আপনি যদি একটি ব্যক্তিগত গাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের যানবাহনের মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে শুধু গাড়ি চালানো নয়—গাড়িটির আইনগত বিষয়গুলোও আপনার সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করা দায়িত্ব। অধিকাংশ গাড়ি মালিকই জানেন না যে, সময়মতো কর, ফিটনেস এবং রুট পারমিট রিনিউ না করলে শুধু আর্থিক জরিমানা নয়, আইনি ঝামেলা, গাড়ি জব্দ এমনকি চালককে গ্রেফতার পর্যন্ত হতে পারে।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো কর না দিলে কী কী ঝুঁকি আছে এবং আপনি কীভাবে ঘরে বসেই সহজে ট্যাক্স ও ফিটনেস চেক করতে পারবেন। সেইসাথে, আমরা আপনাকে জানাবো “প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার” কিভাবে গাড়ির খরচ এবং আইনগত বিভিন্ন বিষয় আপডেট ট্র্যাক রাখতে সাহায্য করে।
গাড়ির কর না দিলে কী হতে পারে?
গাড়ির কর পরিশোধ না করলে তার প্রভাব শুধু আর্থিক জরিমানায় সীমাবদ্ধ থাকে না—এটি আপনার গাড়ির বৈধতা, সড়কে চলাচলের অধিকার এবং ইন্স্যুরেন্স সুবিধাকেও বিপন্ন করে তুলতে পারে। অনেক সময় অনভিজ্ঞতা কিংবা অসচেতনতার কারণে কর ফেলে রাখা হয়, যার ফলে পরে বড় অঙ্কের জরিমানা, মামলা বা গাড়ি জব্দ হওয়ার ঝুঁকিও দেখা দেয়। আসুন জেনে নেই এটি নিয়ে বিস্তারিত।
১. জরিমানা ও আর্থিক চাপ
বাংলাদেশে গাড়ির বার্ষিক ট্যাক্স নির্ধারিত হয় ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ও গাড়ির শ্রেণি অনুযায়ী। সময়মতো এই কর না দিলে BRTC এবং আয়কর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত অনুপাতে সুদ ও জরিমানা আরোপ করে। যদি কোনো গাড়ির কর ৬ মাস বা তার বেশি সময় বকেয়া থাকে, তবে তা পরিশোধ করতে গেলে আসল ট্যাক্সের সাথে মোটা অঙ্কের পেনাল্টিও গুনতে হয়। অনেক সময় মালিকরা দেরি করেই জানেন না—ফলস্বরূপ শেষমেশ বড় অঙ্কে টাকা দিতে হয়, যা এড়ানো যেত একটি স্মার্ট রিমাইন্ডার থাকলে।
২. ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল
গাড়ির ফিটনেস সনদ মূলত আপনার গাড়ির রোড-ওয়ার্থিনেস এর প্রমাণ। BRTC’র নিয়ম অনুযায়ী, যেসব গাড়ির ফিটনেস মেয়াদ উত্তীর্ণ, সেগুলো আইনত রাস্তায় চলাচলের অনুপযুক্ত। যদি ট্যাক্স ও ফিটনেস দুইই সময়মতো রিনিউ না করা হয়, তাহলে আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত বা বাতিল পর্যন্ত হতে পারে। এটি না জানার ফলে অনেকেই চেকপোস্টে জরিমানা কিংবা গাড়ি আটক হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হন।
৩. ইন্স্যুরেন্স ক্লেইম রিজেক্ট
বহু মালিকই জানেন না যে, কর ও ফিটনেস আপডেট না থাকলে বীমা সংস্থাগুলো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো ক্লেইম অ্যাকসেপ্ট করে না। অর্থাৎ, আপনি নিয়মিত প্রিমিয়াম দিচ্ছেন বটে, কিন্তু আইনি ডকুমেন্ট আপডেট না থাকলে ইন্স্যুরেন্স কোনো সহায়তা দেবে না।
৪. ট্রাফিক মামলা ও আইনগত ঝুঁকি
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট আইন ২০১৮ অনুযায়ী, কোনো গাড়ি অনিবন্ধিত, কর বা ফিটনেস ছাড়া রাস্তায় চললে তা আইন লঙ্ঘনের শামিল। আপনি নিজেও পড়তে পারেন মামলায়, জরিমানায় কিংবা গ্রেফতার ঝুঁকিতে।
কর বিষয়ক সচেতনতা
- কর ও ফিটনেসের মেয়াদ সাধারণত ১ বছর বা ২ বছরের জন্য হয়। সময়মতো নবায়ন নিশ্চিত করতে প্রতি ১১ মাস পরপর স্মার্ট রিমাইন্ডার ব্যবহার করা উচিত।
- প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জুন মাসে ট্রাফিক প্রশাসন ট্যাক্স ও ফিটনেস অভিযান চালায়, তখন সমস্যা বাড়ে।
- অনেকেই নিজে যান না, ড্রাইভার বা অন্যের উপর নির্ভর করেন, যা ঝুঁকিপূর্ণ।
কীভাবে বিআরটিএ থেকে ফিটনেস মেয়াদ চেক করবেন?
