প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

ড্রাইভিং করার সময় যে কাজ-থেকে বিরত থাকবেন
পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

ড্রাইভিংয়ের সময় যে ৭টি কাজ থেকে বিরত থাকবেন

আজ আমরা ড্রাইভিং সম্পর্কে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, এগুলো আমরা সকলেই মোটামুটি জানি এবং এটাও মেনে নেই যে ড্রাইভ করার সময় এগুলো কোনোভাবেই করা যাবে না। তবুও রাস্তায় এতো বেশি পরিমাণে দূর্ঘটনা কেনো ঘটে? কারণ, এগুলো আমরা রাস্তায় বের হওয়ার আগে পর্যন্ত মেনে চলি, কিন্তু একবার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নেমে পরার বেশিরভাগ ড্রাইভারই এগুলো মেনে গাড়ি চালান না, ফলে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে।

ড্রাইভিংয়ের সময় যে কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন

ড্রাইভিং সিটে গাড়ি চালানো অবস্থায় মেনে চলতে হয়, অনেক বড় ধরনের কিছু নিয়ম-কানুনই। আমাদের সামান্য পরিমানের গাফিলতির পরিণতি হিসেবে বিপন্ন হবে সাধারণ কিছু মানুষের জীবন। ড্রাইভিংয়ের সময় যেসব বিষয় আমরা এড়িয়ে চলবো তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলোঃ

১। ক্লান্ত অবস্থায় ড্রাইভ করা

ঘুম জড়ানো চোখে আপনি গাড়ি নিয়ে বের হলেন মানেই হলো যে খাল কেটে দূর্ঘটনা নিয়ে আসলেন। কারণ, যখন আপনার শরীর ক্লান্ত অবস্থায় থাকে, তখন আপনার রিয়েকশন টাইম অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে হাইওয়ের মতো স্থানে যেখানে সবসময় চোখ-কান খোলা রাখতে হয় যে কখন সামনে কেউ এসে পরলো, কোন গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে একটু চাপ দিল অথবা পেছন থেকে ক্রমাগত হর্ন বাজিয়ে চললো – এই বিষয়গুলোর জন্য আপনাকে সদা প্রস্তুত থাকতে হয়।

ক্লান্ত অবস্থায় ড্রাইভ করা

এমন সময় যদি আপনার শরীরের যতোটা দ্রুত রিয়েক্ট করা প্রয়োজন, তা যদি না করে তবে তো দূর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। তাই, যদি শরীর ক্লান্ত থাকে, তাহলে গাড়ি থামিয়ে রেস্ট নিয়ে নিন। এতে করে আপনি গন্তব্যে কিছুটা দেরি করে হলেও পৌছাবেন ঠিকই।

২। অতিরিক্ত গতিতে ড্রাইভ করা

ওভারস্পিডিং হচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনার অন্যতম প্রধান একটি কারণ। আপনি যতো দ্রুত গাড়ি চালাবেন, কোনো কারণে ক্র্যাশ হলে আপনার ও গাড়ির ততো বেশি ক্ষতি হবে। অপরদিকে, সড়কের একেক স্থানে একেক রকম স্পিড লিমিট দেয়া থাকে ড্রাইভার ও প্যাসেঞ্জারদের সেইফটির জন্যই। তা মেনে চলার মাধ্যমে আপনি গাড়ির, আপনার এবং আরোহী – সকলের সেইফটি এনশিওর করতে পারবেন। তাই কখনোই ওভারস্পিডিং করা যাবে না।

অতিরিক্ত গতিতে ড্রাইভ করা

৩। সিটবেল্ট না পরা

আমেরিয়ার ন্যাশনাল হাইওয়ে সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর একটি প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায় যে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মাঝে সিটবেল্ট প্রায় ৭৫০০০ মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা পালন করেছিল।

এই রিপোর্ট থেকেই জানা যায় যে সড়কে সিটবেল্ট কতোটা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আপনার গাড়িতে হয়তো এয়ার-ব্যাগ টেকনোলজি আছে, তাই আপনি ধরেই নিয়েছেন যে সিটবেল্ট আপনার প্রয়োজন নেই। এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। এয়ার-ব্যাগ প্রযুক্তি এসেছে সিটবেল্ট সিস্টেমকে অ্যাসিস্ট করার জন্য, তাকে রিপ্লেস করার জন্য নয়।

সিটবেল্ট না পরা

আপনার গাড়ি যদি কখনো ক্র্যাশ করে, সেই ক্র্যাশের সময় এবং এয়ার-ব্যাগ ওপেন হওয়ার মাঝে কিছুটা গ্যাপ থাকে। আপনি যদি অনেক বেশি গতিতে ক্র্যাশ করেন তাহলে দেখা যাবে এয়ার-ব্যাগ ওপেন হওয়ার আগেই আপনি গাড়ির সামনের অংশের সাথে ধাক্কা খেয়েছেন (যদি সিটবেল্ট পরিধান না করেন)। এমতাবস্থায় যদি এয়ার-ব্যাগ ওপেন হয় তাহলে সেটা আপনাকে রক্ষা করার বিপরীতে উল্টো আপনার শরীরের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে।

আর যদি সিটবেল্ট পরিধান করেন, তাহলে আপনি যতো জোরেই ক্র্যাশ করেন না কেন, সিটবেল্ট কিছুটা মোমেন্টাম হজম করে নিবে, তাই আপনি সামনের অংশের সাথে বাড়ি খাওয়ার আগেই এয়ার-ব্যাগ আপনাকে বাকি প্রোটেকশন দিতে পারবে। তাই যখন গাড়ি নিয়ে বের হবেন, প্রথমেই সিটবেল্ট পরে নিবেন।

