প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার

utilise-time-in-traffic-jam
পড়তে লাগবে: 5 মিনিট

যানজটে সময় কাটানোর উপায় কি হতে পারে?

বর্তমানে যানজট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। ঢাকার যানজটের মাত্রা তো দিনদিন বেড়েই চলেছে। একে তো প্রতিনিয়ত রাজধানীমুখী হচ্ছে হাজারও মানুষ তার উপর অতিরিক্ত নতুন গাড়ির রাস্তায় আগমন। সব মিলিয়ে যানজট থেকে মুক্তি মেলা অতোটাও সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। সে যাই হোক নিয়তিকে তো বরণ করে নিতেই হবে। তবে আমরা চাইলেই এই দুঃসহ সময়টাকে কাজে লাগাতে পারি। যানজটে সময় কাটানোর উপায় হিসাবে বই পড়া খুবই ভালো একটি অভ্যাস। আর বইগুলো যদি আপনার বুদ্ধিমত্তা বিকাশে সহায়ক হয়, তবে ভাবুন তো কী দারুণ হবে বিষয়টা!

সত্যিকার অর্থে যানজটে সবার মেজাজই থাকে কিছুটা চড়া। একারণে আপনি হয়তো বই পড়ার উপদেশকে কিছুটা বাঁকা চোখেই দেখবেন কিন্তু একবার ভাবুন তো। বেশকিছু টিপস এন্ড টিক্স ফলো করে সত্যিই আপনি যানজটে বসে বই পড়ছেন। ভাবতেই খুব আনন্দে নেচে উঠছে না মন?

ট্রাফিক জ্যামে অতিষ্ঠ! যানজটে সময় কাটানোর উপায় কি?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগে যানজটের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কীয় বেশ কিছু অবাক করা তথ্য জেনে নিলে কেমন হয়! চলুন জেনে নেইঃ

  • যানজটের কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ০৫ কিলোমিটার। ২০০২ সাল অর্থ্যাৎ ১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।
  • ২০১৫ সালের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, ঢাকায় দৈনিক প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ যাত্রা (ট্রিপ) হয়। একজন মানুষ কোনো একটি বাহনে উঠে নির্ধারিত গন্তব্যে নামলে একটি যাত্রা বা ট্রিপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে এক কোটি যাত্রীও পূর্ণ ট্রিপ সম্পন্ন করতে পারছে না ফলে বর্তমানে যানজটে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
  • যানজটের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে একাধিক গবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে। এ থেকে বলা যায়, গড়ে বছরে যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। তবে সড়ক খাতে বিনিয়োগ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও যানজট নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই ক্ষতির অন্তত ৬০ শতাংশ বা ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
  • যানজটের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব পড়ছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, ঘুম কম হওয়া, ক্ষুদা মন্দা, মানসিক বিকৃতিসহ ৯ ধরনের মানবিক ও শারীরিক রোগ। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব থেকে শুরু করে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মতো বিষয়গুলোও যানজটে প্রভাবিত হচ্ছে।
  • ২০১৬ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬: ঢাকা মহানগরে যানজট, শাসন ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। আচ্ছা, পড়া শেষ করে থ হয়ে বসে আছেন নিশ্চয়। বসে থাকারই কথা। চিন্তা করতে পারেন, আগামীতে যানজট কেমন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমরা! এবার বলুন, আমাদের কী ভাবা উচিত নয় কিভাবে যানজট কমানো যায়। অবশ্যই উচিত তবে আমাদের ভাবা ভাবিতে কিছু যাবে আসবে না। আমরা চাইলেই যানজট নিরসন করতে পারবো না। তবে আমরা চাইলে আমাদের যানজটে নষ্ট হওয়া সময়কে কাজে লাগাতে পারবো। আর বুদ্ধিমান হিসেবে, সেটাই আমাদের করা উচিত নয় কী!

যানজটের সময় কেন বই পড়া উচিত?

