কিছু মানুষ তার শখের গাড়িটি সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করে। শৌখিন মানুষ তার গাড়িটিকে পুরোটা পাল্টে অন্যরকম করে ফেলে। কেউ আবার নিজের পুরানো গাড়িটিকে নতুনভাবে সাজায়। দেখতে সুন্দর লাগার সাথে সাথে অনেক পার্টস ঘষেমেজে নতুন করে ফেলেন অনেকে। এভাবে পুরান গাড়িটিও হয়ে ওঠে অনেক বেশী আধুনিক। গাড়ির ইঞ্জিনের শক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে বাড়তি আলো বসানো হয় গাড়ির ভেতরে ও বাইরের অংশে। অনেকে হলার ব্যবহার করে বাড়ায় গাড়ি চলার শব্দ। শুনতে অবাক হলেও সত্যি যে, কিছু মডিফিকেশন মানুষ গাড়িতে করলে তা আবার রাস্তায় চলার অনুমতি পায়না। সেক্ষেত্রে সেসব পরিবর্তন না করাই ভাল।
গাড়ির এই আধুনিকায়ন করার পদ্ধতির পোশাকি নাম হচ্ছে, গাড়ির মডিফিকেশন । কেমন হয় সেসব গাড়ির মডিফিকেশন ? কিভাবেই বা করা হয়? আসুন দেখে নেই –
১. সাস্পেন্সনের উন্নয়ন
কিছু দেশে আপনি আপনার গাড়ির উচ্চতার সমন্বয় করে নিতে পারেন,কিন্তু বেশীরভাগ দেশে সাস্পেন্সনের পরিবর্তন সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু গাড়ি কেনার পর যখন সাস্পেন্সন পাল্টে ফেলা হয় তখন গাড়ির পারফর্মেন্স অনেক ভাল হয়ে যায়। আর যখন আপনি আপনার গাড়িটি সাস্পেন্সনের কাজ করাবেন তখন নিজেই গাড়িটি চালিয়ে ও নিয়ন্ত্রণ করে মজা পাবেন। আর আপনি গাড়ি নিয়ে যখন কোন রেসে নামবেন ঠিক তখনও গাড়ির এই সাস্পেন্সনের উন্নয়ন ভালোভাবেই টের পাবেন, মনে হবে সাস্পেন্সনের পেছনে খরচ করা টাকাটা যেন উশুল হলো।
২. টার্বো চার্জার ও সুপার চার্জার
গাড়িতে টার্বো চার্জার ও সুপার চার্জার সংযুক্ত করা গাড়ির মডিফিকেশনের আরেকটি জনপ্রিয় দারুণ একটা ব্যাপার। এর মাধ্যমে ইঞ্জিনে জোর করে হাওয়া প্রবেশের মাধ্যমে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা বাড়ানো হয়। যেহেতু ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা বাড়ে বলে ধোঁয়াও বেশী বের হয়। গাড়ির যদি কোন অসুবিধা না হয় তাহলে টার্বো চার্জার ও সুপার চার্জার বৈধ। ক্যালিফোর্নিয়াতে পরিবেশ দুষনের ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি আইন মানা হয়। সেক্ষেত্রে আপনার গাড়ির ধোঁয়া নির্গমনের জায়গাটি উন্নত করে নিতে হবে । কারণ কিছু দেশে ধোঁয়া নির্গমনের জায়গাটি উন্নত না করলে গাড়ির ইঞ্জিন সত্যায়িত করা হয় না। আবার ধোঁয়া চেকের সময়ও আপনি ছাড় পাবেন না ।
৩. স্পোর্ট সীট সংযোজন (আরেকটি গাড়ির মডিফিকেশন)
একজন নতুন কার রেসারের কাছে সাধারণ গাড়িতে স্পোর্ট সীট বসানো একটা দারুণ ব্যাপার। এবং দেখতেও খুব চমৎকার । আর গাড়ির সাথে সামঞ্জস্য রেখে যদি সীটটি বসাতে পারেন তাহলে সীটে বসেও খুব আরাম পাবেন। কিছু স্পোর্টস সীট আপনার গাড়িতে আপনাকে ঠিক জায়গায় বসে গাড়ি চালানোর ব্যাপারেও অনেক সাহায্য করতে পারে। কিছু স্পোর্টস সীট নির্মাতা কোম্পানিগুলো সীট বানানোর ব্যপারে আগে থেকেই লিখে দেয় যে, এই সীটগুলো রাস্তায় চলাচলের জন্য বৈধ নয় কারণ সীটগুলো মূলত বানানো হয় রেসের সাজসজ্জার জন্য। রিকারোর মত প্রতিষ্ঠান যে সীটগুলো বানায় সেগুলো সাধারন রাস্তায় ব্যবহারের জন্য বৈধ। সীট ব্যবহারের আগে নিশ্চিত করে নেবেন যে ,গাড়ির ফ্যাক্টরি সীটবেল্টের এয়ারব্যাগের জায়গাটি যেন বন্ধ না হয়ে যায় । অবশ্যই এয়ারব্যাগটি যেন ব্যবহার করা যায়।
৪. গাড়ির রঙ পাল্টানো