৪। কানে হেডফোন লাগিয়ে গাড়ি চালানো

সহজ ভাষায়, গাড়ি চালানোর সময় কখনোই হেডফোন ব্যবহার করা যাবে না। হ্যাঁ, আপনি কোনো জরুরি কল রিসিভ করার জন্য বড়জোর ইয়ারফোন ব্যবহার করতে পারেন (যদিও গাড়ি থামিয়েই কল রিসিভ করার বেটার অপশন), তবে হেডফোন কখনোই না। হেডফোন গানের শব্দ ছাড়া আশেপাশের সকল শব্দকে নয়েজ ক্যান্সালেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যন্সাল আউট করে দেয়। যার ফলে বাইরে ভূমিকম্প হয়ে গেলেও আপনি টের পাবেন না। আর এটি আপনাকে রাস্তায় যথেষ্ট পরিমাণে ফোকাস করতেও বাধা প্রদান করবে।

কানে হেডফোন লাগিয়ে গাড়ি চালানো

গাড়ি চালানোর সময় গান শোনা নিয়ে অবশ্য কোনো সমস্যা নেই। তবে সেটি গাড়ির স্পিকারে শুনতে পারেন। ইয়ারফোন বা হেডফোন ব্যবহার করে কখনোই গান শোনা যাবে না।

৫। টেইলগেটিং

টেইলগেটিং অর্থ হচ্ছে সামনের গাড়ির অতিরিক্ত কাছে দিয়ে ড্রাইভ করা। অর্থাৎ, আপনার এবং আপনার সামনের গাড়ির মাঝে যদি খুব অল্প ব্যবধান রেখেই আপনি ড্রাইভ করতে থাকেন, তাহলে সেটিকে বলা হয় টেইলগেটিং। যেকোনো রাস্তায় এবং বিশেষ করে হাইওয়ে-তে এটি খুবই ঝুকিপূর্ণ ড্রাইভিং পদ্ধতি। আপনার সামনের ড্রাইভার যদি হঠাৎ করে ব্রেক কষে বসেন তাহলে তার গাড়ির সাথে আপনার গাড়ির ধাক্কা লাগবে এবং দোষটাও আপনার কাধেই চলে আসবে। একই ব্যাপার ঘটবে যখন আপনার পেছনে টেইলগেটিং করবে।

তাই সর্বদা সামনের গাড়ির থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে গাড়ি চালাবেন এবং কেউ যদি আপনার পেছনে টেইলগেটিং করে তাহলে গাড়ি সাইড করে তাকে আগে যেতে দিবেন। এতে করে আপনি গন্তব্যে কিছুটা দেরিতে হলেও নিরাপদে পৌছাতে পারবেন। অন্য কাউকে তার ভুল বোঝাতে গিয়ে ঝামেলায় পরার চাইতে নিজে সরে যাওয়াই অনেক বেশি শ্রেয়।

৬। সিট সঠিক পজিশনে না রাখা

কোনো ড্রাইভার একটু বেশিই লম্বা আবার কেউ বা কিছুটা খাটো হয়ে থাকেন, আপনি যেমনই হোন না কেনো, আপনার প্রেফারেন্স অনুযায়ী কিন্তু আপনি ড্রাইভিং সিট সামনে-পেছনে করে অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারবেন। অনেকেই দেখা যায় যে এই বিষয়টি জানেন না। ফলে এমন পজিশনে বসে ড্রাইভ করেন যেখান থেকে সহজেই গাড়ির বিভিন্ন বাটন, ব্রেইক, এক্সেলেরেটরের নাগাল পাওয়া যায় না। ড্রাইভ করার সময় এই সবগুলো অপশন থাকা চাই একদম হাতের নাগালে। তাই নেক্সট টাইম ড্রাইভ করার আগে অবশ্যই সিটের সঠিক পজিশনিং করে নিবেন।

সিট সঠিক পজিশনে না রাখা

৭। খালি পায়ে গাড়ি চালানো

যেকোনো ড্রাইভার জীবনে একবারের জন্য হলেও এই কাজটি করে থাকেন। শুনতে অনেকটা হাস্যকর মনে হলেও ব্যাপারটি কিন্তু খুবই সাংঘাতিক হয়ে উঠতে পারে। অনেকসময় দেখা গেছে যে, ড্রাইভাররা জুতো পরে যতো জোরে ব্রেক কষতে পারেন, জুতো ছাড়া ততোটা জোরে পারছেন না। তাই কোনো সময় যদি আপনার হার্ড-ব্রেক করার প্রয়োজন পরে এবং আপনার পায়ে জুতো না থাকে, তাহলে সম্ভাবনা আছে যে আপনার ব্রেক কোনো কাজে আসবে না। তাই ড্রাইভ করার সময় অবশ্যই জুতো পরে নিবেন।

পরিসংহার

সেইফ ড্রাইভিং-এর জন্য যেমন হাজারো টিপস রয়েছে, তেমনই ড্রাইভ করার সময় না করার মতো জিনিস’ও রয়েছে প্রচুর। তবে আমরা এই লেখায় সবচেয়ে কমন কিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, ড্রাইভ করার সময় যেগুলো না করলে আপনি নিজের এবং প্যাসেঞ্জারদের অনেকটা সেইফটি এনশিওর করতে পারবেন। নতুন চালকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ১৩ টি ড্রাইভিং টিপস জানতে ভিজিট করুন এই পোস্ট

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top