মাহমুদ সাহেব শখ করে একটা গাড়ি কিনেছেন। গাড়ী কেনাটা অবশ্য শখে নয় প্রয়োজনের তাগিদেই কিনতে হয়েছে। অকারণ বিলাসিতার অভ্যেস তার নেই। সমস্যায় পড়লেন ড্রাইভার নিয়োগ নিয়ে। গাড়ি বিষয়ক কারিগরী জ্ঞান তার খুব একটু নেই। তাই ড্রাইভারের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে পড়লেন বিপাকে। জিজ্ঞাসা করার মত কোন প্রশ্নই খুঁজে পেলেন না। দেশের বাড়ি কোথায়, কত দিন ধরে কাজ করছে এসব প্রশ্ন করেই ভাইভাটা সম্পন্ন করতে হলো। তবে শেষমেষ তিনি খুশিই হলেন। কারণ ড্রাইভারটি বেশ নম্র-ভদ্র আর বেতনটাও তার নাগালের মধ্যেই রইলো। তখন তিনি যদি জানতেন যে এই নম্র ভদ্র ড্রাইভারের মনের ভেতর কী পরিকল্পনা কাজ করছে!
মাহমুদ সাহেবের বন্ধু জয়নাল হোসেন তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, গাড়ির খরচ চালানো আর হাতি পোষা একই কথা। এ ব্যাপারটি তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেলেন ড্রাইভার নিয়োগ দেয়ার পর। বেতন এবং তেল খরচ বাবদ যেখানে কোনভাবেই প্রতি মাসে বিশ হাজার টাকার বেশি খরচ হবার কথা না, সেখানে প্রথম দুই মাসেই তার গড়ে হাজার ত্রিশেক টাকা খরচ হয়ে গেলো! দুদিন পর পর তার ব্র্যান্ড নিউ গাড়িটির এটায় সমস্যা ওটায় সমস্যা, এটা কিনতে হবে, ওটা বদলাতে হবে, আরো কত কী বায়নাক্কা! তেল-গ্যাসের ক্ষেত্রেও সমস্যা। খরচ হতে লাগলো অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি কোনভাবেই লাগাম ধরে রাখতে পারলেন না। মুষড়ে পড়লেন রীতিমত। তারপর একদিন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে তদন্তে নেমেই ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করলেন ব্যাপারগুলো।
তেল/গ্যাসের রিসিপগুলো ভালভাবে পরীক্ষা করলেন এবং বিশেষজ্ঞ বন্ধুদের সাহায্য নিলেন। সবাই মত দিলো যে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বার নেয়া হচ্ছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এখন থেকে গাড়ি একা ছাড়বেন না আর। এর ফলে আশ্চর্য ভাবে তেল/গ্যাসের খরচ কমে এলো। ধীরে ধীরে তিনি অভিজ্ঞ হতে লাগলেন এবং বুঝতে পারলেন ড্রাইভার তাকে কি ঠকানোটাই না ঠকিয়েছে! তিনি জানতে পারলেন তার ড্রাইভারকে একলা ছাড়লে সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতো। এটা ওটা কেনার নাম করে ভূয়া রশীদ বানাতো অসৎ দোকানদারদের যোগসাজসে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার, তার ঝা চকচকে গাড়ীর পার্টস খুলে বিক্রি করতো। এছাড়াও নির্দিষ্ট গ্যারেজে গাড়ি রাখার চুক্তিতে টাকা নিতো। আর তেল চুরি এবং তেল/গ্যাসের ফেইক রিসিপ বানানো তো আছেই!
একটি নয়, দুটি নয়, ছয় ছয় টি অসততার দৃষ্টান্ত! মাহমুদ সাহেব তাকে বিদায় করে দিলেন।
এখন তিনি অনেক অভিজ্ঞ এবং পরিপক্ক। তেল চুরি এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া রোধে ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেম (ভিটিএস) ইনস্টল করে নিয়েছেন। বন্ধু জয়নাল সাহেবের পরামর্শ ছিলো প্রহরী ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহার করা। তার কথামত কাজ করে বেশ সুফল পাচ্ছেন। অন্য ব্যাপারগুলিও কড়া নজরে রেখেছেন। নতুন ড্রাইভারটি আর অসততা করার কোন সুযোগই পাচ্ছে না!