প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

পড়তে লাগবে: 3 মিনিট

একটি গাড়ি ও একটি গুপ্তহত্যা যেভাবে পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দিয়েছে

মানব সভ্যতা! আসলে এই মানব সভ্যতার ইতিহাস সংঘাতের ইতিহাস। অর্থাৎ টিকে থাকার লড়াই! আজকের এই পৃথিবীর যে রুপ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আপনা-আপনি আসেনি। এর পেছনে রয়েছে অনেক বিবর্তন, অনেক যুদ্ধ আর বিগ্রহ। সময়ের সাথে সাথে একেকটি প্রেক্ষাপট একেক রুপ দিয়েছে পৃথিবীকে। এই যে পরিবর্তনের ছোঁয়া, বদলে যাওয়া, এসব হয়েছে মানুষের কোনো না কোনো কাজের মাধ্যমেই। অনেক ছোট কিছুই হয়তো পৃথিবীকে দিয়েছে অনেক বড় পরিবর্তন। ইতিহাসের বাঁকে এমন অনেক কিছুই চোখে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি গাড়ি পথ পরিবর্তন করে, বলা যায় পৃথিবীর ইতিহাসই বদলে দিয়েছিলো। আচ্ছা, একবার ভাবুন,যদি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত না হতো, তাহলে আজকের পৃথিবীর এই অবস্থান কি থাকতো! এই পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্রের লড়াই, উদারতাবাদ, নব্যউদারবাদ, দেশের সীমানা, দেশ ভাগ, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক কি এখন কার মতোই থাকতো, নিশ্চয় নয়, কেননা বিশ্বযুদ্ধ না হলে পুরো পৃথিবীর আঙ্গিক একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের হয়ে উঠতো।

একটি গুপ্তহত্যা, একটি গাড়ি ও ১ম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত

২০ শতকে অনেক গাড়িই পৃথিবী পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। একেক সময় একেক গাড়ি এসে পাল্টে দিয়েছে সমাজ ব্যবস্থা সহ জীবন ব্যবস্থা। তবে অস্ট্রিয়ান গাড়ি প্রস্তুত কারক কোম্পানী Graf & stift সবচেয়ে বেশি স্মরনীয় হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে। ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনের অংশ এটি। গুপ্ত হত্যার প্রেক্ষাপটে এই গাড়িটি ইউরোপ সহ পুরো পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছিলো। পুরো একটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গাড়ি মিশে আছে।

অটোমোবাইল কোম্পানি Graf and stift এর লগো।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯১৪ সালের ২৮ শে জুন। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ, আর্চডিউক ফ্রেঞ্জ ফার্ডিন্যান্ড ও তার স্ত্রী সোফি, বসনিয়ান জাতীয়তাবাদী গ্যাব্রিলো প্রিন্সিপের ছোড়া গুলির আঘাতে নিহত হন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই গুপ্তহত্যার জেড়েই সূচনা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যার ফলাফল দাড়ায় ১৬ মিলিয়ন সামরিক এবং বেসামরিক মানুষের মৃত্যু। এই দুইজন যে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, সেই গাড়িতে তাদের চড়ার কথা ছিল না। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ওই গাড়িতে চড়ে ট্যুরে যাচ্ছিলেন, এবং গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন। শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

গাড়িটির নাম Graf & stift 28/32 ps Double phateon

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় Graf & stift 28/32 ps Double phateon

রাজপরিবারে কীভাবে এলো গাড়িটি?