এখন আপনিই হয়তো প্রশ্ন করবেন, যানজটে বইই কেন পড়তে হবে। আচ্ছা, বলুন তো বই পড়া ছাড়া এমন কী কাজ আছে, যা যানজটে সময় কাটানোর উপায় হিসাবে বেছে নেওয়া যায় যা একই সাথে সহজ এবং ফলপ্রসূ। এমন কোন কাজ দেখাতে পারবেন না, যা যানজটে বসে করা একই সাথে সহজ এবং সময়ের সবচেয়ে ভালো ব্যবহার, বই পড়া ছাড়া। তাই যানজটে আটকে থাকার সময় টুকুতে যদি আপনি বসে বসে পড়ে ফেলতে পারেন মহামূল্যবান কোন বই তবে তো আর কোন কথাই নেই। হয়ে যাবে নিশ্চিত নষ্ট হওয়া সময়ে দারুণ কিছু। শেখা হবে, অজানাকে জানা যাবে, জ্ঞানে, গুণে হয়ে উঠবেন আদর্শ মানুষ। তাই যানজটে নিশ্চিত ক্ষয়ে যাওয়া সময়টুকুকে কাজে লাগাতে হলে বই পড়ার বিকল্প আসলে কিচ্ছু নেই।

যানজটের সময় উপভোগ করতে কীভাবে বই পড়ার অভ্যাস গড়া যায়?

সত্যি বলতে কী, আমরা তো ঘরের মতো নিরিবিল পরিবেশেই পড়তে চাই না। আর যানজটের মতো দুঃসহ, বিরক্তিকর জায়গায় বই পড়বো এটা তো কল্পনারও অতীত। তাই না? আসলেই তাই। তবে যদি একবার আপনি কিছু টিক্স ফলো করে যানজটে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন, তবে তো কথাই নেই। যানজটে বসে বই না পড়তে পারলেই তখন মন আকুঁপাকু করতে থাকবে। অস্বস্তিতে ভোগতে হবে। তাই, চলুন যানজটে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে কার্যকরী বেশ কিছু টিপস এন্ড টিক্স জেনে নেই-

  • আগে খুঁজে বের করুন, আপনার কোন ধরণের বই পড়তে ভালো লাগে।
  • আপনি যে জনরার বই হাতে নিলেই শেষ করা অবধি শান্তি পান না এমন বেশ কিছু বই সংগ্রহ করুন।
  • যানজটে যেহেতু শব্দ দূষণের সম্ভাবনা অনেক, তাই ব্যবহার করতে পারেন সাউন্ড প্রুফ হেডফোন।
  • যখনই, যেখানেই যাবেন সাথে একটি ব্যাগ রাখার অভ্যাস করুন। আর সেই ব্যাগে থাকবে পছন্দের প্রিয় কিছু বই।
  • যানজটে যখনই বই খুলে বসবেন, নিজের মনকে এমনভাবে মেডিটেশন করবেন, যেন আপনার আশেপাশে কেউ নেই। আপনি বসে আছেন আপনার নিরিবিলি পড়ার ঘরে।
  • গাড়িতে সামনের সারিতে বসবেন না, বসলে বারবার নজর রাস্তার দিকে চলে যাবে ফলে বইয়ে মনোযোগ দিতে পারবেন না।
  • সর্বপরি, ধরে নিবেন, এই কাজটা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ এবং এই কাজটা আপনাকে করতেই হবে, দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই। এটা ভেবে যখন নিজেকে বাধ্য করবেন তখন দেখবেন আস্তে আস্তে যানজটে বই পড়া অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

ট্রাফিক জ্যামে সময় কাটানো জন্য কি ধরণের বই পড়া যেতে পারে?

যানজটে বই পড়াটা অবশ্যই দুঃসাধ্য তবে অসম্ভব কিছু নয়। প্রয়োজন ধৈর্য্য এবং অধ্যবসায়। তাই যানজটে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রথমে কিছু ফানি বুক সিরিজ পড়া শুরু করতে পারেন। এধরণের বইগুলো পড়তে একঘেঁয়েমি কাজ করে না। যেহেতু, প্রচুর হাসির সিরিজ থাকে তাই পড়তে পড়তে হাসতে হাসতে সময় কেটে যাবে এক পলকেই।

তারপর পড়া শুরু করতে পারেন কমিক্স বুক। এসকল বইয়ে ছোট ছোট গল্পের সাথে কিছু কার্টুন আঁকা থাকে বিধায় পড়তে গেলে বিরক্তি আসে না। দ্রুত পড়ে শেষ করা যায়।

