৮০’র দশকের পপ তারকা হুডিনির জনপ্রিয় একটি গান – ‘The freaks come out at night’ । অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পর রাস্তায় যখন আপনি গাড়ি চালান তখন অবশ্যই আপনার কিছু ভীতি কাজ করে । রাতের রাস্তা, রাস্তায় যেসব গাড়ি চলে সবকিছুতেই একটা ভয় একটা অজানা শঙ্কা কাজ করে। দিনে যেখানে ৯০% খুঁটিনাটি দৃশ্য আপনি সূর্যের আলোতে দেখতে পান সেখানে সূর্য ডোবার সাথে সাথেই আশেপাশে তৈরি হয় এক অন্ধকারাচ্ছন্ন নাটকীয় পরিবেশ। আর তখন ৪৯% দেখাও দুষ্কর হয়ে পড়ে । এছাড়া রাতের বেলায় গাড়ি চালানোর সময় আপনি বিচিত্র ধরনের মানুষ দেখতে পাবেন- নিশাচর, মাতাল, পাগল, ঠগ আর কত রকম ! রাতে রাস্তার গর্ত, গাড়ির পার্টসের সমস্যাসহ আপনাকে মুখোমুখি হতে হবে নানা বিপদের। কীভাবে রাতের এই বিপদ-আপদ দূর করে নিরাপদে গাড়ি চালানো যায় তার কিছু টিপস আমরা আজকে আমাদের লেখায় শেয়ার করব, আশা করি কিছুটা হলেও উপকার পাবেন-
খাবার/ ঔষধ গ্রহনে সতর্কতা
রাতে গাড়ি চালানোর আগে অবশ্যই কিছু ঔষধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব ঔষধ খেলে ঘুম পায় বা, তন্দ্রামত আসে গাড়ি চালানোর সময় সেসব ঔষধ খাওয়া বাদ দিতে হবে। । ভাত একটি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার। অনেকে খেয়াল করেছেন যে দুপুরে ভাত খাওয়ার পর আমাদের ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসে, মূলত ভাত খাওয়ার কারনে এমনটা হয়। তাই গাড়ি চালানোর আগে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার না খেয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
গাড়ির সেফটি বিষয়ক কোন আর্টিকেলে ড্রিঙ্ক নিয়ে আলোচনা না করলে কখনোই আর্টিকেলটি পরিপূর্ণ হয় না। কাজেই আমরা আসি ড্রিঙ্ক এন্ড ড্রাইভ বিষয়ক টিপসে-
ড্রিঙ্ক এন্ড ড্রাইভ কখনোই একটি ড্রাইভারের জন্য ভাল কিছু হতে পারে না। গাড়ি চালানোর আগে অবশ্যই নেশাজাতীয় কিছু সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রায় ৭৭ % এক্সিডেন্ট হয় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬ টার মধ্যে এবং সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিনগুলোতে। আপনারা হয়তো সিনেমার কোন দৃশ্যে দেখতে পান নায়ক দুঃখ ভরা গান গেয়ে মদ খাচ্ছে আর গাড়ি চালাচ্ছে কিন্তু বাস্তবে এমনটা করতে গেলে নিজে তো জীবন হারাবেনই সাথে আশেপাশে কিছু মানুষের জীবনেরও ঝুঁকিতে ফেলে দেবেন , সত্যি বলছি।
কি করতে পারেন?
রাতে গাড়ি চালানোর আগে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা বা কফি পান করে নিতে পারেন তাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা ঘুম আসবেনা। একটি রিসার্চে বলা হয়েছে যে, দুইকাপ কফির সমান ক্যাফেইন গ্রহণ করলে এক ঘণ্টার মধ্যে আপনার ‘স্লিপ অ্যাটাক’ হবেনা ।
আর সবথেকে ভাল বুদ্ধি হচ্ছে আপনার পাশে বসে যদি আপনার সাথে কেউ গল্প করে তাহলে আপনার ঘুম ঘুম ভাব পুরোপুরি চলে যাবে আর বিপদাপদ হবার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাবে।
আলোর ব্যবহার করা
আগেই বলেছি যে, সূর্য ডুবে যাওয়াতে অন্ধকারে মানুষের রাস্তায় গাড়ি চালাতে মোটামোটি অসুবিধা হয় । কাজেই এখানে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং সাথে এই দুটি ব্যপারও নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি সামনে ঠিকভাবে দেখছেন এবং আপনাকেও সামনেরজন সঠিকভাবে দেখছে। রাতে গাড়ি চালানোর আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিবেন যে, হেডলাইট ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। এছাড়া দেখে নেবেন, হেডলাইটের সামনের দিকটা যেন পরিষ্কার থাকে । গাড়ির সামনের দুটো হেডলাইট ঠিকঠাক থাকলে আপনার গাড়ির বিপদাপদের সম্ভাবনা ৫০% কমে যাবে। কিছু ড্রাইভার দিনের বেলায় বা এমনিতেই ফগ লাইট ব্যবহার করে থাকে, এছাড়া অনেকে জানেন না কীভাবে হাই বীম ব্যবহার করতে হয়। গাড়ি চালানোর আগে অবশ্যই জেনে নেবেন এসব লাইটের সঠিক ব্যবহার।
