প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

এয়ারব্যাগ কীভাবে কাজ করে?

গাড়ির ভেতরে এমন কিছু পার্টস থাকে যেগুলো বড় কোন দুর্ঘটনার ঘটার সময় জীবন বাঁচানোর কাজ করে। সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই আমাদের মাথায় যেটা আসে সেটা হচ্ছে সীট বেল্ট। কিন্তু সীট বেল্ট ছাড়াও আরেকটি জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রের নাম হচ্ছে এয়ার ব্যাগ। এয়ারব্যাগ একটি ছোট্ট, নরম, বাতাসের কুশন। গাড়ি কোন বড় দুর্ঘটনায় পড়লে মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যে ব্যাগটি বের হয় এবং মানুষের জীবন রক্ষা করে।

ড্যাশ বোর্ডে থাকে এয়ারব্যাগ।

১৯৯৮ সাল থেকে আমেরিকায় যতগুলো গাড়ি বিক্রি হয়েছে সবগুলোর মধ্যে ড্রাইভার ও যাত্রী দুইজনের জন্যই এয়ারব্যাগ দেয়া থাকতো। একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়, গাড়ির সামনের সীটে বসা যাত্রীদের প্রায় ৩০% যাত্রীকে দুর্ঘটনার সময় জীবন রক্ষা করে এই এয়ারব্যাগ। এছাড়াও  সীটের উপরে ও দরজার সাথে এয়ারব্যাগ বসানো থাকে। কিছু গাড়িতে ৬-৮ টি পর্যন্ত এয়ারব্যাগ থাকে। শুরুর দিকে মানুষ সীটবেল্ট ব্যবহারে অনেক প্রশ্ন তুলেছিল। এবং এয়ারব্যাগ ব্যবহার ছিল গবেষকগনের অনেক গবেষণা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল।

গাড়ির দরজায়ও এখন এয়ারব্যাগ থাকে ।

পৃথিবীর অন্যান্য সব সুত্রের মতই গাড়ির অ্যাক্সিডেন্টও নিয়ন্ত্রণও হয় পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রানুযায়ী অর্থাৎ, গতির সূত্রানুযায়ী । গতির সূত্রানুযায়ী, বল প্রয়োগের মাধ্যমে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। কোন বস্তুকে ধাক্কা না দিলে সেটা নিজ থেকে নড়ে না। যেকোন বস্তুর নির্দিষ্ট ভর থাকে। আরও খোলাসা করে বললে,  কোন বস্তু কতটুকু ভর বহন করতে পারে অথবা বস্তুটি কতটুকু ভার বহন করতে পারে। এছাড়াও আরেকটি বিষয় হচ্ছে গতি। যেকোন বস্তু যার গতি ও ভর থাকে তাতে গতি সম্পর্কিত শক্তিও থাকে। আপনার গাড়ি  যতটুক ভারী এবং যত দ্রুত আপনি যাচ্ছেন তা নির্ভর করে গতি সম্পর্কিত শক্তির উপর। আপনি হঠাৎ করে থামতে পারেন বা  অন্য কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়েও থামতে পারেন  , পুরোটাই নির্ভর করে আপনার ইচ্ছার উপর । যদিও গাড়ির চাকাগুলো রাস্তার সব রকমের চাপ  সহ্য করার ক্ষমতা রাখে এবং সব ধরনের প্রভাব সহ্য করতে পারে তবু  গাড়ির চালক এবং প্যাসেঞ্জারের জন্য ব্যাপারটি যথেষ্ট ক্ষতিকর।

এখন সমস্যা হচ্ছে, গাড়ি যখন চলে তখন গাড়ির ভেতরে বসা যাত্রীও চলে অর্থাৎ, মানুষেরও তখন গতি থাকে। আর  যখন গাড়ি থামে তখনও মানুষ সেই গতিতেই থাকে। নিউটনের গতির প্রথম সূত্রানুযায়ী, কোন বস্তু যখন চলতে শুরু করে তখন সেই বস্তুকে না থামানো পর্যন্ত বস্তুটি চলতেই থাকবে। কয়েক দশক ধরে সীটবেল্ট নিরাপত্তার কাজ করে আসছে।  কিন্তু সীটবেল্টটি শুধু আপনার দেহের অংশটুকু আটকে রাখে, মাথার অংশ না। কাজেই নিউটনের এই সূত্র অনুযায়ী আপনি যখন গাড়িতে সীটবেল্ট বেঁধে বসবেন তখন গতির কারনে আপনার মাথাটি সামনের দিকে চলতেই থাকবে । আর যখন অ্যাক্সিডেন্ট হবে সবার আগে আপনার  মাথাটি স্টিয়ারিং হুইলে বা পাশে থাকা গ্লাসে গুড়িয়ে যাবে।

গাড়ির দুর্ঘটনায় আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে এয়ারব্যাগ।

আর এই বিপদ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে এয়ারব্যাগ নামক ডিভাইসটি। এয়ারব্যাগ  সাধারণত supplementary restraint system (SRS) নামে পরিচিত। এখানে সাপ্লিমেন্টরি বলতে এয়ারব্যাগ সীটবেল্টের সম্পুরক হিসেবে কাজ করে ও সীটবেল্টকে সাহায্য করে বুঝানো হয়েছে। আবার সীটবেল্ট শক্ত করে না বেঁধে শুধু এয়ারব্যাগের উপর নির্ভর করাটাও বোকামি । প্রাথমিকভাবে কোন এয়ারব্যাগ যখন ফুলে ওঠে যখন কোন দুর্ঘটনার সময় গাড়ির গতিও কমে যায়।

কীভাবে এয়ারব্যাগ কাজ করে?

