প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 3 মিনিট

গাড়ির পর, এবার ড্রাইভার ছাড়া রাস্তায় চলবে তিন চাকার অটোরিকশা!

যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম শর্ত। যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত সেই দেশকে তত উন্নত বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশেও এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যানবাহনের ব্যাপকতাও বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে রাস্তায় দামী গাড়ির পাশাপাশি অনেক ধরনের অটোরিকশাও চলতে দেখা যায়। বাংলাদেশেও বর্তমানে অটোরিকশা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর উন্নত দেশে এই অটোরিকশাকে করা হচ্ছে সেলফ ড্রাইভিং বা চালকবিহিন। ব্যাংককে এই সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশাগুলো রাস্তায় চালানোর জন্য নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং সফটওয়্যারের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে বিলিয়ন ডলার। এখন এটাই দেখার বিষয় যে, কবে রাস্তায়  ড্রাইভার ছাড়াই চলবে তিন চাকার অটোরিকশা ‘টুকটুক’!

ব্যাংককের রাজধানী থাইল্যান্ডে এক শতাব্দী ধরে চলে আসছে তিন চাকা বিশিষ্ট  রঙবেরঙের  বাহারী অটোরিকশা। সামনের নভেম্বরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একত্রে থাইল্যান্ডের অটোমোবাইল প্রযুক্তিকে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে একটি সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশার পরীক্ষামূলক মডেল বাজারে আনবে এবং ড্রাইভার ছাড়াই চলবে তিন চাকার অটোরিকশা ‘টুকটুক’।

তিনচাকার অটোরিকশা ‘টুকটুক’।

এশিয়ার সেলফ ড্রাইভ কারের উন্নয়নের জন্য জাপান ও চায়নার দুটি বড় কোম্পানি বাইডু ও টয়োটা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে।তারা সেলফ ড্রাইভিং কারের সফটওয়্যারের উন্নয়ন ও গতিপথ নিয়ে গবেষণা করছে।এশিয়ার দক্ষিন-পূর্বে সেলফ ড্রাইভিং কার তৈরির কোন প্রতিযোগী নেই।সেকারনেই থাইল্যান্ড এই প্রযুক্তির পন্যের মোট ১২ শতাংশ নিজেরাই উৎপাদন করে।

ন্যাশনাল সাইন্স এন্ড টেকনোলোজির প্রিন্সিপাল মি.একারুট ভিয়ানিত বলেন, নিয়ন্ত্রকদের বিশ্বাস যে এই যানটি খুব শীঘ্রই জনসাধারনের জন্য রাস্তায় পরিচালিত হবে এবং থাইল্যান্ডের মানুষজনও এই যানটিকে খুব দ্রুত গ্রহণ করবে।

মি.অ্যামারেস চুমসাই (ব্যাংকক ভিত্তিক এয়ারওভারের প্রতিষ্ঠাতা) বলেন,

‘টুকটুক’ যানটি পরীক্ষামুলক কাজে নেওয়া হয় কারন এই তিন চাকার যানটি খুবই শক্তি সঞ্চয়ী এবং এর কিছু পার্টস সস্তা/সহজলভ্য আর থাইল্যান্ডের উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত।

সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি  

স্ক্রিন

সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশার এয়ারওভার মডেলের স্ক্রিনে এর গতি দেখা যাবে। এছাড়া কতটুকু ইলেকট্রিসিটি ট্যাংকে থাকে তা দেখতে পাওয়া যাবে।

ত্রিমাত্রিক ম্যাপিং

চালকের প্রয়োজন অনুযায়ী হ্যান্ডেলবার দ্বারা নিয়ন্ত্রন ও এর ছাদে অবস্থিত ত্রিমাত্রিক ম্যাপিং এর মাধ্যমে পুলিশের সাইরেন অনুসরণ করা যাবে।

সেন্সর

সেলফ ড্রাইভিং যানগুলো চালানোর মূল হলো জিপিএস সেন্সর। সেন্সরের মাধ্যমে একটি সেলফ ড্রাইভিং যান স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে চলতে পারে।

অন্যান্য তথ্য

দ্রুত পথ পারি দিতে জুড়ি নেই অটোরিকশার।

এই সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশা মাধ্যমে আমরা পরিবেশ ও ট্র্যাফিকের সম্পূর্ণ তথ্য একসাথে করে সরবরাহ করতে পারবে।