অটোমোবাইল এর পূর্বে ঘোড়ার গাড়ি প্রচলিত ছিলো। বিশেষ করে শৌখিন ও রাজকীয় পরিবার ঘোড়ার গাড়ি পরিবহনের উপর নির্ভর করতো। সময়ের প্রেক্ষাপটে গাড়ির আবির্ভাব তাতে আনে পরিবর্তন। গাড়ির আবির্ভাব, প্রস্তুতকারকদের বিভিন্ন মডেল, বিলাস বহুল স্টাইল, রাজকীয় পরিবারের জন্য হয়ে উঠে আকর্ষনীয় এবং নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এই প্রেক্ষাপটে অস্ট্রো হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের শাসকরা নির্ভর করতে শুরু করে Graf & stift এর উপর। ঘোড়ার গাড়ি প্রচলনের বিপরীতে বিলাসবহুল অটোমোবাইল স্থান করে নেয় তাদের জীবন যাত্রায়। এটি বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, যখন শেষ হাবসবুর্গের মোনার্ক কার্ল যখন নির্বাসনে যান তখন Graf & stift চালিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন।

আরো একটি বিশেষভাবে উল্লেখ্যে যে, ১৯১১ এর Graf & stift 28/32 ps Double phateon (Engine No 287) এর মালিকানা আর্চডিউকের ছিলো না, বরং Franz Von Harrach ১৯১০ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর গাড়িটি কিনেছিলেন।

Das Auto Von Sarajevo বইতে, লেখক অর্টনার লিখেছিলেন যে, ১৯১৪ সালে অস্ট্রিয়ান আর্মি তীব্র বাজেট বিঘ্নতায় পড়ে। এই কারনে সার্জেভো সফরের সময় গাড়িবহর না দিয়ে আর্চডিউককে একটি প্রাইভেট কার দেয়া হয়। ফলে তাদের নিরাপত্তার ঘাটতি পড়ে। যে প্রাইভেটকারই হলো Graf & stift 28/32 ps Double phateon।  আর এই সিন্ধান্তই তাদের নিহত হবার একটা কারণ হিসেবে ধরা হয়, কেননা এই গাড়িটিতে না চড়ে, স্বাভাবিক গাড়িবহর নিয়ে সফরে গেলে হয়ত তাদের নিহত হতে হতো না।

খবরের কাগজে আর্চডিউক এবং সোফিয়া হত্যাকাণ্ডের খবর ছাপা হয়েছিল।

আর্চডিউক এবং সোফিয়া যখন সার্জেভো সফরে যাচ্ছিলেন, তখন তাদের ড্রাইভার ছিলেন হাঙ্গেরিয়ান আর্মির চালক লিউপল্ড লজকা। গুপ্তঘাতকরা ওৎপেতে আছেন কখন তাদের আক্রমন করবে। বলা যায় প্রথমদিকে তারা ব্যর্থই ছিলেন। তবে ছোট একটি দিক পরিবর্তন বদলে দিয়েছিলো সবকিছু। ড্রাইভার হঠাত গাড়ির পথ পরিবর্তন করে, নির্দিষ্ট রুট ছেড়ে অন্য রুটে উঠে যান। আর এই পরিবর্তন যেন পুরো পৃথিবীর পরিবর্তন। এই রুট পরিবর্তনই যুবরাজ আর্চডিউক ফার্ডিন্যান্ড এবং তার স্ত্রীকে গুপ্তঘাতক গ্যাব্রিলো প্রিন্সিপ এর খুব কাছাকাছি নিয়ে আসে। আর এই সুযোগে গুলি চালান ঘাতক। মুহূর্তের মধ্যেই প্রাণ যায়। আর এই হত্যাকান্ড জন্মদেয় নতুন ইতিহাস।

২০ শতকে বিরান প্রেসল্যান্ড নামে এক পরিদর্শক একটি ভিন্ন রকম লাইসেন্স নোট করেন, এটি হচ্ছে AIII118. লেখক ও ঐতিহাসিক মাইক ডেশ এটি ব্যাখা করেন A ( Armistic) 11-11-18 যা ১৯১৮ সালের ১১ই নভেম্বর এর যুদ্ধবিরতির দিন নির্দেশ করে।এই দিনেই শেষ হয়েছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

গাড়িটি এখন যাদুঘরে রাখা আছে।

Double phateon এখন ভিয়েনার সামরিক জাদুঘরে সর্বসাধারনের প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top