প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

চালকবিহীন-গাড়ি
পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

চালকবিহীন গাড়ি ! আগামী বিশ্বে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির দাপুটে পদার্পণ।

স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কী?

ধরুণ, আপনি বিলাসবহুল দামি কোন গাড়িতে বসে আছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিণ যন্ত্রের কল্যাণে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। স্বভাববশতঃ ড্রাইভারকে বল্লেন, এই কুদ্দুস, এতো ঠান্ডা লাগছে কেন! এসিটা একটু বাড়িয়ে দেও তো।” সাথে সাথে নারী কন্ঠ ভেসে আসল,“ স্যার, আপনার আদেশ শীরধার্য, আপনার সুবিধার্থে তাপযন্ত্র ১৭ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রিতে উন্নীত করা হয়েছে। আপনার ভ্রমণ হোক সুন্দর ও উপভোগ্য। আপনার ঘুম পুরোপুরি উধাও হয়ে গেলো, গাড়িতে মহিলা মানুষ আসলো কোথা থেকে! চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখলেন ড্রাইভারের সিটে বসে নেই কেউ। আপনি ছোটখাটো স্ট্রোকও করতে পারেন। জ্বিন গাড়ি চালাচ্ছে না তো!
একটু মজা করলাম, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সত্যিই এমনটা হতে চলছে শীঘ্রই। আপনি গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়াবেন। অথচ গাড়িতে ড্রাইভার থাকবে না। গাড়ি চলবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। এখন আসি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কী? যে গাড়ি সফটওয়্যারের নির্দেশনার মাধ্যমে চালকবিহীন জ্যাম কিংবা ফাঁকা যেকোনো রাস্তায় চলতে পারবে অনায়সে তাই চালকবিহীন বা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি।

স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সম্ভাবনা

বিশ্বের নামিদামী সব গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে আগামীর স্বয়ংক্রিয় গাড়ির বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে। বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গাড়ির উপর যে পরিমাণ নির্ভরশীলতা বাড়ছে, তাতে আগামী বিশ্বে গাড়ির বাজার হবে সবচেয়ে বেশি রমরমা। তাই গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো এখন থেকেই স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়ে নিয়েছে। নিশান, ফল্কসভাগেন, টয়োটা, মার্সেডিজ-বেনৎস ফোর্ড, টয়োটা, হোন্ডা এবং টেসলা অলরেডি ফ্যাক্টরি এবং ট্রায়াল পর্যায়ে চলে এসেছে। ফলে বলাই যায়, আগামী উন্নত বিশ্বে গাড়ি মানেই হবে স্বয়ংক্রিয় বা চালকবিহীন গাড়ি।

চালকবিহীন-গাড়ি-2

স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রথম যাত্রা

তবে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির আইডিয়া প্রথমে বাজারে নিয়ে এসেছিল গুগল। গুগল ২০০৯ সালের দিকে তাদের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্ণিয়ার হাইওয়েতে ট্রায়ালে গিয়েছিল। এই সময়ে কোনো রকম দুর্ঘটনা ব্যতিত গাড়িগুলো প্রায় সাত লক্ষ মাইলের চেয়েও বেশি পথ পাড়ি দিতে পেরেছিল বলে জানিয়েছিল গুগল ৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার হাইওয়েতে যেহেতু একটি নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়িগুলো চলেছিল তাই অনেকটা সহজই ছিল সেই পথ চলা ৷ কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে চালকবিহীন যে গাড়ি বাজারে আনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে তা শুরু করতে হবে বর্তমানের গতানুগতিক রাস্তায় অনেক অনেক পরিবর্তন সাধন করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে অবকাঠামোগত অনেক বিষয়েই। তাছাড়া দেশভেদে গাড়িগুলোকেও আলাদা আলাদা বৈশিষ্টের হতে হবে ৷ সে লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে এখন পৃথিবীর বিখ্যাত জয়ান্ট টেক গুগল৷ আশা করা যায়, ২০২৫ সালের মধ্যেই গুগল বাণ্যিজিকভাবে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি উৎপাদন শুরু করতে পারবে।

বাণ্যিজিক ট্রায়াল

বাণিজ্যিক ট্রায়ালের ফলাফল গুগলকে পুরোই হতাশ করেছিল। কারণ, তাদের ট্রায়ালে দেখা গেছে, যতগুলো এক্সিডেন্ট ঘটেছিল, তাদের প্রায় সবগুলোই হয়েছিল মানুষের ভুলে। কারণ, স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো নিয়ম মানলেও মানুষ নিয়ম মানাতে ততোটা আগ্রহী না এখনো। তবে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আসবেই। আর সেই লক্ষ্যেই বর্তমানে কাজ করছে, নিশান, ফল্কসভাগেন, টয়োটা, মার্সেডিজ-বেনৎস ফোর্ড, টয়োটা, হোন্ডা এবং টেসলাসহ আরও অনেক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

চালকবিহীন-গাড়ি-4

সম্প্রতি বাণ্যিজিক ট্রায়ালে গিয়েছে হোন্ডা এবং জেনারেল মোটর্সের যৌথ উদ্যোগের ১ম গাড়ি “ক্রজ অরিজিন”। এই গাড়ির চালকের সিট এবং স্ট্রেয়ারিং ছিল না। তারা অনেকটাই আশাবাদী। স্বয়ংক্রিয় গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি বাজারজাত করা সম্ভব হবে। গাড়ি নির্মাতারা চাইছেন, চালক নির্ভরশীলতা এবং দূষণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

