প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচলেও সড়কে জীবন বাঁচবে তো!

জনমনে এখন শুধু একটাই আতঙ্ক- করোনাভাইরাস ! নতুন বছরের শুরুতেই পুরো দুনিয়ার মানুষের দুশ্চিন্তা আর ভয়ের একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রোগটি। হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাইরাসটি মানুষের মাঝে সংক্রামিত হয়ে যাচ্ছে।

করোনা ভাইরাসে সারাবিশ্বে এই পর্যন্ত ১.২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া সবগুলো দেশ মিলে এই ভাইরাসের কারণে মারা গেছে ৪ হাজারের কিছু বেশি মানুষ। জানুয়ারির শেষ দিকে শুরু হয়ে, দেড় দু মাসের মধ্যে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাওয়ার ফলে বিশ্ববাসী করোনাভাইরাসের মতিগতি বুঝে উঠতেও বেশ হিমশিম খেয়ে গেছে।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনের ইউহান প্রদেশে। তারপর এই অল্প সময়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের ১২৪ টি দেশে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে রাখা হয়েছে কোয়েন্টেরাইনে।

করনাভাইরাস থেকে বাঁচতে করনীয়

এইবার আপনাকে আরেকটা মৃত্যুপুরীর গল্প বলি।

আমাদের বাংলাদেশের রাজপথও যেন একটা মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০২০ সালের শুধুমাত্র প্রথম দুইমাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ১০২৭ জন। আহত হয়েছে ১৩০১ জন। প্রতি বছরই গড়ে ৪০০০ এর মতো মানুষ সড়ক দুর্ঘটনার মারা যায়। তবে বছরের শুরুতেই সড়ক পথে যে মৃত্যুর মহড়া দেখা যাচ্ছে, তাতে এই বছর শেষে তা গড় মৃত্যুর চাইতেও তিনগুন বেড়ে যাবার সম্ভাবনা খুবই প্রবল।

এবার পুরো বিশ্বের করোনাভাইরাস আর শুধু বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা পাশাপাশি রেখে একটু তুলনা করা যাক।

করোনাভাইরাসের কেস ফ্যাটালিটি রেট বা আক্রান্ত হওয়ার তুলনায় মৃত্যুর হার শতকরা ৩.৪ জন। শিশু কিশোর , যুবক বা প্রায় মধ্য বয়স্কদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার আরো কম। করোনাভাইরাসের আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এবং তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। আশা করা যায় খুব দ্রুতই বাকি আক্রান্ত রোগীদের একটা বড় অংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। আর বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররাও এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সারাবিশ্ব যেভাবে প্দক্ষেপ নিয়েছে, এতে ইবোলা ভাইরাস, সার্চ করোনা, মার্চ করোনা, কলেরারসহ অন্যান্য সকল সংক্রামক ব্যাধির মতো করোনা ভাইরাসও খুব দ্রুতই নিজের শেষ দেখে ফেলবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হবে শীঘ্রই!

অপরদিকে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার শতকরা ৪০ জন। মানে বলা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষই মৃত্যুবরণ করে। আর এই বছর কেবল শুরুর দুই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিহত মিলিয়ে ভুক্তভোগী প্রায় ২৫০০ মানুষ। যারা আহত হয়ে বেঁচে থাকে তাদের  কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করে, কেউবা নিজের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলে বেশ কিছু সময়। কপাল জোরে বেঁচে গেলেও তারা আজীবন শারীরিক কোন না কোন সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যা নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকে। আরেকটা ব্যাপার হলো, করোনার ফ্যাটালিটি রেট যেখানে শিশুকিশোর ও যুবকদের মধ্যে সবচাইতে কম। অন্যদিকে প্রতিদিনের পত্রিকা খুললেই- সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু-কিশোর বা কোন না কোন যুবকের মৃত্যুর খবর।

করোনাভাইরাস বনাম সড়ক দুর্ঘটনার এই তুলনা দেখে কি আপনার কাছে মনে হচ্ছে না, করোনাভাইরাসের চাইতেও সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মক ও তীব্র মহামারীর আকার ধারণ করেছে আমাদের দেশে?