ধাপ-১: রেজিস্ট্রেশন নাম্বার প্রস্তুত রাখুন
গাড়ির নাম্বার (যেমন DHA-XX-YYYY) লিখে নিন অথবা স্মার্টফোনে সংরক্ষণ করুন।
ধাপ-২: অনলাইন চেকিং পদ্ধতি
প্রবেশ করুন: https://bsp.brta.gov.bd/registeredVehicleFeesIndex?lan=en
এখানে Registration No বা Fees অপশনে আসবে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে প্রয়োজনীয় ফি সার্চ করলেই আপনি জানতে পারবেন:
- কর স্ট্যাটাস
- ফিটনেস মেয়াদ
- রুট পারমিট মেয়াদ
- ট্রাস্টি বোর্ড সার্টিফিকেশন ডেট
বিকল্প অ্যাপ দিয়ে গাড়ির তথ্য চেক করা
আপনি যদি চাইলে বিআরটিএ (BRTA) সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দ্রুত ও সহজে চেক করতে পারেন। এর জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম রয়েছে:
BRTA Sheba অ্যাপ
এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যায় এবং এটি আপনার গাড়ির কর, ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন সহ অন্যান্য তথ্য এক জায়গায় দেখার সুযোগ দেয়। অ্যাপে লগইন করার পর আপনি সহজেই আপনার গাড়ির তথ্য খুঁজে পাবেন এবং যে কোনো প্রয়োজনীয় আপডেটও দেখতে পারবেন। এতে সময়েরও সাশ্রয় হয় এবং যেকোনো মুহূর্তে তথ্য পাওয়া যায়।
বিআরটিএ (BRTA) অফিস
আপনি চাইলে নিকটস্থ বিআরটিএ অফিসে গিয়ে আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে সমস্ত তথ্য জানতেও পারেন। তবে, মনে রাখতে হবে যে, অনলাইন পদ্ধতি অনেক দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত। তাই, যদি আপনি সময় বাঁচাতে চান, অনলাইনে তথ্য চেক করাই হবে সবচেয়ে সুবিধাজনক পদ্ধতি।
প্রহরী GPS ট্র্যাকার রিমাইন্ডার
যারা প্রহরী GPS ট্র্যাকার ব্যবহার করছেন, তারা চাইলে তাদের প্রোফাইলে গাড়ির কর বা ফিটনেস মেয়াদ যুক্ত করে নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্ট পেতে পারেন। এটি আপনাকে সময়মতো কর বা ফিটনেস মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই সতর্ক করে দেবে, যা আপনাকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে সহযোগিতা করবে।
উপসংহার
গাড়ির মালিকানা শুধু স্ট্যাটাস নয়, এটি দায়িত্বও বটে। কর, ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন সব কিছু নিয়ম মেনে আপডেট রাখা জরুরি। আর এক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তায় স্মার্ট থাকা এখন খুব সহজ। প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার আপনাকে শুধু গাড়ির অবস্থান নয়, বরং আপনার গাড়ি ব্যবস্থাপনার ডিজিটাল সহকারী হিসেবেও কাজ করবে। আপনার গাড়ির নিরাপত্তা, কর এবং শান্তি—সবকিছুই থাকুক এক জায়গায়। “প্রহরী থাকলে চিন্তা কমে, গাড়ি থাকে নিরাপদে।”