গাড়ির রঙ অবশ্যই একজন মানুষের রুচির উপর নির্ভর করে। আপনি আপনার পছন্দমত রঙ গাড়িতে করে নিতে পারেন। অথবা ভিনাইল র্যাপ (এক ধরনের প্লাস্টিক) করে নিতে পারেন। দেখে যেন মনে না হয় যে, আপনি নিজের গাড়ির রঙ বদলে গাড়ির আসল চেহরা পাল্টে ফেলতে চাচ্ছেন। অনেক সময় গাড়ি চোরেরা গাড়ি চুরি করে এমনটা করে । গাড়ির রঙ পাল্টানোর সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে । গাড়িটি কোন পেশাদার মেকানিক দিয়ে রঙ করাতে গেলে খরচ কিছুটা বেশী পড়বে। আর নিজে যদি রঙ করতে চান তাহলে সময় অনেক বেশী লেগে যাবে। কিন্তু অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন,এরকম গাড়ির মডিফিকেশন / রঙ করার সময় আপনার আশেপাশের পরিবেশ যেন দূষিত না হয়।
৫. জানালার গ্লাস টিন্ট
অনেকে গাড়িতে কালো/লাল রঙের স্টিকার ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু এরকম স্টিকার ব্যবহার করা আইনত বৈধ নয়। এটাও এক ধরনের গাড়ির মডিফিকেশন। কিছু দেশে এরকম টিন্ট স্টিকারের ব্যবহার করা নিষেধ। এরকম স্টিকার ব্যবহার করতে হলে ড্রাইভারকে অবশ্যই প্রমাণস্বরূপ মেডিকেল ডকুমেন্ট দেখাতে হবে। কিছু দেশে ট্রাফিক আইনে আছে ,গাড়ির সামনের বা দুই পাশের জানালায় এমন টিন্ট স্টিকার ব্যবহার করা যাবেনা, যা সামনে থেকে আসা গাড়ির উপর প্রতিফলন সৃষ্টি করে। গাড়ির ভেতরে সম্পূর্ণভাবে দেখা গেলেও গ্লাস টিন্ট অবৈধ বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে । আবার কিছু দেশে হয়তো আপনি টিন্ট স্টিকার ব্যাবহারের অনুমতি পেয়েও যেতে পারেন। টিন্ট পরিমাপ করার পদ্ধতি হচ্ছে, কতটুকু আলো টিন্ট গ্লাসের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে পারে তার উপর । কিছু দেশে টিন্ট গ্লাস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে না বরং কিছু অংশে ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
৬. নাইট্রাস অক্সাইড বা NOS
গাড়ির মডিফিকেশন হিসেবে মানুষ আরেকটি কাজ করে সেটা হচ্ছে, নাইট্রাস অক্সাইড বা NOS ব্যবহার করে গাড়ির গতি বাড়ায় । আপনি যদি কখনো কোন কার রেস মুভি দেখে থাকেন তাহলে অবশ্যই জানবেন কীভাবে একটি গাড়ির গতি অনেক অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো যায় । এই পদ্ধতিটি হচ্ছে সবথেকে সস্তা ও সস্তা হবার কারনে অনেক বেশি জনপ্রিয় । নাইট্রাস অক্সাইড অস্থায়ীভাবে ইঞ্জিনে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি করে। যারফলে, বেশি জ্বালানী খরচ হয় আর গাড়ির গতি অনেক বেড়ে যায়। কিছু দেশে এই নাইট্রাস অক্সাইডের ব্যবহার বৈধ কিন্তু কিছু দেশে একদমই নিষিদ্ধ,যে বোতলগুলোতে নাইট্রাস অক্সাইড থাকে সেগুলো সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করাই যাবেনা। কারণ কারো কারো মতে নাইট্রাস অক্সাইড গাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়।
৭. গাড়ির নিচের অংশে নিওন লাইট
কিছু দেশে নিওন লাইট পুরোপুরিভাবেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে । বিশেষ করে লাল বা নীল লাইটগুলো। কারণ বিপরীত পাশ থেকে আসা গাড়িগুলো নিওন লাইটের কারনে সাম্নে দেখার সময় অসুবিধায় পড়ে। অন্যোন্য রঙের লাইট যদিও ব্যবহার করা যায়। আর এই নিওন লাইট গাড়ির পুরো সাজসজ্জাই পাল্টে দেয়। রাতের বেলায় দেখতে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়। যারা নিজের গাড়িটি সাজাতে অনেক বেশী পছন্দ করেন তারা কিছু নিওন লাইট লাগিয়ে দেখতে পারেন।
গাড়ির মডিফিকেশন করবেন তার পাশাপাশি গাড়ির নিরাপত্তার ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে । গাড়ির নিরাপত্তায় ব্যবহার করুন সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘প্রহরী’ ভেহিকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস। ২০টিরও বেশী ফিচার নিয়ে ‘প্রহরী’ আপনার পাশে থাকে সপ্তাহে ৭দিন ২৪ ঘণ্টা।