১। যখন গাড়ি কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খায় তখন খুব দ্রুত বেগে গাড়ির গতি কমে যায়।

২। অ্যাকসিলরোমিটার গতি পরিবর্তনের ব্যাপারটি নির্দিষ্ট করে ও তথ্য প্রেরণ করে। অ্যাকসিলরোমিটার হচ্ছে এক ধরনের ইলেকট্রোনিক চিপ যা গতির ত্বরণ পরিমাপ করে।

৩। যদি গাড়ির গতি ঠিকভাবে কমানো যায়, তাহলে অ্যাকসিলরোমিটারের ট্রিগার, এয়ারব্যাগের সার্কিটকে  দ্রুত কমায় । যা সাধারণ ব্রেকে অতটা শক্তি উৎপাদন সম্ভব হয়না।

৪। এয়ারব্যাগের সার্কিটটি তাপ উৎপাদনকারী কোন উপাদানের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ করায়। টোস্টারের ভেতরে যেমন তার থাকে ঠিক তেমন তার এই বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য ব্যবহার করা হয়।

৫। তাপ উৎপাদনকারী উপাদানটি একটি রাসায়নিক বিস্ফোরন ঘটায়। পুরানো এয়ারব্যাগগুলোতে বিস্ফোরণের জন্য সোডিয়াম অ্যাজাইড ব্যবহার করা হতো। নতুন এয়ারব্যাগগুলোতে অন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।

৬। যখন বিস্ফোরণ ঘটে তখন অনেক গ্যাস উৎপাদিত হয়। গ্যাসগুলো ক্ষতিকর নয়। সাধারণত নাইট্রোজেন বা অ্যার্গন গ্যাস উৎপাদিত হয়। আর সেই গ্যাসগুলো স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে একটি নাইলনের ব্যাগে জমা হয়।

কাপড়ের নাইলনের ব্যাগটি স্টিয়ারিং হুইলের ভেতর ভাঁজ করা থাকে।

৭। যখন এয়ারব্যাগটি খুলতে শুরু করে, তখন প্লাস্টিকের কভারের ভেতরে গ্যাস জমা হয় আর ড্রাইভারের ঠিক সামনে যেখানে স্টিয়ারিং হুইল থাকে সেখানে ঢেকে ফেলে। আর এই ব্যাগটি খোলার জন্য এক ধরনের চকের গুড়া জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয় , যাতে সহজেই ব্যাগটি খোলে।

৮। সামনের দিকে চলার কারনে (গতির সূত্রানুযায়ী ) ড্রাইভার ব্যাগটিকে বিপরীত দিকে ধাক্কা দেয়। এই ধাক্কার মাধ্যমে ব্যাগের ভেতরে থাকা গ্যাসটি ব্যাগটি ফুলে উঠে। তখন ব্যাগের চারপাশে থাকা  ছোট ছিদ্র গুলোর  মাধ্যমে সম্পূর্ণ ব্যাগটি বের হয়ে যায় । এবং যখন গাড়িটি থামে তখন সম্পূর্ণভাবে ব্যাগটি খুলে যায়।

কিছু সাবধানতা-

১।যতটুক সম্ভব সীট নিয়ে পিছিয়ে বসুন। ড্রাইভারের ক্ষেত্রে এমন ভাবে বসুন যাতে প্যাডেল পর্যন্ত পা পৌঁছাতে কোন অসুবিধা না হয়।

২। যদিও বিভিন্ন গাড়ির ডিজাইন বিভিন্ন রকম হয়। তবু ড্রাইভার তার সীটে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত সরিয়ে বসতে পারেন। আর যদি বেশী পিছিয়ে বসার কারনে রাস্তা দেখতে আসুবিধা হয় তাহলে গাড়ির সীটটি উচু করে নিয়ে বসতে পারেন । হয়তো সব গাড়িতে সিট উঁচু করারা সিস্টেমটি না থাকতে পারে সেক্ষেত্রে আলাদা কোন গদি নিয়ে বসতে পারেন।

৩। এয়ারব্যাগ বরাবর মাথা বা ঘাড় রেখে না বসে, বুকের সাথে মিলিয়ে বসতে চেষ্টা করুন । সেক্ষেত্রে স্টিয়ারিং হুইলটি বাঁকা করে নিয়ে বসতে হবে আর যদি স্টিয়ারিং হুইলটি নড়ানো যায় তাহলে সুবিধামত বসিয়ে নেবেন।

৪। ১২ বছর অথবা এর থেকে কম বয়সী শিশুদের উচিৎ সবসময় পেছনের সীটে বসানো।

শিশুদের জন্য বুস্টার সীট ব্যাবহার করুন।

৫। ড্রাইভারের পাশের সীটে যেখানে এয়ারব্যাগ থাকে সেখানে এক বছরের কম এবং ১০ কেজির নিচে ওজনের শিশুদের নিয়ে কখনোই বসবেন না ।

৬। এক বছরের বেশী শিশুদের জন্য পেছনে বুস্টার সীট রাখতে হবে। এবং বুস্টার সীটের সবকিছু ঠিকমত গাড়িতে সংযুক্ত করে নেবেন। নাহলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

সবশেষে বলতে পারি যে , এয়ারব্যাগ গাড়ির পার্টস উন্নয়নের একটি অন্যতম ডিভাইস। লাইফ সেভিং বলে এর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুন বেশী। এই ডিভাইসটির এখনো  কিছু উন্নয়ন এবং আরেকটু নির্ভরযোগ্য হওয়া প্রয়োজন।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top