গল্পের বইও হতে পারে যানজটের উপজীব্য। ছোট ছোট গল্প যখন আপনাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে রাখবে তখন গল্পের ঘোরে কিভাবে যে যানজটের সময়গুলো পার করে ফেলবেন, টেরই পাবেন না।

তবে সবচেয়ে বেশি উপকারে আসবে উপন্যাস পড়তে পারলে। যদি আপনি এমন কোন উপন্যাস যা পড়া শুরু করে মজা পেয়ে বসেছেন এখন শেষ করতে মন চাচ্ছে না এমন বইগুলো পড়বেন যানজটে। দেখবেন শেষ না করা অবধি শান্তি পাবেন না। তখন মনে হবে, যানজট হোক বা নিজের পড়ার ঘর, আমার এই উপন্যাস পড়ে শেষ করতে হবেই। চলুন সর্বশেষ জেনে নেই এমন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখতে পারে এমন কিছু বইয়ের নাম যা শেষ করা অবধি আপনি শান্তি পাবেন না-

১. পদ্মা নদীর মাঝি- মানিক বন্দোপাধ্যায়।
২.তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ
৩. হাজার বছর ধরে- জহির রায়হান
৪. মেঘডুবি- কিঙ্কর আহসান
৫. কেউ কেউ কথা রাখে- নাজিম উদ্দীন।
৬. রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি- নাজিম উদ্দীন
৭. হিমু সমগ্র- হুমায়ুন আহমেদ
৮. মিসির আলী- হুমায়ুন আহমেদ
৯. দেয়াল- হুমায়ুন আহমেদ
১০. জোছনা ও জননীর গল্প।
১১. বাংলাদেশ রক্তের ঋণ- এ্যান্হনি মারকেনহাস
১২. মরণ বিলাস- আহমদ ছফা
১৩. ইতিহাসের ছিন্নপত্র- কায়কাউস
১৪. আরেক ফাল্গুন- জহির রায়হান
১৫.ওঙ্কার- আহমদ ছফা

উপরোক্ত বইগুলো উপন্যাস জনরার তবে আপনি যদি নিজের আত্ন উন্নয়ন বা সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট করতে আগ্রহী হোন তবে যানজটে পড়ার মতো রয়েছে বেশকিছু সেলফ ডেভেলপমেন্ট স্কিল রিলেটেড বই যা আপনার সময়ের সবচেয়ে বড়ো সদ্ব্যবহার হতে পারে। চলুন জেনে নেই তেমন কিছু বইয়ের নাম-

১. মার্জিনে মন্তব্য- সৈয়দ শামসুল হক
২. অবজারভেশন: এভরি ম্যঅন হিজ ওউন ইউনিভার্সিটি- রাসেল এইচ. কনওয়েল
৩. কমিউনিকেশন হ্যাকস- আয়মান সাদিক
৪. করপোরেট কমিউনিকেশন- রোকসানা আক্তার রুপী
৫. ইন্টারভিউ টেকনিকস- আপেল মাহমুদ
৬. কর্পোরেট সংস্কৃতি ও অফিস শিষ্টাচার- রাজিব আহমেদ
৭. বিক্রয় ও জনসংযোগ প্রতিনিধি কিভাবে হবেন- ডেল কার্ণেগী
৮ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা- শিকদার আবদুস সালাম
৯. যুক্তিফাঁদে ফড়িং- চমক হাসান
১০. পাওয়ার ইজ দ্য গ্রেট মোটিভেটর- ডেভিড এইচ বার্নহ্যাম
১১. ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং- জয়িতা ব্যানার্জী
১২. নিজেই লিখি নিজের সিভি- নিয়াজ আহমেদ

তাহলে আজ থেকেই শুরু হোক যানজটে সময় কাটানোর উপায় হিসাবে বই পড়ার অভ্যাস গঠনে। যে সংগ্রামে আপনাকে জিত্তয়েই হবে! আপনি জিতবেন। কেননা হেরে যাওয়ার কলঙ্ক আপনার রক্তে নেই। শুভ কামনা আপনার জন্য।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top