যারা ঢাকায় থাকেন তাদের জীবন যানজট একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আর রমজান মাসে অফিস শেষ করে বাড়ি ফেরা যেন আরো দুর্ভোগের ব্যাপার হয়ে ওঠে। কারণ যারাই বাড়ির বাইরে থাকেন, তারা সবাই চেষ্টা করেন ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছে পরিবারের সবার সাথে ইফতার করতে এবং তারাবির সালাত আদায় করতে। সবাই যখন একই সময় রাস্তায় বাড়ি ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো করে তখনই তৈরি হয় যানজট। কোন কোন দিন হয়ত কেউ বাড়ি ফিরতে পারে, নতুবা পথের মধ্যে সারতে হয় ইফতার।
রাজধানীর যানজট এড়িয়ে নগরবাসীকে ৬ টার আগে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা মেট্রপলিটন ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিকেলে ডিউটি করছেন যেন নগরবাসীর দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমে। এবং বাড়ি ফিরে সবার সাথে ইফতার করতে পারেন। সহজে এবং যানজট এড়িয়ে ইফতারের আগে বাড়ি ফেরার জন্য ১৪ টি পরামর্শ দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।
যানজট এড়ানোর পরামর্শ
যানজট আর মানুষের ভিড় এই দুই কারণে রাস্তার দুর্ভোগ বেড়ে যায়। যানজটের জন্য যে শুধুমাত্র গণপরিবহণ দায়ী তা কিন্তু নয়। যারা প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে বাড়ি ফিরতে চান তাদেরকেও এসব পরামর্শ মেনে চলার অনুরোধ করেছে ঢাকা ট্রাফিক পুলিশ।
১। উল্টো পথে গাড়ি না চালানো
অনেকেই দ্রুত বাড়ি ফেরার জন্য উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। এই কাজ করলে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। এতে করে একজনের জন্য আরো হাজারও মানুষ পথের মধ্যে আটকে থাকেন। আর যদি পুলিশের চোখে পড়ে তাহলে তো যিনি উল্টোপথে গাড়ি চালাচ্ছেন সে’ও নিয়ম ভঙ্গের দায়ে পুলিশের জেরার সম্মুখীন হবেন। তাই উল্টো পথে গাড়ি চালানো কারো জন্যই সুফল বয়ে আনবে না।

২। ট্রাফিক সিগনাল মান্য করা
রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ ট্রাফিক সিগনাল সঠিকভাবে মান্য না করা। আর রোজার সময় ইফতারের আগে তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফেরার আশায় অনেক গাড়ি চালকই ট্রাফিক সিগন্যাল অনাম্য করে ফেলেন। এতে করে যে জ্যামের সৃষ্টি হয় তাতে আটকে থেকে ইফতারের আগে বাড়ি ফিরতে পারেন না অনেক মানুষ! সঠিক পথ দিয়ে গাড়ি চালান।
৩। যানজটের কারণ হবেন না
কখনো নিজে রাস্তায় যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না। যা জ্যামের সৃষ্টি করে, এমন কোন কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। ফুটপাথ দিয়ে চলাচল করবেন। সঠিক যায়গা দিয়ে রাস্তা পার হবেন এবং ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করবেন।
৪। তাড়াহুড়ো নয়, গাড়ি চালান নির্ধারিত গতিতে
অনেক সময় দেখাযায় ইফতারের আগে বাড়ি ফেরার জন্য অনেকেই জোরে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করে থালেন। কিন্তু শহরের সড়কগুলোতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেখানেও তৈরি হবে যানজট। আর জান মালের ক্ষয়ক্ষতি তো হবেই। দুর্ঘটনা এড়াতে নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালান।
৫। অতরিক্ত হর্ন বাজাবেন না
রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করে মানুষের মানসিক শক্তি সবসময়ের মতো থাকে না বিধায়, অনেকে হর্ন সহ্য করতে পারেন না। অনবরত হর্ন বাজালে মেজাজ খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে। মেজাজের বশবর্তী হয়ে বাকবিতন্ডা লেগে যেতে পারে। এতে করে রাস্তায় দুর্ভোগ তৈরি হবে।
৬। রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করবেন না
রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করলে, অনন্য গাড়ির চলাচল ব্যহত হয়। তাই রমজন মাসে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক না করার পরামর্শ দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। যানজট নিরসন এবং নগরবাসীকে ৬ টার আগে বাড়ি ফেরানোর জন্য এই পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়েছে।

