প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 5 মিনিট

বিশ্বের ১০ জন সফল নারী রেসার!

বর্তমানে এই প্রযুক্তির যুগেও মানুষ নারী বৈষম্যে বিশ্বাস করে। কিন্তু সব বৈষম্য পেছনে ফেলে নারীরাও দেখিয়ে দিচ্ছে যে তারা  পুরুষের থেকে কোন অংশে কম না। তারাও দেখিয়ে দিয়েছে যে কার রেসিং শুধু পুরুষ না নারীরাও করতে পারে। নারী রেসার হিসেবে তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা এত নিখুত ভাবে ও দ্রুত গাড়ি চালাতে পারে; যা পুরুষদেরও মাঝে মাঝে হার মানায়।

বর্তমানে নারী রেসিং জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম হচ্ছে ড্যানিকা প্যাট্রিক। তিনি নিজে একজন জনপ্রিয় রেসার হবার পাশাপাশি একজন নামকরা ক্রীড়াবিদও। ড্যানিকা একজন সফল ন্যাসকার ড্রাইভার এবং প্রথম নারী হিসেবে ইনডি কার সিরিজ রেস জিতেছেন। তার আকর্ষণীয়ও চেহরার কারনে তিনি একজন সফল মডেল ও বিজ্ঞাপনের ব্র্যান্ড এম্বাসিডরও হয়েছেন। ড্যানিকা প্যাট্রিক ছাড়াও আরো অনেক নারী রেসার আছেন যারা এই রেসিং জগতে নিজেদের সফলতা দেখিয়েছেন।

সুসি উলফ

সুজানে উলফ ছিলেন একজন মার্কিন রেস ড্রাইভার। তিনি প্রতিযোগিতামূলক রেসে বেশি অংশগ্রহন করতেন।  তিনি আগে মোটর সাইকেল চালাতেন কিন্তু পরে তিনি কার রেসিং এ তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।  তিনি প্রথমে গো কার চ্যাম্পিয়নশিপ এবং পরে ফর্মুলা রেনলট ও ফর্মুলা থ্রি সিরিজে প্রতিযোগিতা শুরু  করেন।

২০০৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সুসি ডিটিএম চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহন করেন।  এবং প্রত্যেকটা রেসে তিনি মারসিডিস গাড়ি ব্যবহার করেছেন। ২০১২ সালে তিনি উইলিয়ামস ফর্মুলা ওয়ান দলের জন্য একজন টেস্ট ড্রাইভার হিসাবে রেস শুরু করেন। তিনি মারসিডিসের নির্বাহী পরিচালক টটো উলফ কে বিয়ে করেন এবং ২০১৭ সালে তার একটি সন্তান হয়। এরপর কিছুদিন বিরতিতে থাকলেও সুসি আবার ফিরে আসেন রেসিং জগতে।   

মিকা  ডুনো 

সাবেক ভেনেজুয়েলান ফ্যাশন মডেল মিকা ডুনো একজন আকর্ষণীয় নারী রেসার। যদিও কার রেসার হিসেবে তার ক্যারিয়ার একটু দেরি করেই শুরু হয়েছিলো। তিনি ভেনেজুয়েলার একটি  ড্রাইভিং ক্লিনিক থেকে রেসিং এর আমন্ত্রন পাওয়ার পরেই রেসার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তখন তিনি  উপলব্ধি করেন যে তিনি রেসে পারদর্শী এবং তার ক্যারিয়ার রেসার হিসেবে শুরু করতে চান।

আমেরিকান লে ম্যান্স সিরিজ, রোলেক্স স্পোর্টস কার সিরিজ ও  ইন্ডি কার সিরিজ সহ নর্থ আমেরিকায় মিকা অনেক রেসে অংশগ্রহন করেন। তিনি ২৮ বছর বয়সে বিখ্যাত লে ম্যান্স রেসে দ্বিতীয় বারের মত অংশগ্রহন করেন।

লেইলানি মুনটার

লেইলানি মুনটার একজন আমেরিকান নারী রেসার এবং পরিবেশ বিষয়ক কর্মী। ২০১০ থেকে তিনি বিভিন্ন রেসে অংশগ্রহন করে আসছেন। তার রেসিং জীবন শুরু হয় প্রথমে ইন্ডি লাইটসে এবং পরে তিনি ইন্ডি প্রো সিরিজে অংশ নেন।