অতিরিক্ত আলোর ব্যবহার না করা
প্রথমে আপনাকে জানতে হবে গাড়ির লাইটের সঠিক ব্যবহার। অর্থাৎ, লাইট ঠিক কখন ব্যবহার করতে হবে। এবং দ্বিতীয়ত জানতে হবে কখন আপনি লাইট ব্যবহার করবেন না অর্থাৎ লাইটটি বন্ধ রাখবেন। রাস্তায় মাঝে মাঝে খেয়াল করলে দেখবেন যে কিছু ড্রাইভার এমনভাবে হেডলাইটটি জ্বালিয়ে রাখে, সামনে থেকে আসা গাড়ির ড্রাইভারের চোখের রেটিনা যেন আলোতে ঝলসে যায়। বিপরীত পাশ থেকে আসা এরকম তীব্র হেডলাইটের আলো থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেবেন বা এমন জায়গায় তাকাবেন যাতে আপনার চোখ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আবার সামনের দিকে ফিরিয়ে আবার গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিতে পারেন। এছাড়া রেয়ার ভিউ মিররটি এমনভাবে সেট করে নেবেন যাতে পেছন থেকে কেউ বেশী আলো ফেললেও আপনার চোখে কোন সমস্যা না হয়।
প্রযুক্তির প্রয়োগ
প্রযুক্তির স্বর্ণ যুগে বাস করছি আমরা। কিন্তু তবু গ্যাজেটের উপর কিছু মানুষ বিরক্ত। মনে রাখবেন, গ্যাজেট সবসময় জীবন সংশয়ের কারণ হয় না মাঝে মাঝে জীবন রক্ষার কারনও হয়।
- যেকোন বিপদে, অ্যাক্সিডেন্টে , যেকোন ব্রেকডাউনে অথবা আপনি যদি বেশী ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে আপনার মোবাইল ফোনটি ইমারজেন্সি সাহায্যের জন্য কল করে দেবে।
- এন্ড্রোয়েড বা স্মার্ট ফোনের নতুন সংযোজন হচ্ছে ‘নাইট মোড’। যেকোনো নতুন জায়গায় গেলে আপনি নিশ্চই আপনার জিপিএস সিস্টেমটি অন করে যান। আর নাইট মুড অন করা থাকলে আপনি কখনোই দেখতে ভুল করে রাস্তা হারাবেন না।
- টেলিমেটিক সিস্টেমের মাধ্যমে টয়োটা এনটিউন এবং ফোর্ড সিঙ্ক গাড়িগুলো তৈরি। এখানে শুধু আপনার অবস্থানই দেখাবে না, সাথে দেখাবে আপনার আশে পাশে কোন পুলিশ ষ্টেশন আছে, কোন খাবারের দোকান আছে বা কোন পেট্রোল পাম্প আছে। সাথে আপনার কোন বিপদ আপদ ঘটলে আপনার জন্য ইমারজেন্সি কলের ব্যবস্থাও করবে।
- কিছু হায়ার এন্ড গাড়িতে লাল রঙের নাইট ভিশন থাকে যার মাধ্যমে আপনার গাড়ির হেডলাইটের কাছাকাছি কোন বাঁধা, মানুষ বা প্রাণী এসে পড়লে সেকেন্ডের মধ্যে সেসব নির্দিষ্ট করতে পারে এবং তথ্য প্রদান করতে পারে।
আধুনিক গাড়ি – SUV
বর্তমান সময়ে আধুনিক গাড়িগুলো এবং এসইউভি গাড়িগুলো প্রযুক্তির ব্যবহারে আগের থেকে অনেক বেশী নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে। আপনি এসব গাড়ি দিনে বা রাতে সবসময়ই চালাতে পারবেন। নিয়তির কথা বলা যায় না যেকোনো সময়ে আপনার সীটবেল্টটি ভেঙ্গে যেতে পারে, চাকাটি পাংচার হয়ে যেতে পারে, অথবা প্রাকৃতিক কোন কারনে আপনার গন্তব্যে পৌঁছানো আটকে যেতে পারে।
ইমারজেন্সি কীট
গাড়ির ইমারজেন্সি কীট আপনাকে প্রাথমিকভাবে বা কিছু সময়ের জন্য সাহায্য করতে পারে কিন্তু সবসময় নিরাপত্তা দিতে পারেনা। কিন্তু তবু গাড়ির সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য গাড়িতে কোন ইমারজেন্সি কীট রাখতে পারেন । অথবা একটি একটি করে যন্ত্রপাতি একসাথে করে একটি সেট বানিয়ে ফেলতে পারেন।
কি ধরনের পার্টস আপনার ইমারজেন্সি কীটে থাকতে পারে আসুন দেখে নেই-
১।জাম্পার কেবলস (ব্যাটারি চার্জের ডিভাইস)।
২।কয়েক লিটার তেল ।
৩।বোতলে পানি (ইঞ্জিন ঠাণ্ডা করার কাজে লাগতে পারে)।
৪।কম্বল।
৫।ইমারজেন্সি রোড সাইড ফ্লেইয়ার (গুগলে সার্চ দিয়ে ছবি দেখে নিতে পারেন)।
৬।প্লাস্টিকের কভার।
৭।মাল্টি টুল ।
৮।টায়ার সিলার (আঠা জাতীয় পদার্থ)।
৯।ফ্ল্যাশলাইট, ব্যাটারি।
১০।নাইলনের ব্যাগ।
সব ইমারজেন্সি কীট অবশ্যই ছয়মাস পর পর বদলিয়ে রাখতে হবে, বিশেষ করে ব্যাটারি।
শেষকথা , রাতে গাড়ি চালানোর সময় একজন দায়িত্ববান চালকের ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্ত যদি এসব সাবধানতা অবলম্বন করে গাড়ি চালানো হয় তাহলে বিপদ কিছুটা কমানো সম্ভব ।