প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS)
পড়তে লাগবে: 3 মিনিট

ABS ব্রেক কী এক্সিডেন্ট থেকে বাঁচায়?

সড়কপথে গাড়ি বা বাইক নিয়ে যাত্রায় সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়টি হচ্ছে দুর্ঘটনা। হঠাৎ বাইকের সামনে কেউ চলে আসলো, ডানপাশের গাড়িটি এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটু চাপ দিলো অথবা বৃষ্টির দিনে হঠাৎ মোড় নিতে হলো, এইসব ক্ষেত্রেই ব্রেক প্রেস করার প্রয়োজন হয়। আর সড়কপথে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় সঠিক সময়ে ব্রেক প্রেস করতে না পারা অথবা ব্রেক ঠিকভাবে কাজ না করার কারণে। দুর্ঘটনা এড়াতে এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS) হতে পারে একটি অত্যন্ত কার্যকরী সমাধান। আজ আমরা এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম কী?

এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম কি সেটা হয়তো নাম দেখেই কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। জি, এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে হঠাৎ ব্রেক করলেও আপনার চাকা লক হয়ে গিয়ে স্কিড করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। এই পদ্ধতিতে টায়ারকে এমনভাবে ম্যানিপুলেট করা হয় যে আপনি যতো জোরেই ব্রেক প্রেস করুন না কেনো, আপনার চাকা লক হবে না। বরং ধীরে ধীরে নিজের গতি কমিয়ে এনে থেমে যাবে। এই পদ্ধতিতে আপনি বাইকের ব্রেক প্রেস করলে সেটি সরাসরি চাকা থামিয়ে না দিয়ে বরং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রেশার চাকাতে প্রয়োগ করে চাকা থামাতে সাহায্য করে।

এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম কিভাবে কাজ করে?

এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম-এ সাধারণত ব্রেক লিভার এবং চাকার মধ্যবর্তী যেকোনো স্থানে একটি কন্ট্রোলার ডিভাইস সেট করা হয়। এর মাধ্যমে চাকার সাথে একটি সেন্সর যুক্ত করা হয়। আপনি ব্রেক প্রেস করলে তারের ভেতর থাকা সব তেল একই সময়ে চাকার সাথে লাগানো ডিস্কে প্রেশারাইজ না করে মধ্যবর্তী কন্ট্রোলার ডিভাইসে গিয়ে জমা হবে। ঠিক সেই সময়ে আপনার গাড়ি বা বাইকের চাকা কতো দ্রুত ঘুড়ছে (বাহনের গতি) তা চাকার সাথে লাগানো সেন্সরের মাধ্যমে কন্ট্রোলার ডিভাইস জেনে যাবে। চাকার গতির উপর নির্ভর করে কন্ট্রোলার ডিভাইস একটি সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে প্রয়োজনমাফিক তেল ডিস্কে পাঠিয়ে টায়ারকে প্রেশারাইজ করবে এবং থামিয়ে দিবে।

সিস্টেমটি কিছুটা জটিল মনে হলেও আসলে অনেক সহজ এবং কার্যকর। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম সাধারণ ডিস্ক ব্রেকের থেকেও দ্রুত কাজ করে। এই পদ্ধতিতে আপনি অনেক জোরে ব্রেক করলেও আপনার বাহনের চাকা লক হবে না। প্রয়োজনমাফিক গতি কমিয়ে আনবে এবং আপনি একই সময়ে স্টিয়ারিং ব্যবহার করে গাড়ি বা বাইকের সামনে থাকা অবজেক্ট পাশ কাটিয়ে যেতে পারবেন।

সাধারণ ডিস্ক ব্রেকের সাথে এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম-এর পার্থক্য কী?

