প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

রাজপথে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল:প্রয়োজন একটু সচেতনতা ও স্বদিচ্ছা

রাজধানী ঢাকায় মানুষ যখন বাসা থেকে বের হয় তখন যেন নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বের হয়। কখন ঘটে যায় দুর্ঘটনা, কখন চলে যায় প্রাণ। আগে ঢাকার রাস্তায় এত বেশী সড়ক দুর্ঘটনা ছিল না কিন্তু বর্তমানে রাজধানী কেন্দ্রীক হওয়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে । আর এই সাথে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির হারও বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। যেন মৃত্যুর মিছিল চলছে রাজধানীর ভেতরে । এমনকি ঢাকা থেকে অন্যান্য জেলায় যাওয়ার পথে ঘটে যায় মারাত্মক সব সড়ক দুর্ঘটনা । ২০১৮ সালে ফুটপাথে দাড়িয়ে থাকা দুজন শিক্ষার্থী বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারায়। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে খবরটি তখন থেকেই উত্তাল নগরীতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ । হাজার হাজার শিক্ষার্থী নেমে আসে রাজপথে বিক্ষোভ কর্মসূচী নিয়ে। এখানে মূলত চালকের অজ্ঞতা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইনের অবমাননা সবকিছুকে দায়ী করা হয়। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ নাগরিক এখন সড়ক দুর্ঘটনা কাছে জিম্মি। বাংলাদেশে এসব সমস্যার সমাধানে আগে বের করতে হবে সমস্যার প্রকৃত কারণ।

চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা হচ্ছে

সড়ক দুর্ঘটনা ও এর প্রকৃত কারণ

সড়ক দুর্ঘটনা ও এর প্রকৃত কারণ খুঁজতে গেলে পুরো পরিবহণ পদ্ধতিকেই দায়ী করতে হবে। এককভাবে কখনোই সমগ্র সড়ক দুর্ঘটনার উন্নয়ন করা সম্ভব না। চালক, সড়ক এবং যানবাহন সবকিছুর  মিলিত উন্নয়নেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব। আমরা সড়ক দুর্ঘটনার  কিছু সম্ভাব্য কারণ দেখাবো –

চালকের ক্ষেত্রে

  • চালকের অদক্ষতা, অজ্ঞতা, সাধারণ জ্ঞানের অভাব।
  • চালকের বেপরোয়া মনোভাব।
  • প্রশিক্ষণ , কোর্স বা অন্যোন্য পরীক্ষার অভাব।
  • লাইসেন্স করায় অনীহা/ লাইসেন্স তৈরি না করা/জাল লাইসেন্স তৈরি বন্ধ না করা।
  • ট্রাফিক আইন না জানা / মানতে নারাজ।
  • ট্রাফিক আইন সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব।
  • ক্ষমতার অপব্যবহার/ স্বজনপ্রীতি ।
  • রাজনৈতিক প্রভাব।
  • প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানোর প্রবণতা।
  • নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালানো আর এর বিরুদ্ধে কোন শক্ত আইনের প্রয়োগ না করা ।

ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার মানসিকতা থাকতে হবে

সড়কের ক্ষেত্রে

  • ভাঙ্গা ও সরু রাস্তা।
  • ডিভাইডার, লেন , পর্যাপ্ত ট্রাফিক সংকেত পদ্ধতির অভাব।
  • পর্যাপ্ত ওভারব্রিজের অভাব/ উপযুক্ত ওভারব্রিজ না থাকা।
  • বাস স্টপেজের সঠিক স্থান ঠিক না করা।
  • সড়ক নির্মাণ/ উন্নয়নের অভাব।
  • ফুটপাথ ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনার কারনে ফুটপাথের অংশ কমে যাওয়া ।

যানবাহনের ক্ষেত্রে

  • ত্রুটিপূর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি রাস্তায় চালানো।
  • গাড়ির ধারণ ক্ষমতার বাইরে মালামাল বা যাত্রী ওঠানো ।
  • গাড়ি যত্রতত্র পার্কিং।
  • গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আগে গাড়ির সব পার্টস চেক না করা।
  • বিকল্প যানবাহনের সুবিধা না থাকা।
  • সময় নিয়ন্ত্রণ না করা।
  • মালিকের সাথে চালকের সুসম্পর্ক না থাকা।