বর্তমান পরিকল্পনা

সেলফ ড্রাইভিং কার তৈরির পরীক্ষাগুলো আগামী ছয় মাস ব্যাপী চলতে পারে। উদ্যোক্তাগণ এই যানটির ব্যবহারের তথ্য বিশ্লেষন করবে ও সিদ্ধান্ত নেবে যে, ভবিষ্যতে এই প্রজেক্টে মিনিবাসের সংযোজন করা যাবে কিনা।‘স্যাটলপডস’ নামে ১৫ সীটের একটি মিনিবাস  তৈরি করা তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। বেশ কয়েকটি যান রাস্তায় বাস্তবে চালানোর পর আমরা এর প্রতিক্রিয়া ও তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বুঝতে পারব প্রজেক্টটি কতটুকু বড় করা যাবে বলেন উদ্যোক্তাগণ।

থাইল্যান্ড হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গাড়ি তৈরির মূল কেন্দ্রবিন্দু। শেষ বছর প্রায় ২.২ মিলিয়ন গাড়ি তারা তৈরি করেছে, এবং গাড়ির বিশ্বের সকল দেশের কথা মাথায় রেখে থাইল্যান্ড  সরকার ইলেকট্রিক ও সেলফ ড্রাইভিং কারের উপর আরো বিনিয়োগ করারা কথা চিন্তা করছে। থাইল্যান্ড সর্বপ্রথম একটি দেশ যেখানে তারা নিজেদের  সেলফ ড্রাইভিং গাড়ির উপর ধার্যকৃত কর কমানোর জন্য ও বিক্রি বৃদ্ধি করার জন্য প্রস্তাব রেখেছে।

প্রেসিডেন্ট অফ ইলেকট্রিক ভেহিকেল এ্যাসোসিয়েশন মি. ইয়ুসাপং বলেন,

চালকবিহিন অটোরিকশাগুলো মুলত ইলেকট্রিক গাড়ির ছাঁচেই বানানো হবে ,সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশার প্রযুক্তি এতে সংযোজন করবে মাত্র।

আইএইচএস মার্কিন এর মতে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সাড়া বিশ্বে প্রায় ২.২ মিলিয়ন ইউনিট গাড়ি উৎপাদনের মাধ্যমে থাইল্যান্ড আশা করছে ,যে তারা  একটি অন্যতম সেলফ ড্রাইভিং গাড়ির তৈরির জায়গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

যদিও থাইল্যান্ডের রাস্তায় সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশাগুলো চলায় কোন বিশেষ আইন বা বাঁধা নেই।তারপরও সেলফ ড্রাইভিং কারগুলো থাইল্যান্ডের রাস্তায় চালানটা আপাত দৃষ্টিতে অতটা সহজ না। থাইল্যান্ডের রাস্তাগুলোকে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সংস্থা অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। এরমধ্যে ভুমি ও সড়ক অধিদপ্তরেরও এই উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছে।

রোবো ট্যাক্সি

গ্র্যাব ট্যাক্সি হচ্ছে থাইল্যান্ডের প্রধান ট্যাক্সি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, যা ২০২২ সালের মধ্যে থাইল্যান্ডের রাস্তায় রোবো ট্যাক্সি আনার পরিকল্পনা করছে। এই সেবাটি সিঙ্গাপুরে তৈরি তাই সেখানেই প্রথম শুরু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সানসিরির লক্ষ্য হল,সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশাগুলোকে মানুষকে বাসা থেকে কাছের কোন দোকান বা শপিংমলে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার কাজ করবে আর এই প্রোগ্রাম ব্যাংকক ও অন্যান্য শহরেও জনপ্রিয়তা পাবে।

আশা করা যায় যে, ২০২৪ সালের মধ্যে সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশাগুলো থাইল্যান্ডের রাস্তায় সফলভাবেই চলতে দেখা যাবে। প্রযুক্তির নতুন চমক এই সেলফ ড্রাইভিং অটোরিকশা। আগ্রহী গ্রাহকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে যে,কবে এই গাড়িগুলো এসে সফল ভাবে রাস্তায় সাধারণ জনগণের মন জয়ের মাধ্যমে প্রশংসা অর্জন করবে।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top