সাধারণ ডিস্ক ব্রেকের ক্ষেত্রে আপনি অনেক জোড়ে ব্রেক প্রেস করলে, তারের ভেতর থাকা সমস্ত তেল একইসময়ে ডিস্কে প্রেশারাইজ করে। অতিরিক্ত প্রেশারের ফলে চাকা লক হয়ে যায়। চাকা লক হয়ে গেলেও গাড়ির গতি কিন্তু থামেনা। গতি জড়তার সূত্র মেনে চাকা স্কিড করে এগিয়ে যায় অনেকটা দূর। আপনার চাকা যদি স্কিড করা শুরু করে তাহলে আপনার সামনে থাকা কোনো অবজেক্টকে আপনি পাশ কাটিয়ে যেতে পারবেন না। স্কিড করার সময় স্টিয়ারিং ঘোড়ানো যায় না আর গেলেও বাইক উলটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অপরদিকে, এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম-এ একটি ইন্টেলিজেন্ট কন্ট্রোলার ডিভাইস আপনার ব্রেকের প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ, অতিরিক্ত প্রেশারের কারণে চাকা লক হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং প্রয়োজনমাফিক তেল ডিস্কে সরবরাহ করে চাকার ঘূর্ণন বন্ধ করতে সাহায্য করে। যেহেতু এখানে চাকার গতি খুব সন্তর্পণে কমিয়ে আনা হচ্ছে তাই চাইলেই স্টিয়ারিং ব্যবহার করে সামনে থাকা অবজেক্টকে পাশ কাটানো সম্ভব হয়।

বাজারে সাধারণত দুই ধরণের এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম পাওয়া যায়।

১। সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস

  • গাড়িতে ব্যবহারঃ শুধু সামনের দুই চাকায় ব্রেকিং সিস্টেম থাকবে
  • বাইকে ব্যবহারঃ শুধু সামনের চাকায় ব্রেকিং সিস্টেম থাকবে

২। ডুয়েল চ্যানেল এবিএস

  • গাড়িতে ব্যবহারঃ চার চাকাতেই ব্রেকিং সিস্টেম থাকবে
  • বাইকে ব্যবহারঃ দুই চাকাতেই ব্রেকিং সিস্টেম থাকবে

এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম-এর সুবিধা

১। চাকা স্কিড করে না।

যেহেতু এখানে প্রেশার কন্ট্রোল করে চাকাকে লক হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়, তাই চাকা স্কিড না করে বরং ঘূর্ণন গতি কমিয়ে আনে। এতে আপনি প্যানিকড হয়ে অনেক জোরে ব্রেক প্রেস করে ফেললেও স্কিড করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

২। চাকার ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

যেহেতু এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম চাকাকে স্কিড করা থেকে বিরত রাখে, তাই চাকার ক্ষয় অনেকটাই কমে আসে এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।

৩। ব্রেক করে স্টিয়ারিং ঘোড়ানো যায়।

সাধারণ ব্রেকিং সিস্টেমে যেহেতু চাকা স্কিড করে তাই স্টিয়ারিং ঘোড়ানো সম্ভব হয় না। অপরদিকে, এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম-এ চাকা স্কিড না করার কারণে চাইলেই স্টিয়ারিং ঘুড়িয়ে সামনে থাকা অবজেক্টকে পাশ কাটানো যায়।

৪। বাইক উলটে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

যেহেতু এই পদ্ধতিতে ব্রেক চেপেও স্টিয়ারিং ঘোড়ানো যায়, তাই বাইক উল্টানোর সম্ভাবনা থাকে না এবং সহজেই সামনের অবজেক্টকে পাশ কাটানো যায়।

বাংলাদেশে এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম

এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম সর্বপ্রথম জার্মানীতে আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯২৭ সালে। আর রয়াল এনফিল্ড কোম্পানীর বাইকে সর্বপ্রথম ১৯৫৮ সালে এই ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে বাংলাদেশে এবিএস পদ্ধতি সংযোজিত গাড়ি আসা শুরু হয় এবং বর্তমানে প্রায় সবধরণের গাড়িতেই এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম রয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাইকের এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম তুলনামূলক নতুন। যেহেতু বাংলাদেশে কম্যুটার এবং স্পোর্টস-কম্যুটার ধরণের বাইক বেশি ব্যবহার করা হয়, এগুলোতে এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম প্রায় থাকে না বললেই চলে। তবে সাম্প্রতিককালে Honda CB ex-motion টাইপের বাইক বাংলাদেশের বাজারে আসায় এখানে এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম পরিচিতি পেয়েছে।

কীভাবে বুঝবেন যে আপনার গাড়িতে এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম আছে?

আপনার গাড়িতে যদি এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম থাকে তাহলে গাড়ি স্টার্ট করার পরই ডিসপ্লেতে “(ABS)” সাইনটি দেখতে পাবেন। বাইকের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি প্রযোজ্য। গাড়ি অথবা বাইকের ইউজার ম্যানুয়াল থেকেও জেনে নিতে পারবেন যে এটিতে এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম আছে কি না অথবা কোন ধরণের ব্রেকিং সিটেম ব্যবহার করা হয়েছে।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top