রেসিং ক্যারিয়ারে আকর্ষণীয় দক্ষতার পাশাপাশি লেইলানি  ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োলজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এবং তিনি বিভিন্ন পরিবেশ সম্পর্কিত প্রকল্পের সদস্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্বল ড্রাইভারদের একজন।

সিমোনা ডি সিলভাসট্র

সিমোনা অল্প সময়েই গাড়ি চালনায় বিশেষ দক্ষতার মাধ্যমে অন্যান্যদের নজর কেড়েছেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি ইন্ডি কার রেসিং এবং অন্যান্য রেসে অংশগ্রহন করা ছাড়াও ফর্মুলা-ই চ্যাম্পিয়নশিপ রেসে অংশ নিয়ে সবার সম্মান অর্জন করেছেন।

২০১৬-২০১৭ তে সিমনা অস্ট্রেলিয়ার প্রতিযোগিতামূলক “অস্ট্রেলিয়ান ভি এইট সুপারকারস চ্যাম্পিয়নশিপ” নামক একটি রেসে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সেখানে নিসান মাক্সিমা ভি এইট গাড়িটি ব্যাবহার করেছিলেন। ২০১৮ সালেও  তিনি বিভিন্ন রেসে অংশগ্রহণ করেছেন।

সিনডি অ্যালেমান

সিনডি অ্যালেমান অন্যতম জনপ্রিয় সুইস রেসার। তার বাবা ও ভাই ছিলেন সাবেক গো কার্টের রেসার। সিনডি প্রথমে কিছু প্রাথমিক মোটর রেসে অংশগ্রহন করেছেন।

বিশ্বের সেরা জিটি স্পোর্টস কার চালিয়ে তিনি ২০১০ সালে তিনি বিখ্যাত FIA GT1 ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০১২ তে তিনি জাপানে অনুষ্ঠিত সুপার জিটি সিরিজে প্রথম নারী হিসেবে অংশ নেন।

অ্যাসলে ফোর্স হুড

অ্যাসলে ফোর্স জনপ্রিয় ড্র্যাগ রেসার জন ফোর্সের মেয়ে। স্বাভাবিকভাবেই রেসিং তার রক্তে মিশে রয়েছে । পেশাগত ভাবে তার রেসিং জীবন শুরু হয় ২০০৭ সালে। কিন্তু ২০১০ এই তার রেসিং জীবনের ইতি করে তিনি বিয়ে করেন তার বাবার রেসিং টীমের সদস্য ড্যানিয়েল হুডকে। অ্যাসলে অনেক বছর ধরে নারী ড্র্যাগ রেসার হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি অনেক সম্মান অর্জন করেছিলেন এবং অনেক রেসে বিজয়ীও হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে ড্যানিয়েলের রেসিং টীমের একটি গাড়ি চালান। মাঝে মাঝে তার বাবার গাড়িও চালান।

মিশেল মউটন

৭০ দশকের মাঝামাঝিতে যখন মিশেল তার রেসিং জীবন শুরু করলেন তখন সব জায়গা ছিল পুরুষদের দখলে। তার সৌন্দর্যের সাথে সাথে তার পারফর্মেন্সও ছিল দেখার মত। মিশেল অনেক দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে পারতেন। তিনি অনেক বড় রেসারদের পিছনে ফেলে জয় করেছেন বহু রেস এবং জিতে নিয়েছেন অসংখ্য ভক্তের মন।

মউটনের অর্জনের তালিকা অনেক বড়। তিনি  একমাত্র নারী যিনি কিনা র‍্যালি WRC ইভেন্টেরও জয়ী। তিনি প্রথম বিখ্যাত অডি কোয়ার্টো চালান এবং সেরা নির্মাতা হিসেবে পুরস্কার জিততে প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা করেন। তিনি একমাত্র নারী যিনি কিনা ক্রেজি ফাস্ট গ্রপ বি নামক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি গ্রপ বি সিরিজ ব্যান করে দিল। এসেই বছরেই মউটন তার রেসিং জীবন থকে অবসর নিয়েছিলেন।

১৯৮৮ সালে আবার তাকে দেখা গেল রেস অফ চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতার সহ প্রতিস্থাতা হিসেবে। এই সংস্থাটি ছিল মুলত বিশ্বের সেরা চ্যাম্পিয়নদের একসাথে করা।  তিনি FIA তে কার্যনির্বাহী এবং অন্যান্য রেস কার ড্রাইভার সংগঠনের একজন সদস্য ছিলেন।