এতসব পরিসংখ্যান সামনে আনার মানে এই নয় যে, করোনাভাইরাসকে ছোট করে দেখার প্রয়াস বা অবকাশ রয়েছে। করোনাভাইরাস অবশ্যই প্রাণঘাতী রোগ। তবে হঠাত উদ্ভুত এই রোগের উপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণই বা কতোটা ছিল। প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলেও, এখন এর থেকে বাঁচার উপায়ও আমাদের জানা আছে। দু একটা দেশে মহামারী আকার ধারণ করলেও সেটা ছিল প্রকৃতির সৃষ্ট!

কিন্তু অপরদিকে দেখুন, সড়ক দুর্ঘটনার মতো একটা নীরব মহামারী আমাদের হাত ধরে ধীরে ধীরে মহিরুহের আকার ধারণ করছে। এসব মানবসৃষ্ট মহামারীকেও অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।

শুধুমাত্র এই একটি কথা বলার জন্যই এত পরিসংখ্যানের অবতারণা। করোনা ভাইরাসে সবাই আক্রান্ত হয় না, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার বর্তমান হার দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। কখন না কখন নিজের জীবন রাস্তায় পিষ্ট যায়। এই ভয় নিয়েই প্রতিদিন আমরা রাস্তায় বের হই। কিন্তু কিন্তা করে দেখুন, করোনাভাইরাস নিয়ে কিন্তু ব্যাক্তিপর্যায়ে এতটা আতঙ্ক এখনো আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। কারণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর মাস্ক কিনে সকলেই কররোনা নিয়ে একটা সচেতন যায়গায় পৌঁছে গেছেন। অর্থাৎ সচেতনতাই আতঙ্ক হ্রাস করে।

সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে চাই জনসচেতনতা।

এবার নিশ্চই বুঝা যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কেন এখনো আমরা আতঙ্কিত থাকি! সড়ক ও পরিবহণ খাতে আমাদের মধ্যে সচেতনতার বেশ অভাব। ব্যাক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ে এই অভাবই সড়ক দুর্ঘটনাকে মহামারী রূপ দিয়েছে। কে জানে, হয়ত করোনাভাইরাসের ভয়ে মাস্ক পরিহিত কেন ড্রাইভার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে, চাপা দিচ্ছে অন্য কোন মানুষের জীবন!

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বাজারে মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার যে ধুম লেগে গেছে, তাতে তৈরি হয়েছে সংকট। আরেক দিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে দাম। অর্থাৎ অনিয়ম ! পরিবহণ খাতেও এখন অনিয়মের ছড়াছড়ি। ২০১৮ সালের আগস্টে কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায়  দুই কলেজ শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর কড়াকড়ি করা হল সড়ক আইন। বাড়লো জেল জরিমানা। তবুও কেন সড়কে এই মৃত্যুর মিছিল থামছে না!


আইন বা নিয়মনীতির চাইতেও আমাদের দরকার মূল্যবোধ এবং সৎ ব্যবহার। পারস্পরিক মূল্যবোধের যে অভাব, তা মিটে গেলে অনিয়ম চর্চার অভ্যাসও দূর হয়ে যাবে। একজন মানুষ যদি তার আশেপাশের মানুষের ভাল-মন্দ ভেবে কাজ করেন তাহলেই আমরা পারি আমাদের নিজেদের তৈরি মহামারী দূর করতে। ড্রাইভারকে ভাবতে হবে যাত্রীর, পথচারীর কথা। গতির কথা আর ট্রাফিক আইন মাথায় রেখে চালাতে হবে গাড়ি। তাহলে কমে যাবে সড়কে মৃত্যুর মিছিল।

সড়ক পথে গাড়ির সুরক্ষায় ও গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রহরী

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top