পরিস্থিতিতে রাইড শেয়ারিং পদ্ধতিটি অবশ্যই সস্তির। তবে সাম্প্রতিককালে রাইড শেয়ারিং নিয়ে দেশের যাত্রী বা সেবা গ্রহীতাদের রয়েছে নানান অভিযোগের ঝুড়ি। 

  • সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির কারণ, গন্তব্য পছন্দ না হলে রাইডাররা একটার পর একটা রাইড ক্যান্সেল করতেই থাকেন। এতে করে পর্যাপ্ত রাইড থাকা সত্তেও পাওয়া যায় না বাহন।
  • আরো আছে অ্যাপের বাইরে টাকা দেয়ার শর্ত। কিছু রাইডার যখন খেয়াল করে, যাত্রী চাহিদা মতো বাহন পাচ্ছে না, তখন তারা অ্যাপের নির্ধারিত টাকার বাইরে বাড়তি টাকার শর্ত দেন।
  • আছে অ্যাপের বাইরে চুক্তিতে যাওয়ার প্রবনতাও। এতে করে যাত্রীর সাথে কোন রাইডার অনৈতিক ব্যবহার বা আচরন করলেও, সুযোগ থাকে না কোথাও অভিযোগ করার। 
  • রাইডারদের অ্যাপে অনাগ্রহের ফলে প্রয়োজনের সময়ে অ্যাপের মাধ্যমে রাইডার পাওয়া না গেলেই, রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে দেখা পাওয়া যায় অসংখ্য রাইডারের। বিশেষ করে বাইক রাইডার।
  • অনেক সময় অতিরিক্ত যানজট থাকলে কোন কোন রাইডার নির্ধারিত গন্তব্যের আগেই যাত্রীকে নামিয়ে দিতে চান, কিন্তু টাকা দাবী করেন অ্যাপে নির্ধারিত টাকাই। যাত্রী তা করতে অস্বীকৃতি জানালে শিকার হতে হয় খারাপ ব্যবহারের। 
  • যাত্রীদের অ্যাপে অভিযোগ দেয়ার সুযোগ থাকলেও সরাসরি অভিযোগ জানানো বা তাৎক্ষনিক প্রতিকারের নেই সুযোগ। গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেয়ারও তেমন নজির পাওয়া যায়নি সাম্প্রতিককালে। 

অভিযোগ রয়েছে রাইডারদের মধ্যেও

চালকদের দাবী, রাইড শেয়ারিং কোম্পানি গুলো টাকা নিয়ে তাদের ঠকাচ্ছে। অতিরিক্ত কমিশন কেটে রাখছে কোম্পানি, চালকদের দিচ্ছে স্বল্প পারিশ্রমিক। যার ফলেই তারা ঝুকছে অ্যাপের বাইরে চুক্তিতে যাত্রী উঠাতে। অনেক যায়গায় রাস্তায় রাইড শেয়ার করা বাইকাররা যাত্রির অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকেন। ফলে খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশ থেকে মামলা। রাইডারদের অভিযোগ এটা নিয়েও। সব মিলিয়ে নানামুখী ভোগান্তির পরও, অনেকটা বাধ্য হয়েই দেশের মানুষ ব্যবহার করছে এসব রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। তবে যানজটের এই যান্ত্রিক জীবনে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের কারনে মানুষ একদমই যে উপকৃত হচ্ছে না, তা কিন্তু না। তাই সরকার এবং কোম্পানিগুলোর মিলিত আগ্রহে, চাইলেই এই সেবার মান আরেকটু উন্নত করার চেষ্টা করাই যায়।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top