ম্যারি ইভ ডুফোল্ট

ক্যানাডার মডেল ম্যারিইভ কখনোই পেশাগত ভাবে রেসার হতে চান নি। ছোটবেলা থেকে বাবা আর ভাইয়ের গাড়ির প্রতি ভালবাসা দেখেই তার বেড়ে ওঠা।  ছোট বেলায় তিনি গো কার্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন । এবং কিছু প্রতিযোগিতায় জয়ীও হন। গো কার্টের পর ম্যারি ইভ ছোটদের ফর্মুলা BMW ও স্কিপ বারবার রেস সিরিজে অংশ নেন। ক্যানাডিয়ান নাসকার টায়ার সিরিজে অংশ নেয়ার পর তার জীবন পুরোপুরি পালটে গিয়েছিল। তিনি প্রথম নারী রেসার যিনি কিনা ডজ রেসিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। এই রেসের মাধ্যমে তিনি নাসকার স্টার ড্রাইভার ব্র্যাড ক্যাসেলসকির প্রশংসা অর্জন করেন এবং পরে তিনি নাসকার চ্যাম্পিয়নশিপে কয়েকবার রেসে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। একজন আবেদনময়ী কার রেসার হবার পাশাপাশি তিনি একজন ফ্যাশন মডেল ও নিয়মিত টিভিতে কাজ করতেন।

স্যানন ম্যাকইনতোস

স্যানন পেশাগতভাবে একজন যোগ্য কার রেসার।  তার বয়স যখন ৫ বছর তখন থেকেই তিনি গাড়ি রেস শুরু করেন। তিনি প্রায় ১০০ উপর রেসে জয়ী হন। এছাড়াও তিনি গো কার্টস রেস সহ বিভিন্ন ছোটোখাটো রেসে জয়ী হয়েছেন।

পেশাগত  ভাবে তার গাড়ি চালানো শুরু হয় ২০১৪ সালে। স্যানন আরকা রেসিং সিরিজে অংশ নেন।  বিভিন্ন কম্প্যানি ও গাড়ি সম্পর্কিত ব্র্যান্ডের ইভেন্ট গুলোতে অংশ নেন ও গাড়ি সম্পর্কিত নানা বিষয়ে বক্তৃতা দেন।

স্যাবিন স্ক্যামিচ

স্যাবিন একজন জার্মান রেস ড্রাইভার ও পোর্সে ও বিএমডাব্লিউ গাড়ির রেসের সদস্য।  তিনি টিভিতেও অনেক কাজ করেছেন ।  তার চরিত্রে কিছু মজাদার গুন ছিল যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। তার বেড়ে ওঠা জার্মানের নুরেমবার্গে যেখানে বিখ্যাত গাড়ির রেস হয়। যার কারনে ছোটবেলা থেকেই তার গাড়ি ও রেসিং এর প্রতি আকর্ষণ। তিনি ছোটোখাটো অনেক রেসেই জয়ী হয়েছেন। তিনি বর্তমানে রিং ট্যাক্সি ও বিএমডাব্লিউ গাড়ি চালান। তার গাড়ি চলানো খুবই উপভোগ্য এবং মাঝে মাঝে তিনি যাত্রীদের ভড়কে দিতে পছন্দ করেন।

গাড়ির প্রতি তার আগ্রহ এবং ভালবাসার কারনে তাকে ‘কুইন অফ কার”বলে ডাকা হয় । ২০০০ সালে তিনি “টপ গিয়ার” নামে একটি টিভি শো তে অংশ নেন এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

সবশেষে বলা যায় যে বাহিরের দেশগুলোতে নারীরা সমান তালে পুরুষদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে চলছে। মোটর রেসিংয়ে নারী রেসার যারা আছেন, তারাও সফলতার সাথে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশেও এখন অনেক নারী আছেন যারা নিজে ড্রাইভ করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত সুবিধা বা নিরাপত্তার কথা ভেবে রেসিং প্রতিযোগিতায় যেতে পারেন না। হয়ত আগামীতে বাংলাদেশ থেকেও নারী রেসার উঠে আসবে, আর বিশ্ব অঙ্গনেও তাদের প্রতিভা তুলে ধরবে।

নারীরা যেন নিরাপদে গাড়ি চালাতে পারে এবং তাদের গাড়ি চোখে চোখে রাখতে পারে তার জন্য তাদের গাড়িতে ব্যবহার করছেন প্রহরী ভেইকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top