৭। মার্কেট ও শপিং মলের সামনে গাড়ি রাখবেন না
রমজান মাস আসলেই শুরু হয় মানুষের ঈদ শপিং। রাজধানীর প্রতিটি প্রধান প্রধান সড়কের পাশেই রয়েছে কোন না কোন ছোটবড় শপিং সেন্টার আর বিপনি বিতান। এসব শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করার সময় রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক না করে, গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করবেন। রাস্তায় গাড়ি রাখলে একে তো জ্যাম সৃষ্টি হয়, আরেকদিকে থেকে যায় গাড়ি চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়!
৮। ফিটনেসবিহীন গাড়িকে না বলুন
শুধু রমজান মাস বলেই না, ফিটনেসবিহীন গাড়ি কখনোই রাস্তায় নামানো উচিৎ না। ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চালালে রাস্তার মাঝে গাড়ি নষ্ট হয়ে সৃষ্টি হতে পারে অসহনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত যানজট। আর যানজটের কবলে পড়লে যার গাড়ি নষ্ট হলো, সে তো ইফতারের আগে বাড়ি পৌঁছাতে পারবে কিনা সেটাও এক প্রশ্ন আর তার নষ্ট গাড়ির জন্য সৃষ্ট জ্যামে পড়ে অন্যান্য জনসাধারণও সময় মতো বাড়ি ফিরতে পারবে না।
৯। যেখানে সেখানে গাড়িতে উঠবেন না
যারা গণপরিবহণে যাতায়াত করে থাকেন তাদের প্রতি যেখান সেখান থেকে গাড়িতে না ওঠের পরামর্শ দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠালে একে তো যাত্রা পথে অনেক সময় খরচ হয়ে যায়, আর দ্বিতীয়ত, জ্যামেরও সৃষ্টি হয়। নগরীর সার্ক ফোয়ারায় ট্রাফিক পুলিশ যাত্রীদের ইফতারের আগে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্য খালি বাস রেডি করে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।

১০। সরকারী সিদ্ধান্ত এবং মোটরযান আইন মেনে চলুন
যানজট এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চালানোর জন্য সরকারী সকল নির্দেশ এবং মোটরযান আইন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। তারা মনে করেন এতে করে ইফতারের আগে যানজট এবং দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমে যাবে।
১১। রাস্তার মাঝে গাড়ি থামিয়ে লোক উঠেবেন না
অনেক সময় দেখাযায় বাস বা সিটিবাস যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠায়। অনেক সময় প্রাইভেট কার এর ড্রাইভার ও মালিকের অনুপস্থিতিতে খ্যাপ মারতে যেখানে সেখানে গাড়ি দাড় করিয়ে যাত্রী তোলে। এই কাজটি করতে মানা করা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে।
১২। ওভারব্রিজ, জেব্রাক্রসিং, আন্ডারপাস দিয়ে রাস্তা পার হোন
রাস্তা পারাপারের জন্য সঠিক নিয়ম মেনে চলার জন্য পথচারীদের পরামর্শ দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। যত্রতত্র জায়গা দিয়ে এবং সঠিক নিয়মে ওভারব্রিজ, জেব্রাক্রসিং, আন্ডার পাস ব্যবহার না করে রাস্তা পার হলে যানবাহনের বাঁধা সৃষ্টি হয়। ফলে গাড়ির গতি কমে যায়। এবং বাড়ি পৌঁছুতে দেরি হয়ে যায়। অন্যদিকে যেকোনো জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হওয়া পথচারীর জন্য বিপজ্জনকও বটে।

১৩। ভিআইপি সড়কের নিয়ম মেনে চলা
যারা গাড়ি বা গণপরিবহন ব্যবহার করেন তারা ভিআইপি রাস্তার আইন মেনে চলুন। এছাড়াও রিকশা ভ্যান ঠেলাগাড়ির মতো কম গতির যানবাহন ভিআইপি রাস্তায় চালানো থেকে বিরত থাকুন।
১৪। রাস্তা বা ফুটপাথে দোকানপাট বসাবেন না
রমজান মাসে দেখা যায় যে, রাস্তার পাশে বাহারি রকমের ইফতার নিয়ে বসেন নানান হোটেল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। আবার ঈদ শপিং কে কেন্দ্র করে হকাররাও রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী দোকানপাট গড়ে তোলেন। এসব অস্থায়ী দোকানের জন্য রাস্তায় জায়গা সংকুচিত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ইফতারের আগে বাড়ি ফিরতেও বেশি সময় লাগে।
রমজান মাস পবিত্রতার মাস, সহানুভূতিশীল থাকার মাস। আমরা যদি রাস্তায় গাড়ি চালানোর ব্যাপারে একটু সহানুভূতিশীল হই, তবে সবাই বাড়ি ফিরে ইফতার করতে পারব। আর ইফতারের পর গাড়ি নিয়ে বের হলে গাড়ির সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে প্রহরী ভেইকেল ট্র্যাকার। শপিং করেত যাবেন, গাড়ি নিয়ে আর দুশ্চিন্তাও করতে হবে না!