চালকবিহীন গাড়ির টেকনোলজি

চালকবিহীন অটোমোবাইল গবেষণার প্রথিকৃত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেক ইউনিভার্সিটি। স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো হবে মেকানিক্যাল, কেমিক্যাল, হাইড্রোলিক, নিউমেটিক, রেফ্রিজারেশন এবং ইলেকট্রনিক নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সম্মিলন। এছাড়া চালকবিহীন গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের সাবসিস্টেম চালনার জন্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা যেমন- মাইক্রোপ্রসেসর, মাইক্রোকন্ট্রলার, সেন্সর, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবস্থা যোগ করা হবে। ফলে গাড়িগুলো কম তেল শোষণ করে আরো ভালোভাবে পরিচালিত হবে এমন কি গাড়িগুলো যেহেতু স্যাটেলাইটের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবে সেহেতু গাড়িগুলো আগে থেকেই দেখতে পাবে রাস্তার কোথায় জ্যাম আছে, ফলে গাড়ি স্বয়ংক্রিয় ভাবেই বিকল্প রাস্তা খুঁজে নিবে। ফলে সময়, জ্বালানি দুটোই সাশ্রয় হবে। দূষণও হবে অনেক অনেক কম। তাছাড়া ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক ট্রান্সমিশন, এন্টিব্রেক সিস্টেম, সাস্পেনশন সিস্টেম ব্যবহার ফলে গাড়িগুলো সামনে কোন বস্তু বা প্রাণি আচমকা চলে আসলে তাৎক্ষণিক ব্রেক করতে পারবে। ফলে দূর্ঘটনা নেমে আসবে একেবারেই শূন্যের কোটায়।

এছাড়া স্বয়ংক্রিয় গাড়িতে থাকবে মেডিসেন্সর। যা যাত্রীর পাল্স রেট, হার্টবিটসহ মানুষের দৌহিত ক্রিয়াকলাপের চেকআপ করতে পারবে। যদি কোন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে তাৎক্ষণিক কার্যত ব্যবস্থা এবং হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবে। চিন্তা করে দেখুন একবার,আপনি গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, গাড়ি আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা ধারুণ না!

স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বাজারে আসার প্রতিবন্ধকতাসমূহ

চালকবিহীন গাড়ি ভাবতেই বুঝতে পারি যে গাড়িতে মানুষের তেমন প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তবে সফটওয়্যার বা সিস্টেম অবশ্যই কেন্দ্রীয়ভাবে মানুষ কর্তৃকই নিয়ন্ত্রিণ হবে। তবে কিছু সমস্যা অবশ্যই থেকে যায় কিংবা যাবে। কারণ আমরা মানুষ এখনো তেমন সতর্ক হইনি, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রগুলোতে। গুগল যখন প্রথম ব্যস্ত সড়কে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ট্রায়াল করেছিল। তখন তারা একপ্রকার হতাশই হয়েছিল। কারণ অধিকাংশ এক্সিডেন্ট হয়েছিল মানুষের নিয়ম না মানার কারণে। যেমন- যদি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কোথাও “থামুন”শব্দটা দেখতে পায় তবে গাড়ি থেমে যাবে, কিন্তু আমরা জানি মানুষ তখন গাড়ি থামাবে না। এমনকি মানুষ জরিমানার ভয় না থাকলে লাল বাতির সিগন্যালও মানতে চায় না, আশেপাশে পুলিশ না থাকলে দেয় দুমচে টান।

চালকবিহীন-গাড়ি-5

 স্বয়ংক্রিয় গাড়ি যদি তার দৃষ্টি সীমার মধ্যে কোথায় খারাপ রাস্তা বা পানি দেখে তবে দাঁড়িয়ে যাবে। এমনকি তার স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়বে না একটি ছোট পাথরও। তবে মানুষ তো আর তা মানবে না। ফলে কিছু সমস্যা তো সৃষ্টি হবেই। প্রত্যেকটি বিষয়েরই উপকারি দিকের পাশাপাশি কিছু অপকারের দিকও থাকে যেমন- স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বাজারজাত করা শুরু হলে পৃথিবীব্যাপিই ড্রাইভিং পেশার বিলুপ্তি ঘটবে। ফলে কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। তাছাড়া এই গাড়ি চালানোর জন্য সড়ক ও হাইওয়ে গুলোতে অনেক নতুনত্ব আনতে হবে। ফলে তা হবে অনেক অনেক ব্যয়বহুল।

 যাই হোক, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তুলে আগামীতে পৃথিবীর উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ড্রাইভারদের অবহেলা, অসাবধানতা এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে অধিকাংশ দূর্ঘটনা ঘটে। লক্ষ লক্ষ তাজা প্রাণ ঝরে যায় নিমিষেই। তবে আমরা আশাবাদী, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি হবে পরিবেশ বান্ধব। ফলে এক্সিডেন্ট শূন্যের আশার সাথে সাথে পরিবেশের অনেক উন্নতি সাধিত হবে। যেহেতু, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি হবে ইলেক্ট্রনিক, তাই দূষণ কমে যাবে অনেকাংশেই। তাই আমরা বিশ্বাস রাখতেই পারি, আগামী বিশ্বে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আসবেই। আগামী উন্নত বিশ্বে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির হবে দাপুটে পদার্পণ।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top