সমাধানে থাকতে হবে স্বদিচ্ছা

এগুলো তো হলো সড়ক দুর্ঘটনা ও এর প্রত্যক্ষ কারণ। কারণগুলো যেহেতু চিহ্নিত করা গিয়েছে এখন দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে সবগুলো সমস্যা সমাধান করা।  একক ভাবে কাজ কখনোই সম্ভব না। সরকার, রাষ্ট্র, সাধারণ জনগণ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে, মানতে হবে আইন। নতুন সড়ক আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে । জনগণ যদি সে আইন মেনে চলে তাহলে দুর্ঘটনার হার তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কমে যাবে। সমধানের উপায় বলতে গেলে হাজার খানেক উপায় বলাই যায়। কিন্তু ঠিক কতগুলো বাস্তবায়িত হবে বা হতে পারে সেটা হচ্ছে দেখার বিষয় –

ট্রাফিক আইন ও অন্যান্য আইন

  • ট্রাফিক আইন মানতে হবে সবার । শুধু চালক একা মানবে আর বাকিরা মানবে না সেটা হলে হবে না।
  • কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় ট্রাফিক আইন সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।
  • রাস্তার পাশে ট্রাফিক আইন লেখা বোর্ড, টিভিস্ক্রিন ইত্যাদি সচেতনমূলক কর্মকাণ্ড করা।
  • ট্রাফিক পুলিশকেও হতে হবে দায়িত্ব পরায়ন। তার দায়িত্ব তাকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কোন প্রকার অনিয়ম বা দুর্নীতি করা চলবে না।
  • ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করতে পারেন যে কেউ।
  • রাস্তায় ব্যবহৃত সাইনবোর্ড ঠিক মত দেখে, পড়ে নিন এবং সেগুলো মেনে চলতে চেষ্টা করুন। যেমন কোথাও যদি লেখা থাকে গতি সীমিত বা হর্ন বাজানো নিষেধ তাহলে সেগুলো অবশ্যই মেনে চলবেন।
ট্র্যাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে জানতে হবে

চালক ও গাড়ির ক্ষেত্রে

  • চালককে অবশ্যই যানবাহন চালনায় সঠিক প্রশিক্ষণ ও সঠিক বয়স প্রাপ্ত হতে হবে।
  • চালকের ন্যূনতম শিক্ষা, মানবীয় গুণাবলী, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করতে হবে।
  • রাজনৈতিক প্রভাব, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি প্রয়োগ কমাতে হবে। অর্থাৎ আইন সবার জন্য সমান এই নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
  • নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের কুফল / অপকারিতা সম্পর্কে চালককে অবহিত করতে হবে যাতে গাড়ি চালানোর আগে বা পরে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে।
  • প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালাবেন না । মনে রাখবেন আপনি যখন ড্রাইভিং সীটে বসেন তখন আপনার হাতে অনেকগুলো মানুষের জীবনের দায়িত্ব থাকে।
  • অতিরিক্ত মালামাল বা যাত্রী তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিত্যাগ না করলে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরা হয়ে যাবে দুঃসাধ্য

সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে

  • যত্রতত্র রাস্তা পার হবেন না । মনে রাখবেন, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী।
  • কোথাও যাবার জরুরী প্রয়োজন থাকলে আগে আগে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • রাস্তায় যথাসম্ভব ট্র্যাফিক আইন মানতে চেষ্টা করুন।
  • ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করুন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পার হবেন না।
  • রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং এবং সংকেত সম্পর্কে জেনে নিন।
  • শুধু শুধু কোন আন্দোলন বা হরতাল করে রাস্তা আটকে অযথা জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না।
ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করতে শিশুদের আগ্রহী করে তুলুন

পরিশেষে বলবো যে , মানুষ অভ্যাসের দাস। কথাটা শুনতে খারাপ হলেও নির্মম সত্য। আমাদের এই ছোট নগরীতে আমরা যদি সাধারণ কিছু আইন মানার অভ্যাস করে ফেলতে পারি তাহলে দেশে  সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার ঘটনা অনেক কমে যাবে। নিজে আইন মানুন, অপরকেও আইন মানতে উৎসাহিত করুন। পত্রিকা খুলেই আমরা আর কোন মৃত্যুর খবর দেখতে চাই না, শুনতে চাইনা কোন শোক সংবাদ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top